দ্রাজিচ-সিভেরিওর গোলে এএফসি মঞ্চে এফসি গোয়ার উড়ান

১৩ আগস্ট এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টু-এর (AFC Champions League 2) প্রিলিমিনারি রাউন্ডে ওমানের শক্তিশালী ক্লাব আল সীবের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের রোমাঞ্চকর জয়ের মাধ্যমে এফসি গোয়া…

FC Goa Triumphs Over Al Seeb in AFC Champions League 2 Thriller: Drazic, Siverio, and Marquez Shine

১৩ আগস্ট এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টু-এর (AFC Champions League 2) প্রিলিমিনারি রাউন্ডে ওমানের শক্তিশালী ক্লাব আল সীবের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের রোমাঞ্চকর জয়ের মাধ্যমে এফসি গোয়া (FC Goa vs Al Seeb) তাদের এশিয়ান মঞ্চে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছে। জওহরলাল নেহরু ফতোরদা স্টেডিয়ামে মানোলো মার্কুয়েজের নেতৃত্বে গৌড়রা এই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। এই জয়ের ফলে এফসি গোয়া মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পাশাপাশি এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টু-এর গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় ভারতীয় ক্লাব হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এই ম্যাচে নতুন সই করা খেলোয়াড়দের দাপট, মার্কুয়েজের কৌশলগত দক্ষতা এবং দলের প্রতিরক্ষামূলক স্থিতিশীলতা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সীমিত প্রস্তুতি, অসীম সাফল্য
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টু-এর এই ম্যাচের জন্য এফসি গোয়ার প্রস্তুতি ছিল সীমিত। বর্ষার কারণে তাদের প্রস্তুতির সময় কমে গিয়েছিল, এবং দলটি ডুরান্ড কাপে অংশ নিতে পারেনি। তারা ডেম্পো এসসি’র উন্নয়নমূলক দল, সালগাঁওকার এফসি এবং ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিরুদ্ধে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। এই ম্যাচগুলো আল সীবের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের চ্যালেঞ্জের তুলনায় অনেকটাই সহজ ছিল। তবুও, মানোলো মার্কুয়েজের নেতৃত্বে গৌড়রা এই প্রতিকূলতাকে জয় করে এশিয়ান মঞ্চে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছে।

   

নতুন সইয়ের ঝলক
এই ম্যাচে এফসি গোয়ার নতুন সই করা খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। পল মোরেনো, ডেভিড টিমোর এবং জাভিয়ের সিভেরিও প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন এবং তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। পল মোরেনো প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছেন, গোলরক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মিডফিল্ডে ডেভিড টিমোর দুর্দান্ত ছাপ রেখেছেন, এবং স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জাভিয়ের সিভেরিও ৫২ মিনিটে বোর্হা হেরেরার ক্রস থেকে হেড করে দ্বিতীয় গোলটি করেছেন। এই গোলটি এফসি গোয়ার জয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

দ্রাজিচের দাপট
ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ছিলেন সার্বিয়ান উইঙ্গার দেজান দ্রাজিচ। ২৪ মিনিটে তিনি দলকে এগিয়ে দেন একটি অসাধারণ চিপ গোলের মাধ্যমে। আল সীবের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে তিনি বলটি জালে জড়ান। দ্রাজিচ শুধু গোলই করেননি, তিনি আল সীবের প্রতিরক্ষাকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন। তাঁর দ্রুতগতির রান, ড্রিবলিং এবং প্রতিরক্ষায় সহায়তা করার ক্ষমতা তাঁকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষায় ফিরে এসে আল সীবের আক্রমণকারীদের রুখে দিয়েছেন।

মার্কুয়েজের কৌশলগত দক্ষতা
মানোলো মার্কুয়েজ এই ম্যাচে তাঁর কৌশলগত দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। এফসি গোয়া সাধারণত বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষকে হতাশ করার জন্য পরিচিত। তবে, এই ম্যাচে তাঁরা বেশিরভাগ সময় বল দখলে না থাকলেও ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলে মাঝমাঠকে কম্প্যাক্ট রেখেছেন। এই কৌশল আল সীবকে বাইরের দিকে খেলতে বাধ্য করেছে, যা গোয়ার প্রতিরক্ষার জন্য সুবিধাজনক ছিল। মার্কুয়েজের এই কৌশলগত পরিবর্তন এবং খেলোয়াড়দের অক্লান্ত পরিশ্রম এই জয়ের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

Advertisements

ইনজুরির আশঙ্কা
ম্যাচের মধ্যে গোয়ার কয়েকজন খেলোয়াড় ইনজুরির সমস্যায় পড়েছিলেন। আকাশ সাংওয়ান এবং বোর্হা হেরেরা মাঠে পড়ে গিয়েছিলেন, যা সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। হেরেরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও, সাংওয়ানকে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয়। বাঁ-প্রান্তের এই ডিফেন্ডার দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাঁর ইনজুরি গোয়ার আসন্ন মরসুমের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। জয় গুপ্তার প্রস্থানের পর বাঁ-প্রান্তে গোয়ার বিকল্প খেলোয়াড়ের অভাব এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ম্যাচের হাইলাইটস
ম্যাচের শুরুতে আল সীব আক্রমণাত্মকভাবে খেললেও গোয়ার প্রতিরক্ষা তাদের সুযোগ সীমিত করে রেখেছিল। ২৪ মিনিটে দ্রাজিচের গোল গোয়াকে এগিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধে সিভেরিওর হেডার দলের ব্যবধান বাড়ায়। আল সীব ৬০ মিনিটে নাসের আল-রাওয়াহির গোলের মাধ্যমে ব্যবধান কমালেও, গোয়ার শক্তিশালী প্রতিরক্ষা তাদের সমতায় ফিরতে দেয়নি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আল সীবের চাপ সত্ত্বেও গোয়া তাদের ঐক্য এবং প্রতিরক্ষার দৃঢ়তার মাধ্যমে জয় নিশ্চিত করেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই জয়ের মাধ্যমে এফসি গোয়া এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টু-এর গ্রুপ পর্বে পৌঁছেছে, যেখানে তারা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। ১৫ই আগস্ট গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে গোয়া তাদের প্রতিপক্ষ জানতে পারবে। এই জয় ভারতীয় ফুটবলে একটি আশার আলো জাগিয়েছে, বিশেষ করে আইএসএলের অনিশ্চয়তার মধ্যে। মানোলো মার্কুয়েজের নেতৃত্বে এফসি গোয়া এশিয়ান মঞ্চে আরও সাফল্যের জন্য প্রস্তুত।