১৮ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত ও বাংলাদেশ (India vs Bangladesh)। কাগজে-কলমে ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথ কখনই শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়। ইতিহাস, গর্ব, আঞ্চলিক আধিপত্য এবং ফিফা র্যাঙ্কিং সবকিছু মিলিয়ে ম্যাচটিতে রয়েছে আলাদা উত্তাপ এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস।
ভারত ইতিমধ্যেই এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাইপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। টানা চার ম্যাচে পরাজয়ের পর ব্লু টাইগার্সদের সামনে এই ম্যাচ নতুন করে পুনর্গঠনের পথে হাঁটার প্রথম ধাপ। নতুন কোচ খালিদ জামিল তরুণদের উপর ভরসা রেখে স্কোয়াড সাজিয়েছেন। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের পরিকল্পনারই বার্তা বহন করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশও মূলপর্বের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও নিজেদের মাটিতে প্রতিপক্ষ ভারতকে হারানোর তাগিদ থাকবে তপু-রাকিবদের কাছে।
এই লড়াইয়ে কয়েকটি প্লেয়ার ব্যাটল ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে। দেখা যাক কোন মুখোমুখিগুলো ম্যাচকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।
রহিম আলি বনাম তপু বর্মন
সুনীল ছেত্রীর অবসরের পর ভারতের আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব এখন তরুণ রহিম আলির কাঁধে। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে তার করা গোল আত্মবিশ্বাস জোগায়। যদি রহিম প্রথম একাদশে নামেন, তবে তাকে সামলাতে হবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ সেন্টার-ব্যাক তপু বর্মনকে।
৬৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা তপু বর্মন বাংলাদেশের ডিফেন্সের স্তম্ভ। রহিমের শারীরিক খেলা ও গতি বনাম তপুর পজিশনাল সেন্স—এই লড়াই সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ম্যাচের স্কোরলাইনে। ভারতকে তিন পয়েন্ট পেতে হলে রহিমের গোল পাওয়া প্রায় অপরিহার্য।
হামজা চৌধুরী বনাম মহেশ সিং নাওরেম
ভারতের ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে স্বাভাবিক কোনও নম্বর-টেন না থাকায় আবারও সেই সৃজনশীল মাইক্রো-ম্যানেজারের ভূমিকা নিতে পারেন মহেশ সিং নাওরেম। আর তার সামনে থাকবেন বাংলাদেশ দলে নতুন আলোড়ন তোলা লেস্টার সিটি মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।
রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হয়েও ছয় ম্যাচে চার গোল করে হামজা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন তার প্রভাব কতটা ব্যাপক। মাঝমাঠে তার দাপট কমাতে না পারলে ভারত চাপের মুখে পড়বে। সৃজনশীলতা, পাসিং ও দিক পরিবর্তনের দক্ষতা দিয়ে মহেশকে বারবার হামজার প্রেস ভেঙে ভারতকে আক্রমণ সাজাতে হবে।
সন্দেশ ঝিঙ্গান বনাম রাকিব হোসেন
ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গান দারুণ ফর্মে আছেন। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আল-নাসরের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করে ফিরেই তিনি নামবেন বাংলাদেশ আক্রমণ থামাতে।
বাংলাদেশের আক্রমণভাগে সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র হতে পারেন রাকিব হোসেন। সাধারণত ডান উইঙ্গার হলেও নেপালের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন কেন্দ্রীয় ভূমিকায়, সেখান থেকেও তিনি সৃষ্টিশীলতা দেখিয়েছেন। ভারতীয় বক্সে ঢোকার দৌড় ও ড্রিবলিং দক্ষতার জন্য রাকিবকে আটকানো কঠিন কাজ হবে ঝিঙ্গানের কাছে। রাকিব বনাম ঝিঙ্গানের এই এক-অন-ওয়ান ডুয়েল নির্ধারণ করতে পারে বাংলাদেশ গোল পাবে কি না।
বাছাইপর্বে গুরুত্ব না থাকলেও ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচ মানেই আলাদা আবেগ। ভারতের জন্য এটি তরুণদের সঙ্গে আগামীর দল গড়ার সূচনা, আর বাংলাদেশের কাছে এটি ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের সুযোগ।


