ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ভারতীয় ফুটবলে সংকটের দায় স্বীকার ঝিঙ্গানের

Sandesh Jhingan Vows to Fight Back After India’s Loss to Hong Kong in AFC Asian Cup Qualifiers

বাংলাদেশের কাছে দুঃখজনক এক গোলের ব্যবধানে হারের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের সময়টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত নেমে এসেছে ১৪২ নম্বরে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে হতাশাজনক। একসময় যখন ভারত ধারাবাহিকভাবে ট্রফি জিতত, সেরা ১০০-এর কাছাকাছি থাকত—সেই সময় এখন অতীত। বর্তমান পারফরম্যান্সে এই পতন যেন অবশ্যম্ভাবীই ছিল।

Advertisements

এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাইপর্বেও চরম ব্যর্থতা

খালিদ জামিলের অধীনে ভারতের সাম্প্রতিক ফর্ম সমালোচনার কেন্দ্রে।

ভারত গ্রুপে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিংধারী দল হওয়া সত্ত্বেও এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর ফাইনাল রাউন্ডের বাছাইপর্বে এখনো একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি

   

গ্রুপের অন্যান্য দল—

  • সিঙ্গাপুর

  • হংকং

  • বাংলাদেশ

—এদের সবার র‍্যাঙ্কিং ভারতের চেয়ে কম, কিন্তু পাঁচ ম্যাচ শেষে শুধুমাত্র ভারতই জয়ের খাতা খুলতে পারেনি। এই পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দেয় দল এখন গভীর সংকটে।

জাতীয় দলের সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে দায় স্বীকার ঝিঙ্গানের

সমালোচনা সব দিক থেকে আসছে—সমর্থক, বিশ্লেষক, এমনকি সাবেক ফুটবলারদের কাছ থেকেও।

এই কঠিন মুহূর্তে সামনে এসে দায় স্বীকার করলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক সন্দেশ ঝিঙ্গান (Sandesh Jhingan)

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন—

“আমাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা একশো ভাগ যথার্থ। আমরা প্রাপ্য। জাতীয় দল কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছে, আমরা দায় এড়াতে পারি না।”

ঝিঙ্গান জানিয়েছেন, দল এখন এমন এক পর্যায়ে রয়েছে যেখানে প্রত্যেকের জবাবদিহি প্রয়োজন। দেশের সেরা লিগ ISL বন্ধ রেখেও জাতীয় দলকে প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা তাঁর মতে ইঙ্গিত দেয় পরিস্থিতি কতটা সংকটপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন—

“হার মেনে নেওয়া, হাল ছেড়ে দেওয়া কখনোই আমাদের পথ নয়। ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। সমর্থকদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—আমরা তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনব।”

গুরপ্রীত সিং সান্ধুর প্রতিক্রিয়া: “এই পরিস্থিতি আমাদেরই তৈরি”

দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য ও গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুও দায় স্বীকার করে জানান—ভারতীয় দলের এই দুর্দশার জন্য খেলোয়াড়রাই মূলত দায়ী।

Advertisements

গুরপ্রীত বলেন—

“এখন দলের যে অবস্থান—তার জন্য আমরাই দায়ী, এবং আমরাই এটাকে পাল্টাতে পারি। এমন ফল কষ্ট দেয়, কিন্তু আবারও মনে করিয়ে দেয়—এখান থেকে শেখার, উন্নতি করার এবং আরও শক্তভাবে ফিরে আসার সুযোগ আছে।”

তার মতে, সমালোচনা কঠিন হলেও প্রয়োজনীয়—কারণ তা দলকে নিজের দুর্বল দিকগুলোর সামনে দাঁড় করায়।

চহাংতের ব্যথা: ‘বাংলাদেশ ম্যাচের পর প্রতিটি মুহূর্ত কষ্ট দিয়েছে’

ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রতিভা লালিয়ানজুয়ালা চহাংতে, যিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের ৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন, নিজের হতাশা লুকাননি।

তিনি বলেন—

“এই হার ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর প্রতিটি মুহূর্ত আমরা নিজেদের প্রশ্ন করছি—কারণ আমরা জানি সমর্থকদের কাছে এই দলের গুরুত্ব কত। সমালোচনা প্রাপ্য, এবং আমরা তা পুরোপুরি স্বীকার করছি।”

চহাংতের মতে, দলের ভেতরে এখন “গভীর হতাশার অনুভূতি” কাজ করছে, কিন্তু সেই দুর্বলতা থেকেই শক্তি খুঁজে বের করতে হবে।

ভারতীয় ফুটবলের সামনে কোন পথ?

সকল সিনিয়রের বক্তব্য এক জায়গায় গিয়ে মিলে—

👉 দল একতা, জবাবদিহি ও ধারাবাহিক উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

👉 সমর্থকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব খেলোয়াড়দেরই।

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের পতন এবং জয়ের অভাব দলকে মানসিকভাবে আঘাত করেছে। কিন্তু ঝিঙ্গান-গুরপ্রীত-চহাংতের কথায় বোঝা যায়—দল এখন ব্যর্থতা মেনে নিয়ে নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত।

সামগ্রিক মূল্যায়ন

  • ভারতীয় ফুটবল এখন কঠিনতম সময় পার করছে

  • পাঁচ ম্যাচ পরও জয়ের অভাব দলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির ইঙ্গিত

  • অধিনায়ক, গোলকিপার ও সিনিয়র খেলোয়াড়রা সম্মিলিতভাবে দায় স্বীকার করেছেন

  • ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছেন সবাই

ভারতীয় ফুটবল এখন ক্রান্তিকালে। সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেও খেলোয়াড়রা সামনে থেকে দায় স্বীকার করেছেন—যা পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ। এখন দেখার বিষয়, মাঠে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন কত দ্রুত ধরা দেয়।