ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামির (Mohammed Shami) সঙ্গে তাঁর বিচ্ছিন্ন স্ত্রী হাসিন জাহানের (Hasin Jahan) দীর্ঘদিনের বিরোধ আবারও সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। সম্প্রতি শামির একটি সাক্ষাৎকারের পর হাসিন জাহান সামাজিক মাধ্যমে একটি রহস্যময় পোস্ট শেয়ার করেছেন, যা নিয়ে তুমুল আলোলন শুরু হয়েছে। তিনি তাঁর পোস্টে ইঙ্গিত করেছেন যে তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ২০১৮ সালের মতো এখনও কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি এবং কেউ তাঁর জীবন ধ্বংস করতে পারবে না। হাসিনের এই পোস্টটি ২০১৮ সালে জাদবপুর থানায় শামি ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর-এর প্রতি ইঙ্গিত করে, যেখানে তিনি শামির বিরুদ্ধে ঘরোয়া হিংসা এবং ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছিলেন।
হাসিন তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, “পাগল আওয়ারা কুত্তো সে ডরনা হোতা মুঝে, তো ২০১৮ মে হি ডর জাতি। জিতনা চাহে জোর লাগালে মুঝে ডরানে কি, ঝুকানে কি, বরবাদ করনে কি, ম্যায় আল্লাহ কে করম সে আর মজবুত আর মজবুত বনতে যাউঙ্গি ইনশাল্লাহ।” অর্থাৎ, “যদি আমাকে পাগলা ঘেউঘেউ কুকুরের ভয় পেতে হতো, তবে ২০১৮ সালেই আমি ভয় পেয়ে যেতাম। যতই চেষ্টা করো আমাকে ভয় দেখানোর, নত করার, ধ্বংস করার, আল্লাহর কৃপায় আমি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব।” এই পোস্টটি শামির সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন এবং অতীত নিয়ে ভাবতে না চাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
শামি নিউজ২৪-এর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ওটা ছেড়ে দিন। আমি অতীত নিয়ে কখনো আফসোস করি না। যা গেছে তা গেছে। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না, নিজেকেও না। আমি আমার ক্রিকেটের উপর মনোযোগ দিতে চাই। আমার এই বিতর্কের দরকার নেই।” শামির এই বক্তব্যের পরই হাসিনের পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়, এবং এটি তাঁদের দীর্ঘদিনের বিরোধের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মোহাম্মদ শামি এবং হাসিন জাহান ২০১৪ সালে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের একটি কন্যা আয়রা ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ২০১৮ সালে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়, যখন হাসিন শামির বিরুদ্ধে ঘরোয়া হিংসা, ব্যভিচার, এবং ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ আনেন। এই অভিযোগগুলো শামির ক্যারিয়ারে একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল, এবং বিসিসিআইয়ের অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট এই বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করেছিল। হাসিন অভিযোগ করেছিলেন যে শামি একজন পাকিস্তানি মহিলার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, যদিও শামি এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। এই ঘটনার পর থেকে দুজনে আলাদা থাকছেন, এবং তাঁদের মধ্যে আইনি লড়াই চলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে হাসিন আরও কয়েকটি অভিযোগ এনেছেন। তিনি শামিকে ‘নারীদেবী’ বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে শামি তাঁদের মেয়ে আয়রার শিক্ষার জন্য খরচ করেন না, বরং তাঁর বান্ধবীদের সন্তানদের জন্য বিলাসবহুল উপহার এবং শিক্ষার খরচ বহন করেন। হাসিনের দাবি, শামি তাঁর মেয়ের শিক্ষার জন্য ভালো স্কুলে ভর্তির বিরোধিতা করেছেন, যদিও আয়রা একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “শত্রুরা চায়নি আমার মেয়ে ভালো স্কুলে পড়ুক, কিন্তু আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছেন।”
এছাড়াও, হাসিন নিজেও সম্প্রতি আইনি সমস্যায় জড়িয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সুরি শহরে তাঁর প্রতিবেশী দালিয়া খাতুনের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধে তিনি এবং তাঁর পূর্ববর্তী বিবাহের কন্যা আরশি জাহানের বিরুদ্ধে হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে হাসিনকে একজন মহিলার সঙ্গে বিতর্কে জড়িত দেখা গেছে। এই ঘটনা হাসিনের বিরুদ্ধে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আইনি দিক থেকে, কলকাতা হাইকোর্ট গত জুলাই মাসে শামিকে হাসিন এবং তাঁদের কন্যা আয়রার জন্য মাসিক ৪ লাখ টাকা ভরণপোষণের নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে হাসিনের জন্য ১.৫ লাখ টাকা এবং আয়রার জন্য ২.৫ লাখ টাকা। এই রায়ের পর হাসিন দাবি করেছেন যে শামি তাঁদের আর্থিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন, যার ফলে তাঁকে আইনের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, “আমি মডেলিং এবং অভিনয় করতাম। শামি আমাকে আমার পেশা ছেড়ে শুধু গৃহিণী হতে বাধ্য করেছিলেন। এখন আমার নিজের কোনো উপার্জন নেই।”
সামাজিক মাধ্যমে হাসিনের এই পোস্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ তাঁর সাহসের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ মনে করছেন যে তিনি শামির খ্যাতি ব্যবহার করে মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তুমি শামির খ্যাতির জন্যই এসব করছ।” অন্যদিকে, কিছু ভক্ত শামি এবং হাসিনের পুনর্মিলনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শামি বর্তমানে ক্রিকেটে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি দুলিপ ট্রফিতে ইস্ট জোনের হয়ে খেলেছেন, তবে এশিয়া কাপ ২০২৫-এর জন্য ভারতীয় দলে জায়গা পাননি। তাঁর পেশাদার জীবন যতই উজ্জ্বল হোক, ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক তাঁকে বারবার সংবাদের শিরোনামে নিয়ে আসছে। হাসিনের সাম্প্রতিক পোস্ট এবং তাঁর অভিযোগগুলো এই বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি এখন আইনি এবং ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই।