গত শনিবার এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল কাতারের বিপক্ষে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। তবে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে যায় ভারত, এবং এই হারের পিছনে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে তীব্র প্রশ্ন। ভারতীয় সিনিয়র দলের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু (Gurpreet Singh Sandhu) এই ঘটনার পর নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তরুণ ভারতীয় দলের প্রশংসা করলেও রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই ঘটনা ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন ভারতীয় দলের সামনে ব্রুনেইয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে জয়ের মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
ম্যাচে কী ঘটেছিল?
ভারতীয় অনূর্ধ্ব-২৩ দল কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নেমেছিল। প্রথম ম্যাচে বাহরিনকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই দলটি আয়োজক কাতারের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করে। ম্যাচের শুরুতেই আল-হাশমি আল-হুসেনের গোলে পিছিয়ে পড়ে ভারত। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ৫২তম মিনিটে মুহম্মদ সুহেলের দুর্দান্ত হেডার গোলে ১-১ সমতায় ফেরে ব্লু টাইগার্স। এই গোলের পর ভারতের খেলোয়াড়রা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, এবং জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে। ভারতীয় ডিফেন্ডার পরমভীর সিং, যিনি ইতিমধ্যে একটি হলুদ কার্ড পেয়েছিলেন, কাতারের নুরেলদিন ইব্রাহিমের উপর ফাউল করেছেন বলে রেফারি তাকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান, যা লাল কার্ডে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে ভারত দশজনের দলে পরিণত হয়। একই সঙ্গে রেফারি কাতারের পক্ষে একটি পেনাল্টি ঘোষণা করেন, যা ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। কাতারের অধিনায়ক জাসেম আল শারশানি পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। দশজনের দল হওয়া সত্ত্বেও ভারত একাধিকবার আক্রমণের চেষ্টা করে, কিন্তু আর কোনও গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত কাতার তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে।
গুরপ্রীতের অভিজ্ঞতা
গুরপ্রীত সিং সান্ধু (Gurpreet Singh Sandhu) নিজেও এর আগে কাতারের বিপক্ষে অনুরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। ভারতীয় সিনিয়র দল যখন দোহায় কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। গুরপ্রীত কাতারের আয়মেনের শট ঠেকিয়ে দেন, এবং বলটি স্পষ্টভাবে বাইলাইন অতিক্রম করে। ভারতীয় ডিফেন্ডাররা গোলকিক বা কর্নারের প্রত্যাশায় সাময়িকভাবে শিথিল হয়ে পড়ে। কিন্তু রেফারিরা খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়, এবং হাশমি বলটি ফিরিয়ে আনে। আয়মেন সেই সুযোগে গোল করে ফেলেন। গুরপ্রীত ও তার সতীর্থদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও রেফারি গোলটি বহাল রাখেন। এই ঘটনার স্মৃতি এখনও গুরপ্রীতের (Gurpreet Singh Sandhu) মনে তাজা, এবং তিনি তরুণ দলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
ইনস্টাগ্রামে গুরপ্রীত (Gurpreet Singh Sandhu) লিখেছেন, “আমাদের তরুণ দল দুর্দান্ত লড়াই করেছে। কিন্তু রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তাদের প্রাপ্য ফলাফল থেকে বঞ্চিত করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতি মেনে নেওয়া কঠিন, তবে আমি বিশ্বাস করি তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে।”
ভারতীয় দলের সামনে কী?
কাতারের বিপক্ষে এই হারের পর ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দল এখন পুরোপুরি মনোযোগ দিয়েছে আগামী ম্যাচের দিকে। ৯ সেপ্টেম্বর ব্রুনেইয়ের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে যোগ্যতা অর্জন পর্বের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে ভারত। এই ম্যাচটি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখার জন্য অবশ্যপ্রাপ্ত জয়ের ম্যাচ। কোচ নৌসাদ মুসার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি, কারণ দলকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে কাতার ম্যাচের হতাশা ভুলে।
ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরাও এখন এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছেন। ব্রুনেইয়ের বিপক্ষে জয় দলের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে এবং ২০২৬ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে রাখতে পারে। তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে এটি একটি সুযোগ, নিজেদের প্রমাণ করার এবং সমর্থকদের আশা পূরণ করার। গুরপ্রীতের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সমর্থন এবং কোচিং স্টাফের নির্দেশনায় দল এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
ফুটবলপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া
কাতার ম্যাচের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীরা রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভারতের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে গুরপ্রীত ও সাননের মতো ফুটবল ব্যক্তিত্বদের প্রেরণাদায়ী বক্তব্য দলের মনোবল বাড়িয়েছে। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এবং এই তরুণ দলের কাছে এখন সুযোগ রয়েছে ব্রুনেই ম্যাচে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করার।
শেষ পর্যন্ত, কাতার ম্যাচের হতাশা ভুলে ভারতীয় দলের লক্ষ্য এখন একটাই—ব্রুনেইয়ের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে এনে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়া। সমর্থকদের আশা, ব্লু টাইগার্স তাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে এবং এই চ্যালেঞ্জ জয় করবে।