ভারতীয় ফুটবলে এক গভীর সংকটের মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। ডুরান্ড কাপ শেষ হওয়ার পর এবার সুপার কাপও শেষ পর্যায়ে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে, দেশের একাধিক ক্লাব আপাতত প্রথম দলের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ফুটবলাররা এখন কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। পরবর্তী টুর্নামেন্ট কবে, আদৌ হবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই। এই পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) সভাপতি কল্যাণ চৌবে।
তিনি বলেন, “আমরা ভারতীয় ফুটবলের শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং একটা সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। গত ১০–১৫ বছরে অনেক স্টেকহোল্ডার ভারতীয় ফুটবলে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। আমাদের দায়িত্ব নিশ্চিত করা যে, খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ যেন কোনোভাবে বিপন্ন না হয়।” এই বক্তব্যে ফুটবল প্রশাসনের এক ধরনের আত্মসমালোচনাও ধরা পড়েছে, কারণ বর্তমান আর্থিক কাঠামো এবং প্রতিযোগিতা সূচির বিশৃঙ্খলা ফুটবলের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
আইএসএল ক্লাবগুলোর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, কারণ সুপার কাপ শেষ হওয়ার পর আর কোনও অফিসিয়াল প্রতিযোগিতা হওয়ার ঘোষণা নেই। ফলে দলগুলোর ফুটবলারদের চুক্তি, প্রশিক্ষণ, এমনকি কোচিং স্টাফদের কাজও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেরালা ব্লাস্টার্সের সিইও অভীক চট্টোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমরা একপ্রকার অচল অবস্থায় আছি। আমাদের হাতে এখন কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে খেলোয়াড়—সবাই উদ্বিগ্ন, কারণ পরবর্তী ধাপ কী হবে তা কেউ জানে না।”
এই পরিস্থিতি আরও জটিল কারণ, বেশিরভাগ ক্লাবই বিশাল বিনিয়োগ করে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে। কিন্তু যদি প্রতিযোগিতা না থাকে, স্পনসরশিপ ও দর্শক আগ্রহ হ্রাস পেলে তাদের আর্থিক ভারসাম্য ভেঙে পড়তে পারে। অনেক ক্লাব ইতিমধ্যেই প্রথম দলের কার্যক্রম “অস্থায়ীভাবে স্থগিত” রেখেছে, যা কার্যত ফুটবলারদের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে।
ফুটবল মহলে বলা হচ্ছে, এআইএফএফের এখন প্রয়োজন এক পরিষ্কার ও বাস্তবসম্মত বার্ষিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা, যাতে আইএসএল, সুপার কাপ, সন্তোষ ট্রফি ও অন্যান্য টুর্নামেন্টের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সংযোগ থাকে। এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবের কথাতেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে — তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো তৈরি করা। যাতে ক্লাব, খেলোয়াড় এবং বিনিয়োগকারীরা সবাই নিশ্চিত থাকতে পারেন।”
অন্যদিকে, ফুটবলারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যারফলে তরুণ ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ এবং ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়ন প্রকল্পই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আইএসএল শুরু হয়েছিল ভারতীয় ফুটবলের নতুন ভোর হিসেবে, কিন্তু এখন সেই লিগই যেন দিকহীন। ফুটবলার, কোচ, সবাই অপেক্ষা করছেন, কখন প্রশাসন এই অচলাবস্থা ভাঙবে। কল্যাণ চৌবের নেতৃত্বে যদি নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো বেড়িয়ে আসবে সমাধান সূত্র। ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন, এই সঙ্কট কাটিয়ে আবারও দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে।


