PIO নয়! দেশীয় প্রতিভাকেই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ অনুরাগ ঠাকুরের

focus-on-homegrown-talent-not-pio-says-anurag-thakur

দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে বহুল আলোচিত ‘PIO এবং OCI খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি’ নিয়ে আবারো নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেশের সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী এবং শাসকদলের সাংসদ অনুরাগ সিং ঠাকুর (Anurag Thakur) জানিয়েছেন—ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে খেলোয়াড় আমদানি করা নয়, বরং দেশীয় প্রতিভা গড়ে তোলাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের মতো ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে সম্ভাবনাময় প্রতিভার অভাব নেই; তাই বিদেশি নাগরিকত্বধারী খেলোয়াড়দের পেছনে ছুটে লাভ নেই বরং দেশীয় ক্রীড়াব্যবস্থাকে আরও মজবুত করাই জরুরি।

Advertisements

অনুরাগ সিং ঠাকুর গোয়া–র আরপোরায় অনুষ্ঠিত ফিদে ওয়ার্ল্ড কাপে উপস্থিত হয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, “বিদেশি উৎসের খেলোয়াড়দের আমদানি না করে আমাদের উচিত এখানকার খেলোয়াড়দের আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ১.৪ বিলিয়ন মানুষের দেশে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। সেই প্রতিভাকেই লালন করতে হবে।”

   

PIO/OCI নিয়ে বিতর্ক কোথায় শুরু হল?

২০০৮ সাল থেকে ভারত সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী—

➡ শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।

➡ OCI বা PIO স্ট্যাটাসধারীরা ভারতীয় দলে নির্বাচিত হতে পারেন না।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ফুটবলে, দেশের দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে অনেকেই চাইছিলেন ভারতের বাইরে জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের দলে যুক্ত করা হোক। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও গালফ দেশগুলোতে খেলছেন বহু PIO ফুটবলার, যাদের ভারতের জার্সিতে দেখা গেলে শক্তিশালী দল গঠন করা সম্ভব—এমন যুক্তিও তোলা হচ্ছিল।

এই প্রেক্ষাপটেই ঠাকুর জানালেন, বিদেশি নাগরিককে সুযোগ দিলে ভারতীয় খেলোয়াড়দের অগ্রগতিতে বাধা তৈরি হবে।

AIFF–এর নীতি, Ryan Williams–এর ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং নতুন বিতর্ক

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার রায়ান উইলিয়ামস নিজের বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। এর ফলে তিনি জাতীয় দলে নির্বাচনের যোগ্যতা অর্জন করেন। উইলিয়ামস–এর এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ভবিষ্যতে ‘বিদেশি উৎসের খেলোয়াড় আনতে’ উৎসাহ হিসেবে দেখছেন।

কিন্তু অনুরাগ ঠাকুরের মতে—

➡ বিদেশ থেকে ‘ইন্ডিয়ান অরিজিন’ ফুটবলার আমদানি করলে দেশীয় প্রতিভা পিছিয়ে পড়বে।

➡ ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে দেশীয় প্রতিভা গড়ে তোলাই ভারতের ক্রীড়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পথ।

ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অবস্থান

সরকার দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে—

“ভারতীয় উৎসের বিদেশি খেলোয়াড়দের দলে নেওয়া হলে দেশীয় খেলোয়াড়রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের খেলোয়াড়দের যথেষ্ট সুযোগ, তহবিল এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে।”

Advertisements

ঠাকুর বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের TOPS (Target Olympic Podium Scheme) এর মতো উদ্যোগ ইতিমধ্যেই বহু প্রতিভাকে প্রস্তুত করছে। পাশাপাশি প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশনকে স্বাধীনভাবে খেলোয়াড়দের বিদেশে পাঠানো, আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মানোন্নয়নের কাজ আরও বাড়াতে হবে।

National Sports Governance Act: পরিবর্তনের নতুন দিগন্ত

২০২৫ সালে সংসদে পাশ হওয়া National Sports Governance Act দেশের ক্রীড়া প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ঠাকুর মনে করেন—

➡ এই আইন ক্রীড়া ফেডারেশনে স্বচ্ছতা বাড়াবে

➡ একক আধিপত্য ভেঙে গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাড়বে

➡ খেলোয়াড়দের সুযোগ বাড়বে

➡ দেশব্যাপী গ্রাসরুটসে নতুন প্রতিভা উঠে আসবে

ঠাকুরের মতে, ভারতের নতুন শিক্ষা নীতি ও খেলাধুলা নীতি—দুটিই আগামী দিনে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে।

ফুটবলে দেশীয় প্রতিভা বনাম বিদেশি খেলোয়াড়

ভারতে ফুটবল সবসময় বড় সম্ভাবনার খেলা হিসেবে বিবেচিত হলেও, আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য তেমন দেখা যায় না। অনেকেই মনে করেন PIO/OCI খেলোয়াড় থাকলে জাতীয় দল দ্রুত উন্নতি করতে পারে।

কিন্তু ঠাকুরের কথায়—

➡ দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী হতে হলে দেশীয় খেলোয়াড়দের উন্নতি করতেই হবে

➡ বিদেশি খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করলে মূল সমস্যার সমাধান হবে না

➡ গ্রাসরুট এবং একাডেমি স্তরে বিনিয়োগই ভারতের ফুটবলের ভবিষ্যৎ

অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্য নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে—PIO/OCI খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি কি দরকার? নাকি দেশীয় প্রতিভাকেই গড়ে তোলা উচিত?

সরকারের অবস্থান এবং ক্রীড়া নীতির দিক থেকে যেটা স্পষ্ট—

➡ বিদেশি উৎসের প্রতিভা নয়, ভারতীয় খেলোয়াড়দের উন্নত করাই দেশের ক্রীড়ার মূল লক্ষ্য।

এখন দেখার বিষয়—বিভিন্ন ফেডারেশন, বিশেষ করে AIFF, এই অবস্থান কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।