বাংলাদেশের ফুটবলের (Bangladesh Football) জন্য এক নতুন আশার আলো জ্বলে উঠেছে। তার নাম হামজা চৌধুরী (Hamza Choudhury)। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার, যিনি ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ এবং চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন। বতর্মানে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে এক নতুন স্বপ্ন জাগিয়েছেন।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এক অভূতপূর্ব সম্ভাবনা নিয়ে এসেছেন। এমন একটি দেশে, যেখানে আন্তর্জাতিক ফুটবল মানেই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে গভীর বিভাজন, হামজা হঠাৎ করেই সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি পর্যন্ত বাংলাদেশে তাদের সমর্থকদের বিশাল সংখ্যার কথা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু এখন হামজা এসে সেই ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
তার মা রাফিয়া, যিনি প্রথমবার ভারতে এসেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমরা কখনো ভাবিনি যে হামজা পেশাদার ফুটবলার হবে। তার ওপর কোনো চাপও ছিল না। কিন্তু সে দেখিয়ে দিয়েছে, যদি তুমি তোমার লক্ষ্যে বিশ্বাস রাখো, তাহলে তা অর্জন করতে পারো।” তিনি আরও বলেন, “হামজা যখন লেস্টার সিটি অ্যাকাডেমিতে শুরু করে, তখন সেখানে প্রায় কোনো এশীয় খেলোয়াড় ছিল না। এখন অনেকেই আছে। অ্যাকাডেমির এক শতাংশেরও কম খেলোয়াড় পেশাদার চুক্তি পায়। হামজা অনেকের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে।”
ভারতের কোচ মানোলো মার্কুয়েজ বলেন, “হামজার উপস্থিতি এশিয়ার ফুটবলের জন্য ভালো। এটা তার সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করবে।” বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও একমত। তিনি বলেন, “হামজা আমাদের জন্য বড় প্রেরণা।” জামালের মতে, ভারতীয় সুপার লিগের মান বাংলাদেশ ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে উঁচু হলেও, দুই দেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে তেমন বড় ফারাক নেই। তাই হামজার মতো একজন খেলোয়াড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলাদেশ দলের সঙ্গে মাত্র এক সপ্তাহ কি যথেষ্ট হবে? স্প্যানিশ কোচ মার্কুয়েজ বলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে আটবার খেলা হামজা মঙ্গলবার কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন। এমন একটি দেশে, যেখানে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে, সে চাপ সামলাতে পারবে কি না, তাও দেখার বিষয়।
হামজার বাবা মুর্শেদ দেওয়ানের সঙ্গে শিলংয়ে আসা রাফিয়া বলেন, “হামজার ওপর চাপ থাকবে, এটা সত্য। কিন্তু তার মনের জোর আছে। আল্লাহ তাকে এই মশাল বহন করার শক্তি দিন। আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এমনটা হবে।”
হামজা ছাড়াও বাংলাদেশ দলে ডেনমার্কের জামাল ভূঁইয়া, ফিনল্যান্ডের তারেক কাজি এবং কানাডার সৈয়দ কোয়াজেমের মতো প্রবাসী খেলোয়াড় রয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রবাসী খেলোয়াড় ব্যবহার সাধারণ, যদিও ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি নেই। বাংলাদেশের কোচ জাভিয়ের ক্যাব্রেরা সতর্ক করে বলেন, “এই পথে হাঁটতে হলে সাবধানতা দরকার। এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রচুর প্রত্যাশা থাকবে, কিন্তু তাদের স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।”
ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক। তারা প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-৫ গোলে হেরে তাদের পথ কঠিন হয়ে গেছে। তবু, প্রবাসী খেলোয়াড় ছাড়া তারা এতদূর আসতে পারত না। হামজা চৌধুরীও বাংলাদেশের জন্য এমনই এক সম্ভাবনা।