News Desk: পশ্চিমবঙ্গে সরকারে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসে খেলোয়াড়ের অভাব তেমন নেই। দলটির অন্যতম নির্বাচনী স্লোগান ‘খেলা হবে’। সেই রেশ ধরেই গোয়া বিধানসভায় ভোটের প্রচরাভিজান শুরুর দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলী হলেন আন্তর্জাতিক লন টেনিস কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ। তিনি এখন থেকে ক্রীড়া রাজনীতিক।
এইভাবেই তৃ়ণমূল কংগ্রেসে আচমকা এসেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবল অধিনায়ক তথা এশিয়ার অন্যতম ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে দুবার নির্বাচনে নামেন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে দার্জিলিং ও ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে শিলিগুড়ি থেকে টিএমসির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করেছিলেন। পরাজিত হন।
বাইচুংয়ের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের সংশ্রব নেই। নিজ রাজ্য সিকিমে ফিরে গিয়ে সেখানকার রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর দল হামরো সিকিম পার্টি ২০১৯ সালে সিকিম বিধানসভা ভোটে লড়ে। পশ্চিমবঙ্গ হোক বা সিকিম ভোট যুদ্ধে বাইচুংয়ের পরাজয় গেরো এখনও কাটেনি।
সেদিক থেকে দেখতে গেলে ডাবলস বা মিক্সড ডাবলসে বারবার উইম্বলডন কাপ জয়ী কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ রাজনীতিতে নবাগত। সূত্রের খবর, গোয়াতে তাঁকে বিশেষ প্রচারে নামাবেন মমতা। লিয়েন্ডারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ নিয়ে ক্রীড়া মহলের আলোচনা, ইনিও কি বাইচুংয়ের মতো মমতার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি সম্পর্ক নিয়েই এসেছেন?
কলকাতার ছেলে লিয়েন্ডারের পিতা অলিম্পিয়ান হকি তারকা ডা. ভেস পেজ রাজনীতির ধারপাশে ছিলেন না। তবে দীর্ঘ বামফ্রন্ট জমানায় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভেস পেজের সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে সুসসম্পর্ক ছিল। বাবার মতো লি’এর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল বাম সরকারের। কিছু ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে দলে বা সরকারের ঘনিষ্ট করলেও লি বা বাইচুংকেকে টানতে পারেনি জ্যোতি-বুদ্ধর সরকার।
ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতার ফুটবল জগতের সবার সঙ্গেই বাম সরকারের বিশেষ করে কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর মধুর সম্পর্ক ছিল। যার ফলে ইংলিশ চ্যানেল জয়ী বুলা চৌধুরী ও এশিয়াডে সোনা জয়ী অ্যাথলিট জ্যোতির্ময়ী শিকদার সরাসরি সিপিআইএমের হয়ে ভোটে নেমে জয়ী হন। পরে সরকার পাল্টাতেই তাঁরাও সরে গিয়েছেন।
বাম জমানাতেই লি-ভুটিয়া ময়দানে বা টেনিস সার্কিটে রীতিমতো সক্রিয়। ফলে সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্রব রাখেননি। ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পরে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রীড়া তারকা হিসেবে বাইচুং সরাসরি চলে আসেন তৃণমূল কংগ্রেসে। আসেন দেশের অন্যতম খ্যাতনামা ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজনীতিতে পুরো জড়িয়ে। বাকি যারা এসেছেন কমবেশি রয়েছেন বা ছেড়েছেন।
রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপিতে কিছু ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই দলত্যাগে মরিয়া। সেদিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের ছড়াছড়ি। কিছু বাম মনস্ক ক্রীড়াবিদ এখনও বাম শিবিরে আছেন।
তবে বামই হোক বা তৃণমূল প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের সম্পর্ক গভীর। গত বিধানসভা ভোটে শিলিগুড়ি থেকে অশোকবাবুর হয়ে প্রচার করেন তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে ভোট লড়ে যাওয়া বাইচুং। তবে এবার আর অশোকবাবু জিততে পারেননি।
বাইচুং বা লি দুজনেই ক্রীড়া বিশ্বে ভারতের দুই উজ্জ্বল মুখ। দুজনেই অশোকবাবুর ঘনিষ্ঠ। দুজনেই রাজনীতিতে ঝড়ের মতো এলেন। কতদিন টিকতে পারবেন মমতার সঙ্গে? প্রশ্ন সবারই।