এশিয়ান উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (AWCL)-এর গ্রুপ স্টেজে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলের (East Bengal Women) অংশগ্রহণ ঘিরে উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা ও বিশ্লেষণের ঢেউ উঠেছে ভারতীয় ফুটবল মহলে। চীনের উহানে স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের প্রধান কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুস এবং উগান্ডার তারকা ফরোয়ার্ড ফাজিলা ইকওয়াপুট দলীয় প্রস্তুতি, সম্ভাবনা এবং ক্লাবের গুরুত্ব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলের জন্য এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত—প্রথমবারের মতো এডব্লিউসিএলের বড় মঞ্চে গ্রুপ স্টেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুস বলেন, “আমরা প্রিলিমিনারি স্টেজে গ্রুপ টপ করেছি, যা আমাদের ক্লাব ও দেশের জন্য বড় সম্মানের। এখন গ্রুপ স্টেজে অংশ নেওয়া আমাদের পরবর্তী বড় ধাপ। ভারতে আমরা অনেক প্রতিভাবান মহিলা ফুটবলার তৈরি করছি। কাজটা চলমান, তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে গ্রুপ স্টেজে ভালো করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইস্টবেঙ্গল শুধুই অংশগ্রহণ করতে নয়, বরং প্রতিযোগিতার প্রতিটি ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে প্রস্তুত।
এডব্লিউসিএল এশিয়ার মহিলা ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চ। বড় বাজেট, বড় তারকা এবং প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোর ক্লাবগুলোর মাঝে ভারতীয় ক্লাবের লড়াই কখনোই সহজ নয়। তবুও ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক উন্নতি দেখিয়ে এসেছে। প্রশিক্ষণ, পুষ্টি, ফিটনেস এবং বিদেশি ফুটবলার নিয়োগ—সব মিলিয়ে ক্লাব মহিলা ফুটবলে নতুন অধ্যায় গড়ছে।
উগান্ডার আন্তর্জাতিক তারকা ও দলের অন্যতম ভরসা ফাজিলা ইকওয়াপুট বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো লিগ্যাসি ক্লাবকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করা বড় সম্মান। আমরা গ্রুপ স্টেজের জন্য খুব তীব্র প্রস্তুতি নিয়েছি এবং দেশ-বিদেশের সমর্থকদের গর্বিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” তাঁর এই বক্তব্যে দলের আগ্রহ, আত্মবিশ্বাস এবং দায়বদ্ধতার ছবি স্পষ্ট।
ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল এই মৌসুমে তাদের খেলা দিয়ে বড় বার্তা দিয়েছে। ভারতীয় ফুটবলে বহু বছর ধরে পুরুষ দলই প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু এখন মহিলা ফুটবলে বিনিয়োগ, প্রচার এবং আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ বাড়ছে। ইস্টবেঙ্গল সেই পরিবর্তনের অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে—যা অ্যান্ড্রুসের কথায় প্রতিফলিত হয়েছে।
ভারতে মহিলা ফুটবলের অবকাঠামো এখনো উন্নয়নের পথে। কিন্তু এআইএফএফ মহিলা লিগ, দেশের বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগ এবং বিদেশি লিগে ভারতের ফুটবলারদের খেলায় নতুন দরজা খুলেছে। এডব্লিউসিএল গ্রুপ স্টেজে ইস্টবেঙ্গলের অংশগ্রহণ ভারতকে এশিয়ান ফুটবলের মানচিত্রে মহিলা ফুটবলে দৃঢ় অবস্থান তৈরির সুযোগ করে দেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইস্টবেঙ্গলের দলগত রক্ষণ, দ্রুতগতির ট্রানজিশন এবং ফাজিলা–প্রগতি–দেবলিনা–জেসমিনাদের আক্রমণভাগ প্রতিপক্ষকে চাপে রাখবে। মিডফিল্ডের সৃজনশীলতা ও শারীরিক দাপট হবে চ্যালেঞ্জ। তবে অ্যান্ড্রুসের ট্যাকটিক্যাল প্ল্যানিং এবং দলে বিদেশি কোচিং স্টাফের সম্পৃক্ততা বড় শক্তি।
ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের কাছে এটি গর্বের বিষয়—কারণ ইস্টবেঙ্গল পুরুষ ফুটবলে যেমন নিজস্ব ইতিহাস তৈরি করেছে, এখন মহিলা দলও আন্তর্জাতিক স্তরে সেই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। মশালগার্লদের এই যাত্রা নতুন প্রজন্মের মহিলা ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবে।
চীনে অভিযানের আগে দলে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষও নানা ব্যবস্থা করেছে। খেলোয়াড়দের মনোবল বৃদ্ধি, স্পোর্টস সায়েন্স সাপোর্ট এবং বিশেষায়িত স্ট্র্যাটেজি সেশন—সবকিছুই করা হয়েছে আধুনিক ফুটবলের চাহিদা অনুযায়ী।
এডব্লিউসিএল এখনো ভারতীয় ক্লাবগুলির জন্য কঠিন টুর্নামেন্ট। তবুও ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম, ফিটনেস ও দলগত একতা দিয়ে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। কোচ অ্যান্ড্রুসের মতোই দলের প্রতিটি সদস্য বিশ্বাস করেন—“এই যাত্রা শুধু খেলোয়াড়দের নয়, সমগ্র দেশের মহিলা ফুটবলের উন্নয়নের অংশ।”
ভারতীয় মহিলা ফুটবল আজ নতুন যুগে প্রবেশ করছে। আর সেই যাত্রার অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠছে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল।


