এশিয়া মঞ্চে ফের স্বপ্ন ভঙ্গ ভারতের! ১০০ কোটির মেসিকে নিয়ে প্রশ্ন

india-singapore-afc-asian-cup-loss-messi-controversy

ভারতীয় ফুটবলের স্বপ্নভঙ্গের আরেকটি অধ্যায় রচনা হল AFC এশিয়ান কাপে। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে লজ্জাজনক পরাজয়, কার্যত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল খালিদ জামিলের ভারতীয় বাহিনী। এই হার শুধু পরিসংখ্যান নয়, তা যেন এক প্রতিফলন—ভারতীয় ফুটবল আজও দিশাহারা, আজও উন্নতির সিঁড়িতে আটকে আছে প্রাথমিক ধাপে।

ইউনাইটেড ম্যাচে বাগান শিবিরে অনুপস্থিত এই চার তারকা ফুটবলার!

হার নয়, আত্মসমর্পণ

কলকাতার মত শহরে মেসির আগমন নিয়ে যতটা উন্মাদনা, মাঠে ভারতের পারফরম্যান্স ততটাই নিরুত্তাপ। ম্যাচের শুরুটা ছিল আশাব্যঞ্জক লালিয়াঞ্জুয়ালা ছাংতে ১৪তম মিনিটে গোল করে ভারতের হয়ে গোলের দরজা খোলেন। কিন্তু সেই আনন্দ স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ । প্রথমার্ধের শেষ মিনিটেই ইউ-ইয়ং সং এর গোলে সিঙ্গাপুর সমতা ফেরায়। দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের রক্ষণভাগের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। ৫৮তম মিনিটে আবারও সং-এর গোলে ভারতের বিদায়ের সিলমোহর পড়ে।

Advertisements

ম্যাচ পরিসংখ্যান বলছে হতাশার গল্প

চার ম্যাচে মাত্র দুই পয়েন্ট নিয়ে ভারত এখন গ্রুপ টেবিলের তলানিতে। এখন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে শুধু বাকি সব ম্যাচ জিতলেই চলবে না, হংকংকে কমপক্ষে দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারাতে হবে। বাস্তবে যা প্রায় অসম্ভব। ম্যাচে ভারতের বল দখলের হার ছিল ৫৩ শতাংশ, কিন্তু আক্রমণে ছিল চরম ব্যর্থতা। ১২টি শটের মধ্যে মাত্র ৩টি ছিল অন টার্গেট। মাঝমাঠে সৃজনশীলতার অভাব, রক্ষণে সমন্বয়ের ঘাটতি আর স্ট্রাইকারদের অক্ষমতা সব মিলিয়ে এশিয়া মঞ্চে ফের মুখ পুড়ল ভারতের।

ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের তীব্র সমালোচনা

ম্যাচের পর দেশের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের ক্ষোভ উগরে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন “১০০ কোটি টাকা খরচ করে লিওনেল মেসিকে এনে ভারতের ফুটবলের লাভটা ঠিক কী?” ফুটবল বোর্ডের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কলকাতায় মেসির সফর আয়োজন নিয়ে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের বক্তব্য “যদি সেই টাকাটা দেশের গ্রাসরুট ফুটবলে, কোচিং পরিকাঠামো আর খেলোয়াড় উন্নয়নে লাগানো হতো, তাহলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতো।”

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়েও ধাক্কা

এই পরাজয়ের পর ভারতের ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও পতন ঘটতে চলেছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে ভারত বিশ্বের ১২৪ নম্বরে রয়েছে। সিঙ্গাপুরের মতো অপেক্ষাকৃত নিচের দলে হেরে গেলে সেই অবস্থান আরও নীচে নেমে যেতে পারে।

লিওনেল মেসির ভারত সফর নিয়ে দেশজুড়ে যেমন উৎসবের আবহ, তেমনি মাঠে ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশাও ক্রমবর্ধমান। প্রশ্ন উঠছে “যখন দেশের খেলোয়াড়রা একটার পর একটা টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন বিদেশি তারকার আগমন কি কেবল চোখ ধাঁধানো প্রদর্শনী নয়?”

একই সঙ্গে ফুটবলপ্রেমীদের দাবি, এখন সময় এসেছে ভারতের ফুটবল প্রশাসকদের ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ থেকে সরে এসে ‘ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট’-এর দিকে মনোযোগ দেওয়ার। সিঙ্গাপুরের কাছে এই হার ভারতীয় ফুটবলের জন্য এক বড় শিক্ষা।

মেসির উন্মাদনা যতই থাকুক, ভারতীয় ফুটবলের প্রকৃত ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মাঠের খেলায়, সেই ঘাম-রক্তে ভেজা পরিশ্রমে যা আজও অনুপস্থিত। ভারতের ফুটবল যদি সত্যিই বদলাতে চায়, তবে মিডিয়া শো নয়, মাঠে উন্নতি আনতেই হবে। 

Advertisements