বাংলাদেশ সফরের জন্য ভারতের ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা, কারা রইল জানুন

Indian Football Team U23 mens 23-member squad for Tajikistan tour

অবশেষে ঘোষিত হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে ম্যাচকে সামনে রেখে ভারতের ২৩ সদস্যের (India squad) ভ্রমণকারী দল। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭–এর যোগ্যতা অর্জন পর্বের অংশ হিসেবে এই ম্যাচ ভারতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন প্রধান কোচ খালিদ জামিল দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, এবং সেই কারণেই দল নির্বাচনে দেখা গেছে সতর্কতা ও আক্রমণাত্মক পরিকল্পনার মিশ্রণ।

Advertisements

ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (AIFF) সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করে। গোলকিপার বিভাগে রয়েছেন গুরপ্রীত সিং সান্ধু, হৃত্বিক তিওয়ারি এবং সাহিল—যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় ডিফেন্সের প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠেছেন। রক্ষণভাগে আকাশ মিশ্রা, অনোয়ার আলি, বিকাশ ইয়ুমনাম, হমিংথানমাবিয়া রাল্টে, জয় গুপ্ত, পরমবীর, রাহুল ভেকে এবং সন্দেশ ঝিঙ্গানকে নিয়ে শক্তিশালী একটি ব্যাকলাইন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে রক্ষণে শৃঙ্খলা ও ফিজিক্যালিটি হবে মূল চ্যালেঞ্জ, সেই বিষয় বিবেচনায় দলে অভিজ্ঞতা ও তরুণ উদ্যমের সুষম মিশ্রণ রাখা হয়েছে।

   

মিডফিল্ডে ব্রিসন ফার্নান্ডেস, লালরেমতলুয়াঙা ফানাই, ম্যাকার্টন নিকসন, মহেশ সিংহ নাওরেম, নিখিল প্রভু এবং সুরেশ সিংহ ওয়াংজামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিভাগে ফিটনেস, বল কন্ট্রোল ও ম্যাচ টেম্পো নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাই হবে মূল চাবিকাঠি। বিশেষ করে সুরেশ ও মহেশ তাঁদের সৃজনশীলতা এবং উচ্চ গতির ফুটবলের জন্য পরিচিত, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের আক্রমণভাগকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।

ফরোয়ার্ড লাইনে নতুন আলোচনার কেন্দ্র রায়ান উইলিয়ামস

আক্রমণভাগে রয়েছেন এডমুন্ড লালরিন্ডিকা, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, মোহাম্মদ সানান, রহিম আলি, রায়ান উইলিয়ামস এবং বিক্রম প্রতাপ সিংহ। এর মধ্যেই সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন রায়ান উইলিয়ামস—যিনি সম্প্রতি ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়েছেন এবং খালিদ জামিলের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

তবে রায়ানকে ম্যাচডে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা এখনো নিশ্চিত নয়। তাঁর অন্তর্ভুক্তি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ফুটবল অস্ট্রেলিয়া থেকে No Objection Certificate (NOC) পাওয়ার ওপর, এবং এরপর FIFA ও AFC–এর চূড়ান্ত অনুমোদনের ওপর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিভিন্ন দেশের ফেডারেশনের আওতাধীন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এই অনুমোদন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক।

AIFF জানিয়েছে, উইলিয়ামস দলের সঙ্গে ঢাকায় ভ্রমণ করবেন এবং প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ দলের সঙ্গে করবেন। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া পূরণ হওয়ার আগে তাঁকে মাঠে নামানো যাবে না। সূত্রগুলো জানাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।

কোচ খালিদ জামিলের পরিকল্পনা—নতুন কাঠামো, নতুন ছন্দ

নতুন কোচ হিসেবে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন খালিদ জামিল। ভারতীয় ফুটবলে তাঁর ক্লাব-সাফল্য সুপরিচিত, কিন্তু জাতীয় দলের ডাগআউটে তিনি এবারই প্রথম। তাঁর দলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে—সংগঠিত রক্ষণ, মধ্যমাঠে বল ধরে রাখা এবং আক্রমণে দ্রুতগতির পাসিং ফুটবলের প্রতি ঝোঁক।

Advertisements

জামিলের অধীনে খেলোয়াড়দের অনুশীলনেও দেখা গেছে উচ্চ-প্রেসিং ফুটবল এবং টেকনিক্যাল ওয়ার্ককে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রায়ান উইলিয়ামস যদি মাঠে নামতে পারেন, তাহলে আক্রমণভাগে গতিময়তা ও সৃজনশীলতা আরও বাড়বে। তাঁর কাট–ইন রান, ডান প্রান্ত থেকে ক্রস দেওয়ার দক্ষতা এবং ফিনিশিং ক্ষমতা দলের জন্য বড় সম্পদ হতে পারে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ—উচ্চ তীব্রতার লড়াই

ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচ সবসময়ই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে লড়াই হওয়ায় মাঠে আবেগের তীব্রতা, দর্শকদের চাপ এবং ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিযোগিতা বেশি থাকে। ঢাকায় অ্যাওয়ে ম্যাচে পরিবেশ আরও চ্যালেঞ্জিং হবে বলেই মনে করছে AIFF।

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের ফুটবল কাঠামো উন্নত করেছে এবং কলকাতা ও ঢাকায় হওয়া পূর্ববর্তী ম্যাচগুলোতে ভারতকে যথেষ্ট চাপে ফেলেছিল। সুতরাং ভারতীয় দলের জন্য এক মুহূর্তও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।

ভারতের ২৩ সদস্যের এই স্কোয়াড অভিজ্ঞতা, তারুণ্য ও টেকনিক্যাল বৈচিত্র্যের সুষম সমন্বয়। রায়ান উইলিয়ামসের অন্তর্ভুক্তি দলের মান আরও বাড়াতে পারে, যদিও তাঁর খেলতে নামা এখনো প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।

ঢাকা সফর ভারতের জন্য শুধু একটি ফুটবল ম্যাচ নয়—বরং এশিয়ান কাপ ২০২৭–এর যোগ্যতা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভারতীয় ফুটবল ভক্তরা এখন অপেক্ষা করছেন—এই নতুন–রূপে সাজানো ব্লু টাইগার্স মাঠে কেমন পারফরম্যান্স দেখায়।