ভারতীয় ফুটবলের সংকট নিয়ে পুস্কুরের বিস্ফোরক মন্তব্য

এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ (AFC Asian Cup 2027 Qualifier) যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে হংকংয়ের (Hong Kong) কাছে ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team ) পরাজয়ে গ্রুপের…

Indian Football Team vs Hong Kong

এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ (AFC Asian Cup 2027 Qualifier) যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে হংকংয়ের (Hong Kong) কাছে ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team ) পরাজয়ে গ্রুপের তলানিতে ঠেলে দিয়েছে এবং একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মানোলো মার্কুয়েজের অন্তর্গত ১৮ মাসে ১৬ ম্যাচ খেলে ভারতীয় দল মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে, সেটিও ঘরের মাঠে দুর্বল মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। এই হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দায়ভারের খেলা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ সমর্থক থেকে আইএসএল ক্লাবের মালিকরা সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থা (AIFF) অদক্ষতার দিকে আঙুল তুলছেন, অন্যরা খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করছেন।

এফসি গোয়ার (FC Goa) সিইও রবি পুস্কুর (Ravi Puskur) এই পরিস্থিতির জন্য এক “জরাজীর্ণ ব্যবস্থা”কে দায়ী করেছেন, যেখানে সবকিছু প্রভাব, পক্ষপাতিত্ব এবং ভঙ্গুর অহংকারের ওপর চলে। তিনি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরও রেহাই দেননি, যাদের অধিকাংশই উচ্চ বেতন পান। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে পুস্কুর বলেন, “ক্লাবগুলো, আমার নিজের ক্লাবসহ, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খেলোয়াড়দের বেতন বাড়িয়েছে। আমরা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছি, জেনেও যে এটি টেকসই নয়। তারপর আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হলে আমরা অবাক হই। আমরাই এই মায়া তৈরি করেছি। এটা নয় যে তাদের সম্ভাবনা নেই; বরং তাদের সেই সম্ভাবনাকে প্রসারিত করার কারণ দেওয়া হয়নি। আমরা খেলোয়াড়দের আরাম দিয়েছি, আর তাতে তাদের ধার নষ্ট হয়েছে।”

   

পুস্কুর এজেন্টদেরও সমস্যার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “তারা খেলোয়াড়দের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নষ্ট করছে, শুধু নিজেদের পকেট ভরার জন্য। এখন আর শুধু বড় চুক্তির ব্যাপার নয়, খেলোয়াড়রা তাদের খেলা হারাচ্ছে। উপার্জনের দিকে বেশি মনোযোগ, উন্নতির দিকে কম।” মিডিয়ার ভূমিকাও তিনি সমালোচনা করেছেন, বলেছেন, “মিডিয়া সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে কঠিন প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।” সমর্থকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ক্লাবের জয় চায়, কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।

পুস্কুর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “যদি কোনও খেলোয়াড় অযৌক্তিক টাকা দাবি করে, তাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আপনারা কি আমাদের সমর্থন করবেন? আপনারা কি আমাদের উপর ভরসা রাখবেন যে আমরা আরও ভিত্তিবদ্ধ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খেলোযাড় খুঁজে আনব? আপনাদের সমর্থন থাকলে আমরা ঠিক তাই করব। জয়ের সময়ই নয়, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও আমাদের এই সমর্থন প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “ফুটবল ক্লাব হিসেবে আমরা ভারতীয় ফুটবলের দৈনন্দিন কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। আমাদের একাডেমি তৈরি করতে হয়, দল চালাতে হয়, কর্মী নিয়োগ করতে হয়, স্থানীয় ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু জাতীয় ফুটবল নীতি গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আসন দেওয়া হয় না।”

Advertisements

ভারতীয় ফুটবলের এই সংকটময় মুহূর্তে পুস্কুরের মতো কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। তবে সমস্যার মূলে রয়েছে সিস্টেমের ত্রুটি, যেখানে ক্লাব, ফেডারেশন, খেলোয়াড়, এজেন্ট এবং মিডিয়ার সম্মিলিত দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে কেবল অভিযোগ নয়, সমন্বিত সংস্কার প্রয়োজন। ক্লাবগুলোকে টেকসই বিনিয়োগ, খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য প্রণোদনা এবং ফেডারেশনকে স্বচ্ছ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার দিকে এগোতে হবে। সমর্থকদেরও কেবল জয়ের জন্য উল্লাস নয়, পরিবর্তনের জন্য সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে ভারতীয় ফুটবল নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।