শুভমন গিল (Shubman Gill), বয়স মাত্র ২৬। এর মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখাচ্ছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই দশটি শতরান পূর্ণ করেছেন। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শতরানের সঙ্গে ভেঙেছেন একাধিক রেকর্ডও। কিন্তু এই সাফল্য শুধু পরিসংখ্যানের নয়, রয়েছে অনভিজ্ঞ অধিনায়কের চাপ সামলে উঠে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক রান গিলের। পিছনে ফেলেছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো দাপুটে নাম। চলতি বছরে মাত্র ১২ ইনিংসে করেছেন ৫টি শতরান। যেখানে ২০১৭ সালে কোহলি এমন কীর্তি গড়েছিলেন ১৬ ইনিংসে। ১৯৯৭ সালে সচিন তেন্ডুলকর ১৭ ইনিংসে করেছিলেন ৪ শতরান। গিল সেই তুলনায় অনেক এগিয়ে।
কিন্তু এই পরিসংখ্যানের নেপথ্যে রয়েছে এক কঠিন লড়াইয়ের গল্প। কোচ গৌতম গম্ভীর জানিয়ে দিয়েছেন, অধিনায়ক হওয়ার পরেই বদলেছে শুভমনের (Shubman Gill) ভাগ্যরেখা। তবে গম্ভীরের মতে, গিলের জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ছিল ইংল্যান্ড সফর। সেখানে ২৫ বছর বয়সেই নিজের প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্বে গিল তুলে ফেলেন ৭৫০-এর বেশি রান।
দ্বিতীয় টেস্টের মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে গম্ভীর বলেন, ‘‘শুভমনকে (Shubman Gill) বলেছিলাম, ‘তোমাকে গভীর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হয় ডুববে, নয় সাঁতার কেটে উঠে আসবে।’ ও সাঁতার কেটেই এসেছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘ইংল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনভিজ্ঞ দল নিয়ে সেই পারফরম্যান্স শুধু কৌশলের নয়, মানসিক দৃঢ়তারও প্রতিফলন।
শুধু ব্যাট হাতে নয়, নেতৃত্বের মানদণ্ডেও গিল পেরিয়ে গেছেন কঠিনতম পরীক্ষা। কোচ বলেন, ‘‘ওভাল টেস্টের পর ওকে বলেছিলাম, জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা পেরিয়ে গেছ। এরপর সব সহজ হয়ে যাবে।’’
তবে সহজ হয়নি শুভমনের (Shubman Gill) পথ। শুরুতেই তাঁকে সামলাতে হয়েছে কঠোর সমালোচনা, অবিশ্বাস। সেই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের কাজ করে গেছেন তিনি। গম্ভীর বলেন, ‘‘আমি ওকে একবারও হতাশ হতে দেখিনি। ২৫ দিন ধরে হাসিমুখে নেতৃত্ব দিয়েছে। চাপ সামলেছে। নিজের কাজ করেছে।’’
সাদা বলের ক্রিকেটে কোচ গম্ভীর ভারতকে এনে দিয়েছেন এশিয়া কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাফল্য। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এখনও সাফল্যের খাতায় তুলনামূলকভাবে কম নাম রয়েছে তাঁর। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে সিরিজ হার তাঁকে এখনো কষ্ট দেয়। সেই সিরিজ এখনো তিনি উদাহরণ হিসেবে দেন গিলদের সামনে, যেন কেউ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে না ভোগে।
গম্ভীর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হলে শুধু ঘরের মাঠে জিতলেই হবে না। বিদেশের মাটিতেও একইভাবে আধিপত্য দেখাতে হবে। ইংল্যান্ড সফরের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ফলাফল বড় কথা নয়, প্রতিদিনের লড়াইটাই আসল। তরুণ দলের এই লড়াইটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’
গম্ভীর জানিয়েছেন, শুভমনের পাশে থাকবেন সব সময়। তিনি বলেন, ‘‘যখন সব কিছু শুভমনের পক্ষে যাবে না, তখন ওর প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই। আমি সবসময় ওর পাশে আছি। যতক্ষণ না ও নিজের লক্ষ্যে পৌঁছচ্ছে, আমি ওকে রক্ষা করব।’’