ভারতীয় ফুটবল দলে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু রায়ান উইলিয়ামস (Ryan Williams)। সদ্যই অভিষেক হওয়া এই আক্রমণাত্মক ফুটবলারকে এবার ঢাকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য ভারতীয় সিনিয়র দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে তাঁর মাঠে নামা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ফুটবল অস্ট্রেলিয়ার আনুষ্ঠানিক No Objection Certificate (NOC) এবং পরবর্তীতে FIFA ও AFC–এর অনুমোদন পাওয়ার ওপর।
অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF) জানিয়েছে, রায়ান উইলিয়ামস দলের সঙ্গে ঢাকায় ভ্রমণ করবেন, কিন্তু ম্যাচডে স্কোয়াডে তাঁর চূড়ান্ত অন্তর্ভুক্তি কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতার উপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্লাব–দেশান্তর, দুই ভিন্ন ফেডারেশনের অন্তর্গত খেলোয়াড়দের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ অনুমতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন অধ্যায়ে উত্তেজনা, কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বাকি
ভারতীয় ফুটবল ভক্তরা উইলিয়ামসকে দেখে ইতিমধ্যেই উদ্দীপিত। তাঁর বন্ধ দরজার ফ্রেন্ডলিতে ভুটানের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ নজর কেড়েছিল। টেকনিক্যাল দক্ষতা, গতি এবং ধারাবাহিক প্রভাব বিস্তার তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তুলেছে। কোচিং স্টাফও তাঁকে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে।
তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে খেলতে হলে প্রশাসনিক অনুমোদন অত্যন্ত জরুরি। রায়ান অস্ট্রেলিয়ার অধীনে নিবন্ধিত হওয়ায়, তাঁকে ভারতীয় জাতীয় দলে তোলার ক্ষেত্রে ফুটবল অস্ট্রেলিয়ার NOC বাধ্যতামূলক। এর সঙ্গে আছে FIFA–র প্লেয়ার এলিজিবিলিটি যাচাই এবং AFC–র টুর্নামেন্ট অনুমোদন।
AIFF সূত্র অনুযায়ী, প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগোচ্ছে এবং সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে তাঁকে চূড়ান্ত স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। তবে ফেডারেশন কোনো ধরনের তাড়াহুড়োতে না গিয়ে নিয়মমাফিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
ঢাকার ম্যাচ—উচ্চচাপের লড়াই
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা সফর ভারতীয় ফুটবলের জন্য রাজনৈতিক ও ক্রীড়া—উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য। দুই প্রতিবেশী দেশের ম্যাচ যে কোনও সময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর এই পরিস্থিতিতে রায়ান উইলিয়ামসকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভারতের আক্রমণভাগে গতি ও সৃজনশীলতা বাড়বে—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রায়ান উইলিয়ামস মূলত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ও উইঙ্গার পজিশনে খেলেন। তাঁর বক্সে কাট–ইন করা, থ্রু বল তৈরি করা এবং ফাইনাল থার্ডে ধারালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।
কোচ ও দলের আস্থা তাঁর ওপর বেড়েই চলেছে
নতুন কোচিং স্টাফ রায়ানের দক্ষতায় বিশ্বাস রাখছেন। দলের একাধিক সিনিয়র ফুটবলারও তাঁর বিরুদ্ধে প্রশংসাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, দলে নতুন রক্ত সঞ্চার হওয়া ফুটবলের ধারাবাহিকতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষত সুনীল ছেত্রী–উত্তর যুগে ভারতের আক্রমণভাগে নতুন নেতা খোঁজার সময় রায়ানের আগমন উল্লেখযোগ্য।
প্রশিক্ষণ সেশনে তাঁর পারফরম্যান্স মন জয় করেছে সকলের, এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ম্যাচকে ঘিরে তাঁর প্রস্তুতি নজর কেড়েছে।
প্রশাসনিক দিক—কেন NOC এত গুরুত্বপূর্ণ?
FIFA–র খেলোয়াড় যোগ্যতা নীতিতে বলা আছে, এক দেশে নিবন্ধিত খেলোয়াড় অন্য একটি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চাইলে ক্লাব বা সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন থেকে NOC আবশ্যক। এটি নিশ্চিত করে—
- খেলোয়াড়ের পূর্ববর্তী ফেডারেশনের কোনো আপত্তি নেই
- চুক্তিগত শর্ত বজায় রয়েছে
- খেলোয়াড়ের স্থানান্তর বা আন্তর্জাতিক তলব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই
এই NOC ছাড়া FIFA আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে দেওয়ার অনুমতি দেয় না। ফলে ভারতীয় দল রায়ানকে চাইলেও তাঁকে মাঠে নামাতে হলে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়া বাধ্যতামূলক।
ফেডারেশনের দাবি, তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছেন এবং বিষয়টি ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে।
ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতে রায়ানের সম্ভাবনা
রায়ানের আগমনে ভারতের আক্রমণভাগ আরও বহুমুখী হতে পারে। তিনি বিদেশি লিগে প্রশিক্ষিত, দ্রুতগামী এবং ফাইনাল থার্ডে বৈচিত্র্য তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর মতো খেলোয়াড় ফ্রি–রান, প্রেসিং ফুটবল এবং কম্বিনেশন প্লেতে বিশেষভাবে উপযোগী।
দলের জন্য নতুন কৌশল তৈরি করতে রায়ান উইলিয়ামস একটি উল্লেখযোগ্য সম্পদ হতে পারেন—স্বীকার করছেন কোচিং স্টাফ নিজেই।
রায়ান উইলিয়ামস দলের সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছেন—এটিই ইতিমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। তবে তাঁর ম্যাচডে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি এখনো নির্ভর করছে ফুটবল অস্ট্রেলিয়ার NOC এবং তার পরবর্তী FIFA–AFC অনুমোদন পাওয়ার ওপর।
যদি অনুমতি মেলে, তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি ভারতের আক্রমণভাগে নতুন ছন্দ আনতে পারেন। আর যদি অনুমতি কিছুটা সময় নেয়, তবে তাঁকে পরবর্তী আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা যাবে বলেই আশা করছে ভারতীয় ফুটবল মহল।


