চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করা শতাধিক পাক-পুলিশকর্মী বরখাস্ত

2025 Becomes Deadliest Year for Pakistan’s Security Forces Since 1971

পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে৷ চলতি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর (ICC Champions Trophy 2025) জন্য নির্ধারিত সুরক্ষা দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করায় ১০০-এর বেশি পুলিশ কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই)-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কর্মীরা বেশ কয়েকবার ডিউটি থেকে অনুপস্থিত ছিলেন অথবা আইসিসি-র এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের সময় তাদের নির্ধারিত কাজ করতে অস্বীকার করেছেন।

Advertisements

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই পুলিশ কর্মীরা লাহোরের কাদ্দাফি স্টেডিয়াম থেকে নির্দিষ্ট হোটেলগুলির মধ্যে দলগুলির যাতায়াতের জন্য সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তারা হয় ডিউটি থেকে অনুপস্থিত ছিলেন, নয়তো সরাসরি তাদের দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।” এই ঘটনার পর পাঞ্জাবের ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (আইজিপি) উসমান আনোয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আন্তর্জাতিক ইভেন্টের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলার সুযোগ নেই।”

   

এই পুলিশ কর্মীরা কেন তাদের দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে স্থানীয় কিছু প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, অতিরিক্ত কাজের সময় এবং অতিরিক্ত চাপের কারণে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই ঘটনা পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজনের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার উপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

পাকিস্তানের সরকারি প্রতিক্রিয়া ও সুরক্ষা নিয়ে আশ্বাস
এদিকে, পাকিস্তানের ফেডারেল তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হুমকির খবরগুলি উড়িয়ে দিয়েছেন। সোমবার জিও নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে পাকিস্তান শান্তিপূর্ণভাবে এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করছে। আমাদের মাঠগুলি দর্শকদের দ্বারা পূর্ণ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমর্থকরা এসেছেন, জনতা উৎফুল্ল, এবং আমাদের রাস্তাগুলি ক্রিকেটের জয় উদযাপনকারী মানুষে ভরে গেছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টকে সফলভাবে আয়োজন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে, এই আশ্বাসের মধ্যেও পুলিশ কর্মীদের এই অসহযোগিতা সুরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানে এই ধরনের বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক দলগুলি পাকিস্তানে খেলতে আসতে দ্বিধা করে। এই টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজনের মাধ্যমে পাকিস্তান বিশ্বের কাছে তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু এই ঘটনা সেই প্রচেষ্টায় ছায়া ফেলেছে।

পাকিস্তান দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স
আয়োজক দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান ক্রিকেট দল গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে। নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম দুটি ম্যাচে হেরে তারা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন দলটি এই দুটি ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের পর পাকিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়।

টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের শেষ ম্যাচটি রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হবে। রিজওয়ানের নেতৃত্বে দলটি এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে টুর্নামেন্ট শেষ করার আশা করছে। তবে, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা এবার নিজেদের সেরা খেলাটি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের বিরুদ্ধে তাদের দুর্বল পারফরম্যান্স সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

Advertisements

পুলিশ বরখাস্তের পেছনের কারণ
পুলিশ কর্মীদের এই অস্বীকৃতির পেছনে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা এবং ক্লান্তি এর অন্যতম কারণ হতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় ইভেন্টে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়, যা তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এই ঘটনা পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি এবং কর্মীদের কল্যাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আইজিপি উসমান আনোয়ারের কঠোর পদক্ষেপ এই বার্তা দেয় যে সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। তবে এই বরখাস্তের ফলে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীতে শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে, যা টুর্নামেন্টের বাকি দিনগুলিতে সুরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ
পাকিস্তানের এই টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা দেশটির ক্রিকেটে নতুন করে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলটি এবার তাদের সেই গৌরব ধরে রাখতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে হার এবং ভারতের কাছে পরাজয় সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এখনও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর দলের গঠন এবং কৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

এদিকে, পাকিস্তানের আয়োজনের প্রশংসা করা হলেও, মাঠের বাইরের এই ঘটনা তাদের সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার জন্য পাকিস্তানের এই সুযোগ ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দলের ব্যর্থতা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার সমস্যা তাদের লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ ম্যাচ
পাকিস্তান তাদের টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে তারা সমর্থকদের কিছুটা সান্ত্বনা দিতে চাইবে। বাংলাদেশও গ্রুপ পর্বে ভালো ফল করতে না পারলেও, এই ম্যাচে তারা পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। দুই দলের সমর্থকরা এই ম্যাচের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ ছিল বিশ্বের কাছে তাদের ক্রিকেট ও আয়োজনের ক্ষমতা প্রমাণ করার। কিন্তু মাঠের ভিতরে দলের ব্যর্থতা এবং মাঠের বাইরে সুরক্ষা বাহিনীর অসহযোগিতার ঘটনা এই টুর্নামেন্টকে তাদের জন্য হতাশার কারণ করে তুলেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট এবং তাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটায়, তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষায় রয়েছে। আপাতত, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটি তাদের জন্য একটি সম্মান রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।