ভারতীয় ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন পেশাদার ফুটবল থেকে বিদায় জানানোর। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যদি তাঁর দল বেঙ্গালুরু এফসি ২০২৫-২৬ মরশুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) জিততে না পারে এবং কন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তবে এই মৌসুমই হবে তাঁর শেষ।
ছেত্রী বলেন, “যদি আমরা আইএসএল জিততে পারি, তাহলে আমি আবারও জাতীয় রঙে ক্লাব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে পারব। কিন্তু ৪২ বছর বয়সে সেটা সহজ নয়। আমি এই মৌসুমে ১৫টি গোল করতে চাই এবং তারপর অবসর নিতে চাই।”
এক সময় ভারতের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে বিবেচিত ছেত্রী গত জুনে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে, যেখানে দর্শকেরা তাঁকে অবিস্মরণীয় বিদায় জানান। তবে চলতি বছর জুন মাসে কোচ ম্যানোলো মার্কেজ তাঁকে আবার জাতীয় দলে ফেরান, কারণ তাঁর অভিজ্ঞতা ও গোল করার ধার এখনও অটুট ছিল। কিন্তু ভারত এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর ফাইনাল রাউন্ডের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ছেত্রী এবার জাতীয় দল থেকে চূড়ান্তভাবে অবসর নিলেন।
তিনি বলেন, “আমার সিদ্ধান্ত জানানো সহজ ছিল। যখন আমি জাতীয় দলে ফিরেছিলাম, আমার মনে শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল—দলের জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়া এবং কোয়ালিফায়ার জেতার চেষ্টা করা। যদি সেই টুর্নামেন্ট না থাকত, আমি হয়তো ফিরতাম না। আমরা যখন গাণিতিকভাবে বাদ পড়লাম, তখনই আমি সিদ্ধান্ত জানাই, এবং কোচও তা বুঝেছিলেন।”
ম্যানোলো মার্কেজ যখন তাঁকে ফোন করে জাতীয় দলে ফেরার প্রস্তাব দেন, তখন ছেত্রী প্রথমে না বলেন। কিন্তু স্প্যানিশ কোচের অনুরোধে ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত তিনি “gut feeling”-এর ওপর ভরসা রেখে রাজি হন। কারণ, আগের মৌসুমে তিনি আইএসএলে দুর্দান্ত খেলেছিলেন—১৪টি গোল করে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার, গোল্ডেন বুটজয়ী আলােদ্দিন আজারাইয়ের ঠিক পিছনে।
তবে প্রত্যাবর্তনের পর সাফল্য তেমন আসেনি। ভারত ছয় ম্যাচে মাত্র একটি গোল পেয়েছে, যার একমাত্র গোলদাতা ছেত্রী। এতে তাঁর আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫, যা সক্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।
ছেত্রী বলেন, “আমি যখন ফেরার সিদ্ধান্ত নিই, তখন জানতাম ফলাফল নাও আসতে পারে। আমি অনেকদিন খেলেছি, তাই জানি ফুটবল কত অনিশ্চিত। কোনও আফসোস নেই। একটাই কষ্ট—আমরা কোয়ালিফাই করতে পারিনি। চারটি ম্যাচে আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় দলে ফেরাটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি কোচদের আগেই জানিয়েছিলাম, আমি অধিনায়কত্ব নেব না। কারণ, গুরপ্রীত, সন্দেশ, রাহুল—তারা অনেকদিন অপেক্ষা করেছে এই সুযোগের জন্য।”
ভারতের অধিনায়ক, নেতা ও কিংবদন্তি হিসেবে ছেত্রীর উত্তরাধিকার এখনই অমলিন। দেশের ফুটবলে পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার যে মান তিনি স্থাপন করেছেন, তা আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বেঙ্গালুরু এফসি-র সমর্থকদের আশা, ছেত্রী হয়তো তাঁর শেষ মৌসুমে দলকে আবারও গৌরব এনে দেবেন। কিন্তু ফলাফল যাই হোক না কেন, ভারতীয় ফুটবলে সুনীল ছেত্রীর নাম চিরকাল উচ্চারিত হবে শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে।


