বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে জয়ে শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখল গোকুলাম কেরালা

গোকুলাম কেরালা এফসি (Gokulam Kerala FC) তাদের দুর্দান্ত শেষ মরশুমের ধারা অব্যাহত রেখে ২০২৪-২৫ আই-লিগে এসসি বেঙ্গালুরুর (SC Bengaluru) বিরুদ্ধে একটি কঠিন লড়াইয়ে ২-১ গোলে…

Gokulam Kerala FC, SC Bengaluru, I-League 2024-25

গোকুলাম কেরালা এফসি (Gokulam Kerala FC) তাদের দুর্দান্ত শেষ মরশুমের ধারা অব্যাহত রেখে ২০২৪-২৫ আই-লিগে এসসি বেঙ্গালুরুর (SC Bengaluru) বিরুদ্ধে একটি কঠিন লড়াইয়ে ২-১ গোলে জয়লাভ করেছে। এই ম্যাচটি শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, বেঙ্গালুরুর ফুটবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমার্ধে গোকুলাম কেরালা ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে থাবিসো ব্রাউন (৪৬’) এবং আদاما নিয়ানে (৭৫’) গোল করে দলকে জয় এনে দেন। এই জয় তাদের টানা তৃতীয় জয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা তাদের শিরোপা জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছে। এসসি বেঙ্গালুরুর হয়ে ইনজুরি টাইমে থোমিও শিমরে (৯০+১’) গোল করেন। এই জয়ের ফলে গোকুলাম কেরালা আই-লিগের পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ২০টি ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্ট ৩৪—১০টি জয়, ৪টি ড্র এবং ৬টি হার। তারা শীর্ষে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সের থেকে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে, যাদের একটি ম্যাচ বাকি আছে। মাত্র দুটি ম্যাচ বাকি থাকায় মালাবারিয়ানরা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে শক্তভাবে টিকে আছে। অন্যদিকে, এসসি বেঙ্গালুরু ২০টি ম্যাচ থেকে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১০ম স্থানে রয়েছে। তারা রেলিগেশন জোনের ঠিক উপরে অবস্থান করছে এবং ১১তম স্থানে থাকা আইজল এফসি’র থেকে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে, যাদের একটি ম্যাচ বাকি।

   

ভেজা এবং জটিল আবহাওয়ায় খেলা এই ম্যাচে এসসি বেঙ্গালুরু শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। জরুরি প্রয়োজন থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাগতিকরা প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুস্পষ্ট সুযোগ তৈরি করে। হেনরি কিসেক্কা এবং ইশান রঘুনন্দ কাছাকাছি পৌঁছেও গোল করতে ব্যর্থ হন। গোকুলামের গোলরক্ষক রক্ষিত দাগর বারবার তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। দাগরের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল যখন তিনি থোমিও শিমরে এবং ফসলুরহমান মেথুকায়িলের একটি দুর্দান্ত ওয়ান-টু পাসের পর ইশানের গোলমুখী শট ঠেকিয়ে দেন।

Advertisements

বিরতির পর গোকুলাম কেরালা নতুন উদ্যমে মাঠে ফিরে আসে এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফল পায়। ৪৬তম মিনিটে ইগনাসিও ডি লয়োলা আবেলেদো দূর থেকে একটি শক্তিশালী বাঁ-পায়ের শট ছুড়ে দেন। এসসি বেঙ্গালুরুর গোলরক্ষক ইউয়া কুরিয়ামা শটটি প্রতিহত করলেও রিবাউন্ডে থাবিসো ব্রাউনের শট একটি অপ্রত্যাশিত ডিফ্লেকশন নিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। এই গোল ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়।

গোল খাওয়ার পর এসসি বেঙ্গালুরু প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করে, কিন্তু দাগরের দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা তাদের বারবার ব্যর্থ করে। ৭৫তম মিনিটে গোকুলাম কেরালা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পাকাপাকি করে ফেলে। আবেলেদো ডান দিক থেকে একটি আকর্ষণীয় ক্রস দেন। বদলি খেলোয়াড় আদামা নিয়ানে সময়মতো দৌড়ে এসে তার মার্কারকে পরাস্ত করে বলটি জালে জড়ান, যদিও কুরিয়ামা তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। স্কোর হয় ২-০।
ইনজুরি টাইমে এসসি বেঙ্গালুরু একটি গোল ফিরিয়ে দেয়। একটি লং থ্রো গোকুলামের ডিফেন্সে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং শিমরে একটি অ্যাক্রোব্যাটিক ফিনিশে গোল করেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। গোকুলাম কেরালা শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

এই জয় গোকুলাম কেরালার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টানা তৃতীয় জয় তাদের শিরোপার দৌড়ে শক্ত অবস্থানে রেখেছে। ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা তৃতীয় স্থানে থাকলেও শীর্ষে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৩। বাকি দুটি ম্যাচে তারা যদি জয় অব্যাহত রাখতে পারে এবং শীর্ষ দলগুলির পা হড়কে যায়, তবে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, এসসি বেঙ্গালুরুর জন্য এই হার রেলিগেশনের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০ পয়েন্ট নিয়ে তারা ১০ম স্থানে থাকলেও নিচের দলগুলির সঙ্গে ব্যবধান কম থাকায় তাদের শেষ ম্যাচগুলিতে সতর্ক থাকতে হবে।

গোকুলামের গোলরক্ষক রক্ষিত দাগর এই ম্যাচের নায়ক ছিলেন। প্রথমার্ধে তার একের পর এক সেভ দলকে খেলায় রাখে। থাবিসো ব্রাউন এবং আদামা নিয়ানের গোল দলের আক্রমণাত্মক সক্ষমতা প্রমাণ করে। ইগনাসিও আবেলেদো দুটি গোলেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন—প্রথমটিতে শট দিয়ে এবং দ্বিতীয়টিতে ক্রসের মাধ্যমে। এসসি বেঙ্গালুরুর পক্ষে থোমিও শিমরে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলের লড়াইয়ের মনোভাব দেখান।

ম্যাচের পর গোকুলাম কেরালার কোচ জানান, “এই জয় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি এবং ফল পেয়েছি। শিরোপার দৌড়ে থাকতে আমাদের প্রতিটি ম্যাচ জিততে হবে।” এসসি বেঙ্গালুরুর কোচ বলেন, “আমরা প্রথমার্ধে ভালো খেলেছি, কিন্তু গোল করতে না পারায় পিছিয়ে পড়েছি। শেষ ম্যাচগুলিতে আমাদের আরও ভালো করতে হবে।”

গোকুলাম কেরালার জন্য এই জয় শিরোপার পথে একটি বড় পদক্ষেপ। তাদের পরবর্তী ম্যাচগুলি হবে কঠিন, কিন্তু বর্তমান ফর্মে তারা যে কোনো দলের জন্য চ্যালেঞ্জ। এসসি বেঙ্গালুরুর জন্য বাকি ম্যাচগুলি জয়ের মাধ্যমে রেলিগেশন এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আই-লিগের এই মরশুম শেষ পর্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

গোকুলাম কেরালা এফসি এবং এসসি বেঙ্গালুরুর মধ্যে এই ম্যাচটি ছিল দুই দলের লড়াইয়ের একটি দুর্দান্ত প্রদর্শন। গোকুলামের জয় তাদের শিরোপার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যখন এসসি বেঙ্গালুরুকে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বেঙ্গালুরুর ভেজা মাঠে এই ম্যাচ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি স্মরণীয় লড়াই হয়ে থাকবে।