শোকের ছায়া ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) জগতে। প্রয়াত প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলার (Former Mohun Bagan Footballer) ঋষি কাপুর (Rishi Kapoor)। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকাবহ করে তুলেছে ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়। দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সোমবার দুপুরে নয়াদিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাগানের এই প্রাক্তন ফুটবলার। তাঁর মৃত্যুর খবরে পুরো ফুটবল দুনিয়া স্তম্ভিত, বিশেষ করে মোহনবাগান ক্লাবের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা।
ঋষি কাপুর মোহনবাগানের হয়ে অত্যন্ত সফল এক ফুটবলার ছিলেন। তিনি ছিলেন দলের অন্যতম সদস্য, যে দলটি জিতেছিল জাতীয় ফুটবল লিগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। ঋষির দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী সবসময় তার সতীর্থদের কাছে প্রশংসিত ছিল। মোহনবাগান ক্লাবের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল এই দলের খেলার ধরন এবং ফুটবল খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য, যার মধ্যে ঋষি কাপুর অন্যতম। বিশেষ করে তাঁর লেফট-ব্যাক হিসেবে খেলা ছিল অত্যন্ত ধারাল এবং কৌশলপূর্ণ। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে তার সাহসী প্রতিরোধে অনেক ম্যাচেই মোহনবাগান জয়ী হয়েছিল।
ঋষি কাপুরের ফুটবল কেরিয়ার শুরু হয়েছিল মোহনবাগানেই, তবে শুধুমাত্র এই ক্লাবেই সীমাবদ্ধ ছিল না তার প্রতিভা। তিনি দিল্লি ইউনাইটেড দলের হয়ে খেলে জাতীয় স্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ঋষি কাপুর কেবলমাত্র একজন বড়ো ফুটবলার ছিলেন না, তিনি একজন অত্যন্ত ভালো দলের সদস্যও ছিলেন, যারা একসঙ্গে গড়ে তুলেছিল অসাধারণ সব মুহূর্ত। তিনি যখন মাঠে নামতেন, দর্শকরা জানত যে কিছু একটা বিশেষ ঘটতে চলেছে। তার খেলা ছিল শুধু কৌশলগত নয়, একটি নিখুঁত শৃঙ্খলার প্রতীক।
মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলাররা ঋষি কাপুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করেননি। ক্লাবের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ঋষি কাপুর ছিলেন মোহনবাগানের গর্ব। তার প্রস্থান আমাদের ক্লাবের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। আমরা তার অবদান কখনো ভুলব না।” একই সঙ্গে, মোহনবাগানের অধিনায়ক এবং অন্যান্য প্রাক্তন ফুটবলাররা তার কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন এবং তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
We are deeply saddened by the sudden demise of our Ex-Player Rishi Kapoor.
May his soul rest in peace.#RIP pic.twitter.com/9VC0FILlTw— Mohun Bagan (@Mohun_Bagan) January 20, 2025
ফেডারেশনের প্রাক্তন সচিব শাজি প্রভাকরণও নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, “ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে আমি গভীর শোকাহত। তিনি মোহনবাগান, দিল্লি ইউনাইটেড এবং দিল্লির হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলেছেন। বিশেষ করে দিল্লি ইউনাইটেডের হয়ে তিনি ছিলেন সুনীল ছেত্রীর পর দলের সবচেয়ে দক্ষ ফুটবলার। ওঁর চলে যাওয়ার বয়স ছিল না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমরা তাকে খুব মিস করব।” শাজি প্রভাকরণ তার সতীর্থ ঋষি কাপুরকে নিয়ে আরও একটি বিশেষ স্মৃতি শেয়ার করেন, যা ফুটবল দুনিয়ার কাছে একটি অমূল্য রত্ন হয়ে থাকবে।
Saddened by the news of passing away of Rishi Kapur, former Mohun Bagan, Delhi United and Delhi State team player.
Not an age to go.
My sincere condolences to his family and loved ones. May his soul rest in peace.
I had the honour to play together in our 40+ team in Delhi… pic.twitter.com/ODSsOFjofl
— Shaji Prabhakaran (@Shaji4Football) January 20, 2025
ঋষি কাপুরের কেরিয়ারের মধ্যে শুধু তার ব্যক্তিগত সফলতা ছিল না, বরং তিনি বহু তরুণ ফুটবলারের কাছে একজন আদর্শ হিসেবে পরিচিত। তার অটুট ইচ্ছাশক্তি, দলগত মনোভাব এবং কঠোর পরিশ্রম তাঁকে আলাদা করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত খেলোয়াড়, যিনি তার দক্ষতা দিয়ে ফুটবল দুনিয়ায় নিজের নাম গড়েছিলেন এবং বহু মানুষের মনে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন।
তার অকাল মৃত্যু শুধু মোহনবাগান ক্লাবেরই ক্ষতি নয়, এটি জাতীয় ফুটবল দুনিয়ার জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি। ঋষি কাপুর ছিলেন এমন একজন ফুটবলার, যার খেলা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে দলকে শক্তিশালী করত। তার খেলার মধ্যে যে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম ছিল, তা সত্যিই অনুপ্রেরণার।
ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে শোকাহত তার পরিবার, ক্লাব এবং সমর্থকরা। ফুটবল দুনিয়া আজ এক মহান খেলোয়াড়কে হারালো। তবে তার কর্ম এবং কৃতিত্বগুলো চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মোহনবাগান এবং ভারতের ফুটবল ইতিহাসে তার নাম সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে।