আবার ব্যর্থ ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। মাত্র ৬ বল খেলে রান না পেয়েই ফিরতে হল তাকে। ২০২৫ IPL এ সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড় ঋষভ। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ২৭ কোটির বিনিময়ে তাকে নির্বাচন করেছেন। টুর্নামেন্টের তৃতীয় দিনে দিল্লী ক্যাপিটালসের বিনিময়ে খেলতে নেমে ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করে লখনউ সুপার জায়ান্ট। মিচেল মার্শের ঝোড়ো অর্ধশতরান করে ফায়ার যাওয়ার পরেই পিচে আসেন ঋষভ। প্রথম থেকেই তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো কোথাও সেই পুরোনো আগ্রাসী মনোভাবের অভাব রয়েছে। শেষে হলও তাই মাত্র ৬ বলে কোনো রান রান না করেই কুলদীপ যাদবের বলে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হলো তাকে।
আইপিএল ২০২৫-এর তৃতীয় দিনে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ঋষভ পন্থের উপর ভরসা রেখে ম্যাচ শুরু করেছিল লখনউ। কিন্তু প্রত্যাশার বিপরীতে মাত্র ৬ বল খেলে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছে তাকে। এই ব্যর্থতায় হতাশ হয়েছেন লখনউয়ের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং সমর্থকরা, যিনি ২৭ কোটি টাকার বিনিময়ে ঋষভকে দলে ভিড়িয়েছিলেন।
ম্যাচের শুরুটা দারুণ হয়েছিল লখনউয়ের জন্য। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার মিচেল মার্শ ঝড়ো গতিতে রান তুলতে শুরু করেন। মাত্র ২১ বলে ৫০ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তিনি লখনউকে মজবুত অবস্থানে পৌঁছে দেন। মার্শের ব্যাট থেকে আসে ৭২ রান, যা দলের জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে দেয়। এরপর নিকোলাস পুরানও আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন। তিনি এক ওভারে ত্রিস্তান স্টাবসের কাছ থেকে ২৮ রান তুলে নেন এবং দ্রুত ৫০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে মিচেল স্টার্কের বলে ৭৫ রানে তিনি আউট হয়ে যান। এই দুই ব্যাটসম্যানের ঝোড়ো ইনিংসে লখনউ ১৫ ওভারে ১৭০/৪-এ পৌঁছে যায়।
কিন্তু এরপরই মাঠে নামেন ঋষভ পন্থ। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল, তিনি তাঁর পুরোনো আগ্রাসী রূপে ফিরে এসে দলকে আরও বড় স্কোরের দিকে নিয়ে যাবেন। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সেই পুরোনো ঝড়ো মনোভাবের অভাব রয়েছে। প্রথম থেকেই তিনি সংগ্রাম করছিলেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লি ক্যাপিটালসের স্পিনার কুলদীপ যাদবের বলে তিনি আউট হন। মাত্র ৬ বলে কোনও রান না করে তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। এই ব্যর্থতা লখনউয়ের মধ্যম গতির ইনিংসে একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়।
দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত প্রথমে ভুল মনে হলেও, ঋষভের ব্যর্থতা এবং পরবর্তীতে কুলদীপের বোলিং দিল্লিকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। কুলদীপ এদিন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। তিনি আয়ুষ বাদোনিকে মাত্র ৪ রানে আউট করে লখনউয়ের রানের গতি কমিয়ে দেন। এছাড়া, তরুণ লেগ স্পিনার বিপ্রজ নিগমও তার আইপিএল অভিষেকে প্রথম উইকেট তুলে নেন, যদিও পরের ওভারে তিনি ২৫ রান খরচ করেন।
এই ম্যাচে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল কে এল রাহুলের অনুপস্থিতি। জানা গেছে, তিনি স্ত্রী অথিয়া শেট্টির সঙ্গে থাকতে মুম্বইয়ে গেছেন, কারণ তারা তাদের প্রথম সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। ফলে দিল্লির হয়ে তিনি এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। অন্যদিকে, লখনউয়ের চারজন প্রধান ভারতীয় পেসার—মায়াঙ্ক যাদব, আবেশ খান, আকাশ দীপ এবং মোহসিন খান—চোটের কারণে দলের বাইরে রয়েছেন। এই চারজনের জন্য নিলামে মোট ৩৪.৭৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল। তাদের অনুপস্থিতিতে লখনউয়ের বোলিং লাইনআপ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আরো দেখুন মেঘের দেশে দুই ‘টাইগার্স’ লড়াইয়ের সম্ভাব্য একাদশ এবং ফ্ৰিতে কোথায় ম্যাচ দেখেবন
ঋষভ পন্থের এই ব্যর্থতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ২৭ কোটি টাকার খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স কেউ আশা করেননি। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কি চাপ সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন? লখনউয়ের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা তাকে অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ করে বলেছিলেন, ঋষভ আইপিএলের ইতিহাসে সেরা অধিনায়ক হবেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই তার এই পারফরম্যান্স সেই প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি।
দিল্লি ক্যাপিটালসের জন্য এই ম্যাচে মিচেল স্টার্ক এবং জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। স্টার্ক পুরানকে আউট করে লখনউয়ের গতি ভাঙেন, আর ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ব্যাট হাতে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখার সম্ভাবনা দেখাচ্ছেন। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত দিল্লি জয়ের পথে এগিয়ে থাকলেও, ঋষভের ব্যর্থতা লখনউয়ের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনা আইপিএল ২০২৫-এর প্রথম বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ঋষভ কি এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ফিরে আসবেন, নাকি লখনউয়ের ২৭ কোটির বিনিয়োগ বৃথা যাবে—এই প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ের হাতে।