বাম্বোলিম, গোয়া: ভারতের ফুটবল মানচিত্রে উত্তরপ্রদেশের নাম জ্বলজ্বল করছে নতুনভাবে। মাত্র দুই বছরের মাথায় ইন্টার কাশী ফুটবল ক্লাব আই-লিগের ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়ল। শনিবার বাম্বোলিম অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে এক সরল অথচ আবেগপূর্ণ অনুষ্ঠানে দলটি হাতে পেল বহু প্রতীক্ষিত আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি — যা তাদের সরাসরি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) উন্নীত করেছে।
কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (CAS)-এর নির্দেশে চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে বিতর্ক নিষ্পত্তি হওয়ার পর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। CAS রায়ে স্পষ্ট জানানো হয় — ইন্টার কাশীই ২০২৪–২৫ মৌসুমের প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন, যা উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।
যদিও শনিবার জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে ২–০ গোলে হেরে যায় দলটি, কিন্তু ট্রফি হাতে পাওয়ার মুহূর্তে তা যেন তুচ্ছ হয়ে যায়। গোয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাইতানো ফার্নান্দেজ ও এআইএফএফের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এম সত্যনারায়ণ ট্রফি ও এক কোটি টাকার পুরস্কারচেক তুলে দেন দলের হাতে।
🎙️ ক্লাব মালিকের গর্বিত বার্তা
আরডিবি গ্রুপ অফ কোম্পানিজের চেয়ারম্যান ও ক্লাবের মালিক বিনোদ দুগার আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,
“মাত্র দুই বছরে আমাদের ক্লাব প্রমাণ করেছে— কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে সাফল্য আসবেই। ভারত প্রতিভায় ভরপুর, শুধু দরকার সঠিক একাডেমি ও পরিকাঠামো।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ক্রিকেটের মতোই ফুটবলেও বিশ্বের দরবারে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সরকার ও সংস্থাগুলির উচিত খেলাধুলার প্রতি আরও সহায়তা দেওয়া।”
⚽ সভাপতির ভাষায় ‘নতুন সূচনা’
ক্লাব সভাপতি পৃথিজিৎ দাস বলেন,
“বিজয় অবশেষে আমাদের। এআইএফএফের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ— তারা ন্যায্য সিদ্ধান্তে প্রকৃত চ্যাম্পিয়নদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন আমাদের নজর আইএসএলে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই জয় শুধু ইন্টার কাশীর নয়, এটি উত্তরপ্রদেশের গর্বের মুহূর্ত। আমি আশা করি এই জয় নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। যেমন ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ এক প্রজন্মকে পরিবর্তন করেছিল, তেমনি এই জয় ফুটবলে বিপ্লবের সূচনা করবে।”
🧤 অধিনায়কের আবেগঘন মুহূর্ত
অভিজ্ঞ গোলরক্ষক ও দলের অধিনায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন,
“এই ট্রফিটি শুধু সাফল্য নয়, সংগ্রামের প্রতীক। পুনরুদ্ধার, কঠোর পরিশ্রম ও দলের বিশ্বাস— সবকিছুর প্রতিদান আমরা আজ পেয়েছি।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আমি হয়তো খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেব, কিন্তু ইন্টার কাশী চিরকাল আমার হৃদয়ে থাকবে। আমি সর্বদা এই দলের সমর্থক হিসেবে ফিরে আসব।”
🏟️ ভারতীয় ফুটবলে নতুন স্বপ্ন
দুই বছরের মধ্যে এত বড় মাইলফলক অর্জন সত্যিই নজিরবিহীন। একটি নবগঠিত ক্লাব থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ লিগে জায়গা করে নেওয়া— ইন্টার কাশীর এই পথচলা আজ গোটা দেশের তরুণ ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা।
ভারতের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ফুটবল মহল বলছে — “এই সাফল্য যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে উত্তরপ্রদেশই হয়ে উঠতে পারে ভারতের পরবর্তী ফুটবল কেন্দ্র।”


