ফিফার (FIFA) প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস চেম্বার কলকাতার ময়দানের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব মহামেডান স্পোর্টিংকে (Mohammedan SC) তাদের প্রাক্তন কোচ আন্দ্রে চেরনিশভের (Andrey Chrenyshov) বকেয়া (Dues) পাওনা আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ পালন না করলে আগামী দিনে ক্লাবের উপর একাধিক ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ফিফার প্রধান আইন ও সম্মতি কর্মকর্তা এমিলিও গার্সিয়া সিলভেরোর নেতৃত্বে জারি করা এই আদেশে বলা হয়েছে, ‘প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস অ্যান্ড ট্রান্সফার রেগুলেশন’র অ্যানেক্স ২-এর অনুচ্ছেদ ৮ অনুযায়ী, নির্দেশ জারির ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পাওনা (সুদসহ) পরিশোধ না হলে, মহামেডান স্পোর্টিংকে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনও নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।’
এই নিষেধাজ্ঞা সর্বাধিক তিনটি পূর্ণ ও টানা নিবন্ধন সময়কাল পর্যন্ত চলতে পারে। এরপরও বকেয়া অপরিশোধিত থাকলে, বিষয়টি ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে, যারা আরও কঠোর শাস্তি ঘোষণা করতে পারে। সাদা-কালো জায়ান্টসকে গত ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে বকেয়া থাকা বেতন পরিশোধ করতে এবং চুক্তি ভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্দ্রে চেরনিশভ, যিনি প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার ডিফেন্ডার, তিনি গত ২৯ জানুয়ারি বেতন না পাওয়ার কারণে পদত্যাগ করেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, “একজন পেশাদার হিসেবে, আমি তিন মাস ধরে বেতন ছাড়া কাজ করতে পারি না। এই সিদ্ধান্ত আমি চোখের জলে নিয়েছি। কিন্তু এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ক্লাবের ব্যবস্থাপনা।” ফিফার এই আদেশ গত ৩০ মে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের হাতে এখন এক মাসেরও কম সময় রয়েছে বকেয়া মেটানোর জন্য।
মস্কো থেকে জাতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চেরনিশভ বলেন, “আমি আশা করি তারা আমার পাওনা পরিশোধ করবে, কারণ এই নির্দেশ ফিফার পক্ষ থেকে এসেছে, অন্য কোনও অফিস থেকে নয়। যদি তারা না দেয়, তাহলে ক্লাবকে পরিণতি ভোগ করতে হবে, কারণ নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে না।”
চেরনিশভের নেতৃত্বে মহামেডান স্পোর্টিং ২০২৩-২৪ আই-লিগ জিতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) উঠেছিল। তিনি বলেন, “আমি ভারতীয় ফুটবল খুব পছন্দ করি এবং সেখানে আমার সময় উপভোগ করেছি। মহামেডানের সঙ্গে আমরা দুর্দান্ত কাজ করেছি। আমি আমার গুণমান জানি, এবং যদি কোনও ক্লাব ভালো প্রস্তাব নিয়ে আসে, আমি তৎক্ষণাৎ ভারতে ফিরে আসব। আইএসএল ছিল একটি অভিজ্ঞতা; খুব ভালো ফুটবল, দারুণ সংগঠন।”
রুশ কোচ মহামেডানে তিন বছর কাটিয়েছেন, ক্লাবকে আই-লিগ থেকে আইএসএলে নিয়ে গিয়েছিলেন। আইএসএলে প্রথম মরসুমে দল প্রতিশ্রুতিময়ভাবে শুরু করলেও অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে তারা লিগের তলানিতে শেষ করে। তিনি বলেন, “এটি খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল। শুরুতে ভালো বেতন, ভালো থাকার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বেতন না পেয়ে খেলোয়াড়রা অসন্তুষ্ট হয়। আমার দলের খেলোয়াড়রা ছিল পরিবারের মতো, আমরা একসঙ্গে শক্ত ছিলাম। কিনি, যখন বেতন কয়েক মাস ধরে বন্ধ ছিল, তখন তা আর সহ্য হয়নি। খেলোয়াড়রা আমাকে বলেছিল, তারা দুঃখিত, তারা আর প্রশিক্ষণে আসতে পারছে না।”
এই ঘটনা মহামেডান স্পোর্টিংয়ের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। ক্লাব এখন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে আগামী মরসুমে দল গঠনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হবে। চেরনিশভের মতো অভিজ্ঞ কোচের অভিযোগ এবং ফিফার কড়া নির্দেশ ক্লাবের ব্যবস্থাপনার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ভক্তদের আশা, মোহামেডান তাদের ঐতিহ্যের মর্যাদা রক্ষা করে এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।