সন্তোষ ট্রফির নতুন যোগ্যতা নীতি ঘোষণা করল AIFF, বাড়ল বিতর্ক

Santosh Trophy Rules

সন্তোষ ট্রফিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ফুটবলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। নতুন মৌসুম ২০২৫–২৬ থেকে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে হলে কোনও খেলোয়াড়কে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সীমানার ভেতরে জন্মগ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা “বাইরের খেলোয়াড় আমদানি” নীতির অবসান ঘটিয়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল ফেডারেশন।

Advertisements

এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই ভারতীয় ফুটবল মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ এটিকে প্রতিভা উন্নয়নের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন, আবার কেউ মনে করছেন—এতে দুর্বল রাজ্যগুলো আরও পিছিয়ে পড়তে পারে।

   

নতুন নীতির মূল ঘোষণা কী?

AIFF–এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এম. সত্যনারায়ণ ১১ নভেম্বর একটি অফিসিয়াল সার্কুলার পাঠান সদস্য রাজ্য সমিতিগুলির কাছে। সেখানে বলা হয়—

“২০২৫–২৬ মৌসুম থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সীমানার ভেতরে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড়রাই সেই রাজ্যের হয়ে সন্তোষ ট্রফি সহ সব জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারবেন।”

এর আগে কী হতো?

  • খেলোয়াড় অন্য রাজ্যে জন্মালেও সেখানে দুই বছরের স্থায়ী বাসিন্দা (Permanent Resident) হলে তাকে দলে নেওয়া যেত।

  • এমনকি কোনো খেলোয়াড় অন্য রাজ্যের হলেও যদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের লিগভুক্ত ক্লাবে খেলতেন, তবুও তাঁকে স্কোয়াডে রাখা যেত।

  • চারজন “বাইরের খেলোয়াড়”ও বিশেষ বিধান অনুযায়ী নেওয়া যেত।

ফলস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, মহারাষ্ট্রের মতো ফুটবলশক্ত এলাকা থেকে বহু খেলোয়াড় বিভিন্ন রাজ্যের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলতেন। দুর্বল রাজ্যগুলো শক্তিশালী দল গড়তে বহিরাগতদের উপর নির্ভর করত।

AIFF সেই অধ্যায়েরই অবসান ঘটাল।

কেন এই পরিবর্তন?

ফেডারেশনের প্রতিযোগিতা কমিটি মনে করেছে—

  1. প্রতিটি রাজ্যে লোকাল ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট বাড়াতে হবে।

  2. সন্তোষ ট্রফিকে আবার “রাজ্য–গর্বের প্রতিযোগিতা” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

  3. সদস্য রাজ্যসমূহ খেলোয়াড় আমদানির চেয়ে গ্রাসরুট উন্নয়নে জোর দিক।

AIFF–এর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—কিছু শক্তিশালী রাজ্য তাদের সেরা প্রার্থীদের হারিয়ে ফেলছে, কারণ সেই খেলোয়াড়রা অন্য রাজ্যের হয়ে খেলছেন। ফলে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

কারা এই নিয়মের বাইরে থাকবেন?

ফেডারেশন জানিয়েছে—

Services

Railways

এই দুটি দল পূর্বের মতোই তাদের কর্মী এবং নিবন্ধিত খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়তে পারবে। কারণ এদের রাজ্যভিত্তিক কোনও কাঠামো নেই।

বঙ্গ, মণিপুর, মিজোরাম—কারা প্রভাবিত হবে?

এই নিয়ম সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে ঐতিহাসিক শক্তি—পশ্চিমবঙ্গ, যারা বহুদিন ধরে মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের নিয়ে সন্তোষ ট্রফিতে দাপট দেখিয়েছে।

অন্যদিকে মিজোরাম, মণিপুর, পাঞ্জাব, কেরালা—এদের ফুটবল প্রতিভার সরবরাহ এতই শক্তিশালী যে তারা বাইরের খেলোয়াড়ের উপর খুব একটা নির্ভর করে না। নতুন নিয়মে এটাই তাদের বাড়তি সুবিধা দেবে।

Advertisements

গ্রুপিং ঘোষণা: কে কোন গ্রুপে?

AIFF ভৌগোলিক ভিত্তিতে নয়টি গ্রুপ ঘোষণা করেছে।

এই সংস্করণে—

  • প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফাইনাল রাউন্ডে যাবে।

  • তাদের সঙ্গে থাকবে হোস্ট রাজ্য, গত বছরের ফাইনালিস্ট পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালা

গোয়াকে “গ্রুপ H”-তে রাখা হয়েছে—

Goa

Karnataka

Services

Lakshadweep

এটিকে অন্যতম “Group of Death” ধরা হচ্ছে।

কী বলছে ফুটবলমহল?

ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মত—

✔️ সমর্থকদের মতে:

নিয়ম কঠোর হওয়ায় প্রতিটি রাজ্য নিজেদের প্রতিভা নিজস্ব ভাবে উন্মোচনের সুযোগ পাবে।

✔️ সমালোচকদের মতে:

দুর্বল রাজ্যসমূহ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে, কারণ তাদের ঘরের খেলোয়াড়ের মান এখনো জাতীয় স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো নয়।

✔️ কোচদের মতে:

এতে দীর্ঘমেয়াদে দেশব্যাপী গাঁথা ফুটবল ভালো হবে।

✔️ ক্লাব কর্মকর্তাদের মতে:

খেলোয়াড়েরা এখন নিজ রাজ্যের লিগে খেলার দিকে ঝুঁকবেন, যা স্বাভাবিক প্রতিভা প্রবাহ বাড়াবে।

সন্তোষ ট্রফির নতুন যোগ্যতা বিধি ভারতীয় ফুটবলে একটি বড় প্রশাসনিক পরিবর্তন। অল্প সময়ে এর প্রভাব দেখা নাও যেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিটি রাজ্যে ফুটবলের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

AIFF–এর এই উদ্যোগ—

➡ রাজ্যভিত্তিক প্রতিভা উন্নয়ন বাড়াবে

➡ প্রতিযোগিতার স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনবে

➡ ক্লাব–রাজ্য যোগসূত্রকে শক্তিশালী করবে

তবে দুর্বল রাজ্যগুলির উন্নতির জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন—এ কথা বিশেষজ্ঞদের একাংশই মনে করিয়ে দিচ্ছেন।