লোবেরা ভারতীয় ফুটবলের রাম গোপাল ভার্মা! নয়া মোড় কি আসছে মোহনবাগানে?

sergio-lobera-mohun-bagan-coach-indian-football-analysis

কলকাতা: ভারতীয় ফুটবলের কৌশলগত দুনিয়ায় সার্জিও লোবেরার (Sergio Lobera) নাম একসময় ছিল সাফল্যের প্রতীক। ঠিক যেমন রাম গোপাল ভার্মা একসময় বলিউডে বিপ্লব এনেছিলেন শিব, রাত এবং রঙ্গিলা-র মতো ছবির মাধ্যমে, তেমনই লোবেরা ভারতীয় ফুটবলে এনে দিয়েছিলেন এক নতুন চিন্তার ধারা। তার কোচিংয়ে এফসি গোয়া ও মুম্বাই সিটি এফসি-র দিনগুলো এখনো অনেক সমর্থকের কাছে “সোনালি অধ্যায়” বলে বিবেচিত। সুনির্দিষ্ট কৌশল, বল পজেশন, সুশৃঙ্খল পাসিং এবং আক্রমণাত্মক ফুটবলের মিশেলে লোবেরা হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় লিগের সবচেয়ে সফল কোচদের একজন।

Advertisements

তবে, সাম্প্রতিক মৌসুমে সেই উজ্জ্বলতা যেন কিছুটা ফিকে। অনেকেই বলছেন, লোবেরা যেন নিজের পুরনো ফর্মুলার পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন, নতুন কিছু যোগ করতে পারছেন না। তার কৌশল এখন অনেকটা রাম গোপাল ভার্মার RGV Ki Aag ছবির মতো—আশা ছিল আকাশচুম্বী, কিন্তু ফলাফল হতাশাজনক। একসময়ের সাফল্যের ছায়ায় এখন লুকিয়ে রয়েছে পুনরাবৃত্তির ক্লান্তি। ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোবেরা যদি আবার ভারতীয় ফুটবলের সাফল্যের পথে ফিরতে চান, তাহলে প্রয়োজন নিজের কৌশলে নতুনত্ব আনা, আধুনিক ফুটবলের পরিবর্তিত গতি ও মানসিকতা অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।

   

এই মুহূর্তে জল্পনা চলছে — যদি লোবেরা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (MBSG) দায়িত্ব নেন, তাহলে কী হতে পারে? ঐতিহ্য, ঐক্য ও আবেগে ভরপুর মোহনবাগান ক্লাব এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সঠিক কৌশল ও মানিয়ে নেওয়া দক্ষতা থাকলে লোবেরা আবারও নিজের হারানো স্ফুলিঙ্গ ফিরিয়ে আনতে পারেন। কারণ, মোহনবাগান এমন এক দল, যাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি দলগত ঐক্যও রয়েছে। সেখানে যদি লোবেরা তার ‘পজেশন-ভিত্তিক ফুটবল’ দর্শনের সঙ্গে নতুনত্ব যোগ করতে পারেন, তাহলে তা ভারতীয় ফুটবলের কৌশলগত মানচিত্রই বদলে দিতে পারে।

লোবেরার গোয়া ও মুম্বাইয়ের দিনগুলো যেমন নিখুঁত কৌশল ও সৃজনশীল ফুটবলের উদাহরণ ছিল, তেমনি পরবর্তী কয়েক মৌসুমে তার দলগুলো প্রায়শই নির্দিষ্ট প্যাটার্নে আটকে গিয়েছিল। অনেক প্রতিপক্ষ তার খেলার ধরন বুঝে ফেলেছিল, যার ফলে ম্যাচে প্রেডিক্টেবল হয়ে পড়েছিল তার দল। এটাই হয়তো সেই জায়গা, যেখানে লোবেরার পুনর্জন্ম প্রয়োজন — নিজের দর্শনে নতুন প্রাণসঞ্চার, আরও আগ্রাসী মাইন্ডসেট, তরুণ প্রতিভা ব্যবহারের বুদ্ধিমত্তা এবং বিশেষ করে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করা।

মোহনবাগান ইতিমধ্যেই এমন এক দল, যাদের দর্শকসংখ্যা ও আবেগ ভারতের অন্য যে কোনও ক্লাবের চেয়ে আলাদা। এখানকার প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া, কিন্তু সেই চাপই হয়তো লোবেরার মতো অভিজ্ঞ কোচের জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরণা হতে পারে। তিনি যদি নিজের পুরনো ধাঁচ ছেড়ে নতুন রণনীতি তৈরি করতে পারেন—যেমন রাম গোপাল ভার্মা একসময় শিভা দিয়ে নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন—তাহলে লোবেরার কোচিং জীবনে আবারও নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।

Advertisements

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মোহনবাগান এমন এক ক্লাব যেখানে লোবেরার “ফুটবল দর্শন” আবারও প্রাণ পেতে পারে। ক্লাবের শক্তিশালী বিদেশি কোর, প্রতিশ্রুতিশীল ভারতীয় খেলোয়াড় এবং ধারাবাহিক সমর্থন ব্যবস্থার ওপর ভর করে তিনি আবারও ভারতীয় ফুটবলে “ম্যাজিক্যাল” ছোঁয়া ফিরিয়ে আনতে পারেন।

তবে সেটি নির্ভর করছে একটি মূল বিষয়ের ওপর—লোবেরা কি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন? নাকি পুরনো সাফল্যের ফর্মুলার পুনরাবৃত্তিতেই আটকে থাকবেন? যদি তিনি পরিস্থিতি বুঝে নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, তরুণদের ওপর আস্থা রাখেন এবং প্রতিপক্ষের গতিবিধি অনুযায়ী নিজের দর্শনকে নমনীয় করেন, তাহলে তার নাম আবারও ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

শেষ পর্যন্ত, প্রতিটি কোচের মতোই লোবেরারও সামনে দুটি পথ—পুনরাবৃত্তি না পরিবর্তন। ভারতীয় ফুটবল এখন রূপান্তরের যুগে; এমন সময়ে যদি তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসেন, তাহলে ‘RGV Ki Aag’ নয়, আবারও Rangeela যুগ ফিরিয়ে আনতে পারেন সার্জিও লোবেরা।