কিম জং–উনের নির্দেশ কঠোর সেন্সরশিপে প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচার উত্তর কোরিয়ায়

north-korea-to-broadcast-premier-league-under-strict-censorship-rules

বিশ্ব রাজনীতির বিতর্কিত ও রহস্যময় রাষ্ট্র হিসেবে উত্তর কোরিয়ার (North Korea) অবস্থান বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার সেই দেশই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে, তবে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজস্ব নিয়ম ও সেন্সরশিপের কাঠামো মেনে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং–উন সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ দেশের অভ্যন্তরে প্রচারের অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু সেই সম্প্রচার হবে কঠোর শর্তসাপেক্ষে।

Advertisements

ফুটবল উত্তর কোরিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ অনেক গভীর। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণের নীতি বিবেচনা করে উত্তর কোরিয়া সাধারণত বহির্বিশ্বের কন্টেন্ট সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয় না। এই প্রেক্ষাপটে প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলেও শর্তসমূহ অত্যন্ত কঠোর।

   

রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম শর্ত হলো কোনো ম্যাচই সরাসরি সম্প্রচারিত হবে না। সব ম্যাচ আগে রেকর্ড করা হবে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্পাদকদের মাধ্যমে পুনঃসম্পাদনা করা হবে এবং পরে তা দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হবে। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকদের মত—উত্তর কোরিয়া চাইছে কন্টেন্ট পুরোপুরি যাচাই করে নেওয়ার পরই তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছাক।

দ্বিতীয় বড় পরিবর্তন হলো—৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচকে সম্পাদনা করে ৬০ মিনিটে নিয়ে আসা হবে। এর ফলে খেলার স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের দর্শকদের “সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ” ফুটবল অভিজ্ঞতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক লিগ। কিন্তু উত্তর কোরিয়া চায় না তাদের দর্শকরা বহির্বিশ্বের কোনও দৃশ্য দেখে ফেলে যা দেশের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সেই কারণেই তৃতীয় শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে—স্টেডিয়ামে দেখা কোনও ইংরেজি লেখা বা বিজ্ঞাপন পুরোপুরি ঢেকে ফেলতে হবে। রিপ্লে, ব্যানার, বোর্ড—সব জায়গাতেই ইংরেজি শব্দ থাকলে তার উপর বসবে উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব গ্রাফিক্স।

চতুর্থ শর্তটি আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ নজর কেড়েছে। ম্যাচে কোনো দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার থাকলে তাদের দৃশ্য পুরোপুরি মুছে ফেলতে হবে। বর্তমান EPL মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ডের ডিফেন্ডার কিম জি–সু এবং উলভারহ্যাম্পটনের ফরওয়ার্ড হুয়াং হি–চ্যান–এর উপস্থিতি সম্পূর্ণ সেন্সর করা হবে। দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে উত্তর কোরিয়ার এই সিদ্ধান্ত নতুন নয়, তবে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে এভাবে ফুটেজ কেটে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

Advertisements

পঞ্চম এবং শেষ শর্তটি হলো—স্টেডিয়াম বা খেলার মধ্যে কোথাও LGBTQ+ প্রতীক, পতাকা, ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ড বা স্লোগান দেখা গেলে তা পুরোপুরি এডিট করে বাদ দিতে হবে। ইউরোপীয় ফুটবলে এই ধরনের প্রতীক বহু ম্যাচেই দেখা যায়, বিশেষ করে প্রাইড মান্থে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া এই ধরনের প্রতীককে তাদের রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই সিদ্ধান্ত একদিকে দেশে প্রিমিয়ার লিগের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে, অন্যদিকে বিশ্ব ফুটবল সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সেন্সরশিপ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক তৈরি করতে পারে। কারণ এই ধরনের কঠোর সম্পাদনা শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, খেলাধুলার স্বাভাবিক অভিজ্ঞতাকেও পরিবর্তন করে দেয়।

তবে উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ নীতি বিবেচনা করলে এই সিদ্ধান্ত খুব অসম্ভব নয়। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে তথ্য নিয়ন্ত্রণ, সংবাদ সেন্সরশিপ এবং বহির্বিশ্বের সংস্কৃতি থেকে জনগণকে দূরে রাখার নীতি অনুসরণ করছে। প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচার সেই নীতির ব্যতিক্রম নয়, বরং তার সম্প্রসারণ বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

সব মিলিয়ে, ফুটবলপ্রেমী উত্তর কোরিয়ান দর্শকদের জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে—যদিও সেটা যথেষ্ট সীমাবদ্ধ ও সম্পাদিত রূপে। বিশ্ব ফুটবলের স্বাভাবিক রূপ থেকে এটি কতটা বিচ্যুত হবে, তা সময়ই বলবে।