আইপিএল ২০২৫-এর নবম ম্যাচে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (Mumbai Indians) এবং গুজরাট টাইটান্স (Gujarat Titans) মুখোমুখি হয়েছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৯ ওভারে ১৫১/৬-এ পৌঁছেছে, যেখানে তারা গুজরাট টাইটান্সের দেওয়া ১৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করছে। দলটি টানা দ্বিতীয় হারের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। গুজরাট টাইটান্স প্রথম ইনিংসে ২০ ওভারে ১৯৪/৮ স্কোর করে, যেখানে ওপেনার বি সাই সুদর্শন অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজে দুটি উইকেট (শুভমান গিল সহ) তুলে নিয়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখান। তবে, মুম্বইয়ের ব্যাটিং শুরু থেকেই ধস নেমেছে, এবং জিটি এখন বড় জয়ের দোরগোড়ায়।
মুম্বইয়ের শুরুতে ধাক্কা: সিরাজ ও কৃষ্ণের দাপট
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটিং শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে। পাওয়ারপ্লেতে মোহাম্মদ সিরাজ দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। প্রথম ওভারেই তিনি রোহিত শর্মাকে (৮ রানে ৪ বল) আউট করে মুম্বইয়ের ওপেনিং জুটি ভেঙে দেন। এরপর পঞ্চম ওভারে রায়ান রিকেলটন (৬ রানে ৯ বল) বোল্ড হন। এই দুটি আঘাতে মুম্বইয়ের শুরুতেই চাপ বেড়ে যায়। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ তার দুর্দান্ত বোলিং স্পেলে মুম্বইয়ের মিডল অর্ডারে ধস নামান। তিনি ১২তম ওভারে তিলক বর্মাকে (৩৯ রানে ৩৬ বল) এবং পরে সূর্যকুমার যাদবকে (৪৮ রানে ২৮ বল) আউট করে মুম্বইকে আরও বিপাকে ফেলেন। এই দুজনের ৬২ রানের জুটি ভাঙার পর মুম্বইয়ের জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। হার্দিক পান্ডিয়াও (১১ রানে ১৭ বল) বেশিক্ষণ টিকতে না পারায় ১৯ ওভারে মুম্বই ১৫১/৬-এ থাকে। শেষ ওভারে ৪৬ রান প্রয়োজন, যা প্রায় অসম্ভব।
গুজরাটের শক্তিশালী ব্যাটিং: সাই সুদর্শনের অর্ধশতক
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গুজরাট টাইটান্স শক্তিশালী শুরু পায়। ওপেনার বি সাই সুদর্শন ৪১ বলে ৬৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের ভিত গড়ে দেন। তিনি এবং অধিনায়ক শুভমান গিল (৩৮ রানে ২৭ বল) প্রথম উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়ে মুম্বইয়ের বোলারদের চাপে ফেলেন। হার্দিক পান্ডিয়া গিলকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন। এরপর জস বাটলার (৩৯ রানে ২৪ বল) দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন, কিন্তু মুজিব উর রহমান তাকে আউট করেন। মিডল অর্ডারে শাহরুখ খান (৯ রানে ৭ বল) ব্যর্থ হলেও, শেরফান রাদারফোর্ড (১৮ রানে ১১ বল) এবং রশিদ খান (৬ রানে) শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ রান যোগ করেন। তবে, মুম্বইয়ের বোলাররা শেষ ওভারগুলোতে ভালো প্রত্যাবর্তন করে। হার্দিক পান্ডিয়া (২/২৯) এবং ট্রেন্ট বোল্ট (১/৩৪) গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে জিটিকে ২০০ রানের নিচে আটকে দেন। শেষ পর্যন্ত জিটি ১৯৪/৮-এ শেষ করে।
ম্যাচের গতিপথ বদল: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের জাদু
ম্যাচের মোড় ঘোরানোর কৃতিত্ব প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের। তিনি তার প্রথম ওভারেই তিলক বর্মাকে আউট করেন, যেখানে রাহুল তেওয়াটিয়া দীর্ঘ দূরত্ব পেরিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন। এরপর সূর্যকুমার যাদবের উইকেট তুলে তিনি মুম্বইয়ের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় শেষ করে দেন। তার গতি কমিয়ে দেওয়া ডেলিভারিগুলো মুম্বইয়ের ব্যাটারদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এছাড়া, মোহাম্মদ সিরাজের পাওয়ারপ্লে স্পেল ম্যাচের ভিত গড়ে দেয়। রোহিত শর্মার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারকে প্রথম ওভারে আউট করে তিনি মুম্বইয়ের ওপেনিংয়ে ধাক্কা দেন। রশিদ খান এবং সাই কিশোরের স্পিনও মিডল ওভারে মুম্বইকে চাপে রাখে।
দুই দলের পটভূমি
এই ম্যাচের আগে দুই দলই তাদের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল। গুজরাট টাইটান্স পাঞ্জাব কিংসের কাছে ১১ রানে হেরেছিল, যেখানে তারা ২৪৪ রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে ৪ উইকেটে পরাজিত হয়েছিল। দুই দলই এই ম্যাচে প্রথম জয়ের খোঁজে ছিল। আইপিএল-এ এই দুই দল এখনও পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে জিটি ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে। আহমেদাবাদে মুম্বই এখনও জিটির বিরুদ্ধে জয় পায়নি, এবং এই ম্যাচেও সেই ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
পিচ এবং পরিস্থিতি
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের পিচ ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাটিং-বান্ধব। এই ম্যাচেও পিচ ব্যাটারদের জন্য সুবিধাজনক ছিল, যা গুজরাটের ১৯৪ রানের স্কোরে প্রতিফলিত হয়। তবে, শিশিরের প্রভাব কম থাকায় দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের জন্যও সুযোগ ছিল। পিচের দ্বিমুখী আচরণ এবং প্যাচি প্রকৃতি সিরাজ এবং কৃষ্ণের মতো বোলারদের কাজে লেগেছে।
মুম্বইয়ের ব্যর্থতা: ব্যাটিংয়ে দুর্বলতা
মুম্বইয়ের ব্যাটিং লাইনআপ এই ম্যাচে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রোহিত শর্মা দ্রুত আউট হওয়ার পর সূর্যকুমার এবং তিলক কিছুটা লড়াই করলেও বড় স্কোরে রূপান্তর করতে পারেননি। হার্দিক পান্ডিয়ার ধীরগতির ইনিংস (১১ রানে ১৭ বল) দলের জন্য আরও ক্ষতি করে। বোলিংয়ে হার্দিক সফল হলেও, ব্যাটিংয়ে তার ব্যর্থতা মুম্বইয়ের দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে। মিডল ওভারে রশিদ খান এবং সাই কিশোরের স্পিনের সামনে মুম্বইয়ের ব্যাটাররা অসহায় ছিল।
Gujarat Titans-র শক্তি: বোলিংয়ে দক্ষতা
গুজরাটের জয়ের পিছনে তাদের বোলিং আক্রমণ বড় ভূমিকা পালন করেছে। সিরাজের প্রাথমিক আঘাত, কৃষ্ণের মাঝের ওভারের দাপট এবং রশিদ খানের স্পিন মুম্বইকে চাপে রেখেছে। ব্যাটিংয়ে সাই সুদর্শনের অর্ধশতক দলকে লড়াকু স্কোরে পৌঁছে দেয়। শুভমান গিলের নেতৃত্বও দলের মনোবল বাড়িয়েছে।
এই ম্যাচে গুজরাট টাইটান্স তাদের প্রথম জয়ের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স টানা দ্বিতীয় হারের মুখে। জিটির বোলারদের দাপট এবং মুম্বইয়ের ব্যাটিং ব্যর্থতা ম্যাচের ফল নির্ধারণ করেছে। আহমেদাবাদে মুম্বইয়ের জয়ের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো। আইপিএল ২০২৫-এর এই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিটি প্রমাণ করেছে তারা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।