ইউরোপিয়ান ফুটবলের (European Football) মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনাল (Nations League Final) ম্যাচে পর্তুগাল (Portugal) ও স্পেনের (Spain) রোমাঞ্চকর লড়াই শেষ হয় এক মর্মান্তিক ঘটনায়। খেলার উত্তেজনা আর গ্যালারির উল্লাসকে ছাপিয়ে যায় এক করুণ বাস্তবতা। দ্বিতীয় সারির গ্যালারি থেকে পড়ে এক দর্শকের মৃত্যু (Fan Dies)। এই ঘটনা শুধু স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শক নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বকেই শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে।
রবিবার জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত আলিয়্যাঞ্জ অ্যারেনায় আয়োজিত ফাইনাল ম্যাচটিতে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ছিল গ্যালারি। পর্তুগাল ও স্পেনের হাইভোল্টেজ ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে ৫-৩ ব্যবধানে জয় লাভ করে পর্তুগাল। এই জয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগের শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা (Cristiano Ronaldo)। তবে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ট্রফি জয় ও উল্লাসের আবহকেই ম্লান করে দেয়।
উয়েফার পক্ষ থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, খেলা চলাকালীন সময় এক দর্শক হঠাৎ করে গ্যালারির ওপরের সারি থেকে নিচে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মী ও চিকিৎসা সহায়তাকারীরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে প্রচেষ্টার সবটুকু কাজে আসেনি। চিকিৎসকরা সরকারিভাবে ওই দর্শকের মৃত্যুর ঘোষণা দেন।
উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়, “মিউনিখ অ্যারেনায় একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মেডিকেল টিমের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও, দুঃখজনকভাবে ওই ব্যক্তি আর বেঁচে ছিলেন না। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
দুর্ঘটনার পর খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ এবং দর্শকরাও নিজেদের আবেগ গোপন রাখতে পারেননি। স্পেন দলের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “একজন সমর্থকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমি তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাতে চাই। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনে আসলেই কী গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবল আনন্দের, কিন্তু জীবনের মূল্য তার চেয়ে অনেক বড়।”
এদিকে পর্তুগালের হয়ে ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিত হন নুনো মেন্ডেস। জয়োল্লাসের মুহূর্তেও তিনি নিহত দর্শকের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন। মেন্ডেস বলেন, “আজকের জয় আমাদের জন্য বিশেষ হলেও এই মর্মান্তিক ঘটনা সব কিছু ছাপিয়ে গেছে। আমি নিহত ভক্তের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ফুটবল আমাদের ভালোবাসা, কিন্তু মানুষের জীবন সব কিছুর ঊর্ধ্বে।”
দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনায় স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। মিউনিখের আলিয়্যাঞ্জ অ্যারেনা বিশ্বের আধুনিক স্টেডিয়ামগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত হলেও এ ধরনের দুর্ঘটনা দেখিয়েছে, সর্বোচ্চ সতর্কতার পরও নিরাপত্তার ঘাটতি থাকতে পারে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি ব্যবস্থা, দর্শক চলাচলের পথ ও নিরাপত্তা রেলিং যথাযথ ছিল কি না, তা এখন আলোচনার বিষয়।
তবে উয়েফা এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্তের ঘোষণা দেয়নি। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা জানায়, ঘটনার সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত অনেক দর্শক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, গ্যালারির ওপরের সারিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, যা এমন মর্মান্তিক ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যেও পর্তুগাল তাদের জয় উদযাপন করেছে সংযতভাবে। মাঠে ট্রফি হাতে নিয়েও খেলোয়াড়দের চোখেমুখে দেখা গেছে বিষাদের ছায়া।
একটি আন্তর্জাতিক ফাইনালে এমন একটি দুর্ঘটনা শুধু স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনাই নয়, গোটা খেলাধুলার জগতকেই মনে করিয়ে দিয়েছে—সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও মানবিকতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আয়োজনই পূর্ণতা পায় না। উল্লাস আর বেদনার এই সন্ধিক্ষণে ফুটবল আজ হারিয়েছে তার এক গর্বিত ভক্তকে।