অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ হারের পিছনে বিরাট-রোহিতদের দায়ী করলেন সৌরভ?

বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি (Border Gavaskar Trophy) ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের (India Cricket Team) জন্য এক শোচনীয় পরিস্থিতি। কারণ এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে রোহিত শর্মারা (Rohit…

Sourav Ganguly on Virat Kohli Performance

short-samachar

বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি (Border Gavaskar Trophy) ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের (India Cricket Team) জন্য এক শোচনীয় পরিস্থিতি। কারণ এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma) ১–৩ ব্যবধানে পরাজিত হয়। সিরিজ হেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনাল থেকেও ছিটকে গিয়েছে তারা। তবে, এই হার শুধু ফলাফল ছিল না। বরং ক্রিকেট বিশ্বে ভারতীয় ক্রিকেটের অগ্রগতি এবং সমস্যার গভীরতা বোঝানোর এক নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ভারতীয় ক্রিকেটে এই ফলাফলটি আরও বেশি সমালোচিত হয়েছে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) এবার ভারতের সিরিজ হারার প্রসঙ্গে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন।

   

চিন্তা বাড়ছে সমর্থকদের, ডার্বি ম্যাচে আনোয়ার আলির ভবিষ্যৎ কি?

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি নিজেও একজন অসাধারণ ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক ছিলেন। তাঁর বিশ্লেষণে প্রাথমিক ভাবে প্রতিফলিত হয় যে, ভারতের এই সিরিজ হারার আসল কারণটা কোথায় ছিল। সৌরভের মতে, টেস্ট ক্রিকেটে দলের ব্যাটিং অর্ডার যদি বড় রান না তুলতে পারে, তবে কোনো বোলারই লড়াই করার জন্য যথেষ্ট সমর্থন পাবে না। তিনি বলেন, “যদি বোর্ডে অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ রান না আসে, তবে বোলারদের কাছে প্রয়োজনীয় রসদ থাকে না।” অর্থাৎ, ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তাদের বোলাররা ভালো পারফর্ম করেও শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু করতে পারেনি।

ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা যেন ছিল বড় একটি সমস্যা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন, তিনি আরও বলেন, “ভাল ব্যাট করতে না পারলে টেস্ট ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। বড় রান না তুললে ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন।” সিরিজে ভারতের টপ অর্ডার ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি, দুই শীর্ষ ব্যাটসম্যানই এই সিরিজে খুব একটা সফল হতে পারেননি। রোহিত বিশেষত ব্যর্থ হন সিরিজের মধ্যভাগে, যার ফলে দল আরও বেশি চাপে পড়ে। যদিও সৌরভ এককভাবে কোনও একটি ব্যাটসম্যানকে দায়ী করতে চান না। তার কথায়, “প্রত্যেককেই রান করতে হবে। এই পরিস্থিতি এককভাবে কোনও একজনের নয়, এটা পুরো দলের ব্যাপার।”

তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করেও বিষ্ণুর দখলে বিশেষ সম্মান

বর্ডার গাভাসকার ট্রফির একমাত্র স্বীকৃত ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স ছিল ভারতীয় পেসার জসপ্রীত বুমরার। ৩২ উইকেট নিয়ে তিনি সিরিজের সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন। বুমরা একাধিকবার তাঁর অসাধারণ বোলিং দিয়ে ভারতীয় দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য অস্ত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কেরি ও’কিফ, যিনি একজন প্রাক্তন স্পিনার, তিনি বুমরার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, “বুমরাকে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা খেলতেই পারেনি। তার বোলিং ছিল দুর্দান্ত।” তিনি আরও যোগ করেছেন যে, পারথ টেস্টে বুমরা তার অধিনায়কত্বে দুর্দান্ত কৌশল দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তার পরের তিনটি টেস্টে রোহিত শর্মা সেই একই ধরনের নেতৃত্ব দিতে পারেননি, যার ফলে ভারতীয় দল একটি সংকটে পড়েছিল। এই সমস্যা আরও বাড়ে যখন টপ অর্ডার নিয়মিতভাবে ব্যর্থ হয়, আর এতে প্রতিটি ম্যাচে দলের অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়।

রোহিত শর্মার নেতৃত্বের বিষয়েও কিছুটা ত্রুটি ছিল। যদিও তিনি একজন অভিজ্ঞ অধিনায়ক, তবে সিরিজের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কেরি ও’কিফের মতে, “পার্থে টেস্টের পরে বুমরাহর নেতৃত্বে ভারত আরও শক্তিশালী মনে হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী ম্যাচগুলিতে রোহিতের নেতৃত্বে সেটি কিছুটা কমে গিয়েছিল।” ভারতীয় দলের বোলিং এবং ব্যাটিং সাফল্য নির্ভর করে দলগত পারফরম্যান্সে, কিন্তু যদি ব্যাটিং অর্ডার ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়, তবে বোলারদের জন্য কোন আশা থাকে না।

সুপার সিক্সে থেকে ক্রমে দূরে সরছে ইস্টবেঙ্গল

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ক্রিকেটারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দলগত সম্মিলন। প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব হয়, যে সে নিজের দলের জন্য বড় রান এনে দেবে। তবে, শুধু ব্যাটসম্যান নয়, বোলারদেরও সমর্থন প্রদান করতে হয়। বুমরা ছাড়া ভারতের বোলিং ইউনিট সেই সমর্থন দিতে পারেনি। বাকি পেসাররা বুমরাহর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি, যার ফলে সিরিজের ফলাফল ভারতের বিপক্ষে গিয়েছে।

এই সিরিজ হারটি ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য কার্যত এক শিক্ষা। টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের জন্য শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংয়েরও উন্নতি প্রয়োজন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এটা নিছক ব্যর্থতা নয়, এটা একটি শিক্ষা যা ভারতীয় দলের জন্য ভবিষ্যতের জন্য উপকারী হতে পারে।”