‘ক্রিকেট নিলাম একটি জুয়া’, বললেন প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ২০২৫ (IPL 2025) নিলামের কয়েকদিন আগে, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বিক্রমজিত সেন (Justice Vikramjit Sen) মন্তব্য করেছেন যে ক্রিকেটারের ওপর বিপুল পরিমাণ…

Justice Vikramjit Sen

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ২০২৫ (IPL 2025) নিলামের কয়েকদিন আগে, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বিক্রমজিত সেন (Justice Vikramjit Sen) মন্তব্য করেছেন যে ক্রিকেটারের ওপর বিপুল পরিমাণ টাকা নিলামে বাজি ধরা আসলে ‘জুয়া’ খেলার মতো। তিনি বলেন, “আপনি যখন দেখবেন ক্রিকেটারদের নিলাম, তখন তা আসলে এক ধরনের জুয়া। আপনি জানেন না তারা কিভাবে খেলবে, শুধুমাত্র কিছু পরিসংখ্যান দেয়া হয়, তারপর আপনি বিশাল অঙ্কের বাজি ধরেন। যদি এটি জুয়া না হয়, তবে কী?”

বিক্রমজিত সেন মঙ্গলবার ভারতের ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে ‘অনলাইন গেমিং ইন ইন্ডিয়া – টেকনোলজি, পলিসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। এই বইটি টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপ প্রকাশ করেছে, এবং এতে সহ-সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুডিশিয়াল সায়েন্সেসের অধ্যাপক লাভলি দাসগুপ্ত এবং শামীক সেন।

   

বিক্রমজিত সেন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও বলেন, যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, এবং সেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ট্যাক্সেশন এবং গেম অফ চ্যান্স এবং গেম অফ স্কিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের অভাব। অনেক গেম অপারেটর যারা ক্রিকেটের মত জনপ্রিয় গেমের সাথে জড়িত, তারা এই সমস্যা ব্যবহার করে নিজেদের লাভের জন্য।

আইপিএল নিলাম: গেম অফ চ্যান্স?
আগামী ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইপিএল ২০২৫-এর নিলাম। এই নিলামটি হবে দ্বিতীয়বার, যখন নিলাম ভারতের বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের আইপিএল নিলামও দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নিলামে ২০০টিরও বেশি স্লটের জন্য খেলোয়াড় নির্বাচন করা হবে এবং ৭০টি বিদেশি খেলোয়াড়কে কেনা যেতে পারে। তবে, আইপিএল নিলামগুলোর সঙ্গেও কিছু বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে বড় অঙ্কের বাজির ক্ষেত্রে।

এটি একটি পরিচিত সত্য যে, অনেক সময় আইপিএল নিলামে যারা সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছেন, তারা মাঠে তেমন পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ, যুবরাজ সিং, ক্রিস মরিস, বেন স্টোকস এবং মিচেল স্টার্কের মতো খেলোয়াড়রা বড় অঙ্কের নিলামে অংশ নিলেও, তাদের পারফরম্যান্স কখনোই তাতে সমান ছিল না।

বিক্রমজিত সেন বলেন, “এটি আসলে একটি জুয়া, যেখানে আপনি জানেন না একজন খেলোয়াড় কিভাবে খেলবে। এখানে কিছু পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে আপনাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে বলা হয়। যদি এটি জুয়া না হয়, তাহলে কি?”

অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি: উন্নতির পথে কিন্তু অদূরদর্শী নিয়ম
অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ভারতের অন্যতম দ্রুত উন্নতি করা সেক্টরগুলোর একটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির আয় প্রায় ২৩১ বিলিয়ন ইন্ডিয়ান রুপি পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে, যা প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন গেমিং বাজার, যেখানে ৫৫০ মিলিয়ন গেমার রয়েছেন।

তবে এই বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট নিয়মাবলি তৈরি করা হয়নি। দেশে বর্তমানে অনেক গেমিং অপারেটর তাদের ব্যবসায়িক নীতিমালা অনুযায়ী গেম অফ চ্যান্স এবং গেম অফ স্কিলের মধ্যে পার্থক্য না করেই অনলাইন গেমিং চালাচ্ছে। এতে আইনগত জটিলতা এবং উচ্চমাত্রার আসক্তির সমস্যাও বেড়েছে।

আইনজীবীদের বক্তব্য: সুনির্দিষ্ট নিয়মের অভাব
অনুষ্ঠানে ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল বিক্রমজিৎ ব্যানার্জি বলেন, “ভারত এখন এক ধরনের ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো নিয়ম নেই। আমরা যেটা দেখছি, সেটি হল, নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো স্পষ্ট বিধিমালা নেই এবং কর্পোরেট স্বার্থ কখনও-কখনও নিয়মের থেকে কম নিয়ন্ত্রণ চাইছে।”

এছাড়া, বিক্রমজিত সেন বলেন, “আজকাল যেসব মানুষ অনলাইন গেমিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই খেলার আসক্তি এবং আইনগত জটিলতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা ভারতের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি সমাধান করতে পারে না।”

গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এবং আইপিএল: চ্যালেঞ্জের মুখে ভবিষ্যৎ
আইপিএল এবং গেমিং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সম্পর্ক এখন খুবই জটিল। গেম অফ স্কিল এবং গেম অফ চ্যান্সের মধ্যে পার্থক্য ঠিকভাবে নির্ধারণ না করার কারণে একাধিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলাধুলার ক্ষেত্রে বড় বাজি ধরার সাথে সম্পর্কিত এই ধরনের সমস্যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইপিএল নিলামের মতো বড় বাজি ধরা খেলার মধ্যে আসলেই কি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত? বিক্রমজিত সেনের মতে, এটি একটি গেম অফ চ্যান্স, যেখানে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান এবং পূর্বানুমান দিয়ে বাজি ধরা হয়। সরকারের উচিত, গেমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্পষ্ট এবং কার্যকর নিয়মাবলি তৈরি করা, যাতে এই ধরনের গেমগুলোর আসক্তি এবং আইনগত সমস্যাগুলি কমিয়ে আনা যায়।

আইপিএল নিলাম এবং অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত
বিক্রমজিত সেনের বক্তব্য দেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এবং আইপিএল নিলামের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আইপিএল নিলামের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা সত্যিই কি এক ধরনের জুয়া? এবং অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম তৈরি না করা পর্যন্ত, এই সমস্যা কিভাবে সমাধান হবে? তা এখনো অজানা।