তিন দশক আগের কথা। মাত্র ১৯ বছর বয়সে, শচীন তেন্ডুলকর যখন ইয়র্কশায়ারের হয়ে প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে নামলেন। সেদিন গোটা ক্রিকেটবিশ্ব তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকে। তখন কাউন্টি ক্রিকেট ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের কেন্দ্রস্থলে। আজ, একই দলে রুতুরাজ গায়কওয়াড়ের নাম উঠে এলেও সেটি যেন এক প্রান্তিক খবরে পরিণত হয়েছে। তবে গায়কওয়াড় বা তাঁর মতো আরও অনেক ভারতীয় ক্রিকেটারের (Indian Cricket Team) জন্য, এই কাউন্টি ক্রিকেট (English County) এখনো বড় সুযোগ।
বর্তমানে ভারতীয় দলে জায়গা না পাওয়া বা দলে ফিরতে চাওয়া অনেক ক্রিকেটার ইংল্যান্ডে ছোট ছোট কাউন্টি চুক্তি করে খেলছেন। যেমন, তিলক বর্মা খেলছেন হ্যাম্পশায়ারে, ইশান কিষাণ খেলছেন নর্থ্যাম্পটনশায়ারে। ইউজবেন্দ্র চাহাল এবং খালিল আহমেদও যোগ দিচ্ছেন যথাক্রমে নর্থ্যাম্পটন এবং এসেক্সে। ভারতে বর্ষাকালে যখন তেমন খেলা হয় না, তখন এই ইংলিশ কাউন্টি চুক্তিগুলি তাদের জন্য অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।
তিলক বর্মা বলেন, “মানুষ ভাবে আমি শুধুই টি-২০ খেলোয়াড়, কিন্তু আমি সবসময় বলি, আমি টেস্ট ক্রিকেটও খেলতে পারি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে নিজেকে প্রমাণ করার এটাই সুযোগ।” বর্মা তাঁর প্রথম ম্যাচেই শতরান করেন। ইশান কিষাণও দুইটি ম্যাচ খেললেও, একটিতে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে জাতীয় নির্বাচকদের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
বুমরাহকে নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ প্রাক্তন অধিনায়ক, এই বোলারকে খেলানোর দিলেন পরামর্শ
ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য টেস্ট দলে ঢোকার স্বপ্ন এখনো পূজ্য, কারণ বিসিসিআই তাদের বিদেশি টি-২০ লিগে খেলার অনুমতি দেয় না। ফলে, টেস্ট ক্রিকেটে জায়গা পাওয়াই অনেকের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান। সেখানেই কাউন্টি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা এক্সট্রা ক্রেডিট হিসেবে কাজ করে। যেমন সাই সুদর্শন, করুণ নায়ার নাম প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকর উল্লেখ করেছেন, যাঁদের কাউন্টি পারফরম্যান্স নির্বাচনে সাহায্য করেছে।
করুণ নায়ার স্মরণ করেন, “আমার প্রথম কাউন্টি ম্যাচে ২৫ বল পর্যন্ত শূন্য রানে ছিলাম। তখনই উপলব্ধি করি, ধৈর্য ধরলেই সফল হওয়া যায়।” সেই সিজনে তিনি সাত ম্যাচে ৪৮৭ রান করেন, যা তাঁর টেস্ট দলে ফিরে আসার ভিত্তি তৈরি করে।
আইপিএল সংযোগও কাউন্টি চুক্তি সহজ করে তোলে। যেমন, ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ল্যাঙ্কাশায়ারের সঙ্গে চুক্তির পেছনে ছিল ফিল সল্টের সুপারিশ। হ্যাম্পশায়ার দলে তিলক বর্মার সুযোগ এসেছে দিল্লি ক্যাপিটালসের সহ-মালিক জিএমআর গ্রুপের সাহায্যে।
প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল হয়তো অবসরের আগে কাউন্টিতে সুযোগ পেলে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারতেন। অভিমন্যু ঈশ্বরন ও সরফরাজ খানও বর্তমানে কাউন্টি খেলার জন্য উৎসুক, কারণ আইপিএলে সুযোগ না পেলেও টেস্ট ক্রিকেটের দরজা এখনও খোলা।
যেখানে প্রতিযোগিতা তীব্র, সেখানে রানজি ট্রফির পারফরম্যান্স যথেষ্ট না। কাউন্টি ক্রিকেট সেখানে এক বাড়তি মানপত্র—বিদেশি পরিবেশে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ, নির্বাচকদের মনে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য, কাউন্টি এখনও সেই ক্লাসরুম, যেখানে তাঁরা নিজের খেলা নিখুঁত করে টেস্ট দলে ঢোকার লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।
English County provides extra credit for Indian Cricket Team players