ইংল্যান্ডের অফ-স্পিনার শোয়েব বশির (Shoaib Bashir) ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন। লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ২২ রানের রোমাঞ্চকর জয়ের পর এই খবর ইংল্যান্ড দলের জন্য বড় ধাক্কা। ২১ বছর বয়সী বশির তৃতীয় দিনে রবীন্দ্র জাদেজার শক্তিশালী ড্রাইভ ফিরতি ক্যাচ ধরার চেষ্টায় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে ফ্র্যাকচারের শিকার হন। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়েছে, তিনি এই সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ইসিবি এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইংল্যান্ডের পুরুষ দলের স্পিনার শোয়েব বশির বাঁ হাতের আঙুলে ফ্র্যাকচারের কারণে ভারতের বিপক্ষে রথসে টেস্ট সিরিজের বাকি অংশ থেকে ছিটকে গেছেন। তিনি এই সপ্তাহে অস্ত্রোপচার করবেন। ইংল্যান্ড আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওল্ড ট্রাফোর্ডে চতুর্থ টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করবে।”
বশির ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫.৫ ওভার বল করেছিলেন, তবে শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সিরাজের উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ১৯৩ রানের লক্ষ্য রক্ষায় স্মরণীয় জয় এনে দেন। এই জয়ের ফলে ইংল্যান্ড সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। চতুর্থ টেস্ট ২৩ জুলাই ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে শুরু হবে। এদিকে, ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিল তাঁর দলের লড়াইয়ের জন্য গর্ব প্রকাশ করলেও, একটি পঞ্চাশ রানের জুটির অভাব এবং ঋষভ পান্তের প্রথম ইনিংসে রান-আউটের জন্য আক্ষেপ করেছেন।
বশিরের আঘাত ও লর্ডসে বীরত্ব
তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে, ভারতের প্রথম ইনিংসের ৭৮তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার শক্তিশালী ড্রাইভ ধরার চেষ্টায় বশির তাঁর বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে আঘাত পান। এটি প্রাথমিকভাবে স্থানচ্যুতি বলে মনে হলেও পরে ফ্র্যাকচার নিশ্চিত হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ মাঠ ছেড়ে চলে যান এবং বাকি ইনিংসে ফিল্ডিং করেননি। তবে, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন এবং ৯ বলে ২ রান করেন। পঞ্চম দিনে, আঙুলে ভারী ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে বল করতে ফিরে আসেন এবং মোহাম্মদ সিরাজের উইকেট নিয়ে ম্যাচের ফল নির্ধারণ করেন। তাঁর বলে সিরাজের ডিফেন্সিভ শট ক্রিজে ফিরে লেগ স্টাম্পে আঘাত করে, যা ইংল্যান্ডের জন্য উল্লাস এবং ভারতের জন্য হতাশার মুহূর্ত ছিল।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস বশিরের এই সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “২১ বছর বয়সে এত গুরুতর আঘাত নিয়ে মাঠে নামা এবং ব্যাটিং করা অসাধারণ। তিনি আমাদের জন্য শেষ উইকেটটি তুলে নিয়েছেন, এটা যেন তারকারা লিখে দিয়েছিল।” তবে, বশিরের এই আঘাত তাঁকে সিরিজের বাকি দুটি টেস্ট থেকে দূরে রাখবে, যা ইংল্যান্ডের স্পিন বিভাগের জন্য বড় ক্ষতি।
ইংল্যান্ডের প্রতিস্থাপনের বিকল্প
বশিরের অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ডের স্পিন বিভাগে পরিবর্তন আনতে হবে। সম্ভাব্য প্রতিস্থাপন হিসেবে জ্যাক লিচ, লিয়াম ডসন, রেহান আহমেদ, এবং জ্যাক কারসনের নাম উঠে আসছে। জ্যাক লিচ, বশিরের সোমারসেট সতীর্থ, ৩৯টি টেস্টে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বাঁ-হাতি স্পিনার। তিনি গত বছর ভারত সফরে আঘাতের কারণে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, তবে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং স্টোকসের পছন্দ তাঁকে শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।
লিয়াম ডসন, আরেকজন বাঁ-হাতি স্পিনার, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরে এসে ৪/২০ ফিগার নিয়েছেন। তিনি ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে পারেন, যা ক্রিস ওকসের ফর্মের অভাবে ইংল্যান্ডের জন্য আকর্ষণীয় বিকল্প। রেহান আহমেদ, একজন লেগ-স্পিনার, ওল্ড ট্রাফোর্ডের স্পিন-সহায়ক পিচে কার্যকর হতে পারেন। জ্যাক কারসন, সাসেক্সের তরুণ অফ-স্পিনার, আরেকটি সম্ভাবনা, তবে তাঁর টেস্ট অভিজ্ঞতার অভাব একটি চ্যালেঞ্জ।
ইংল্যান্ডের আরেকটি বিকল্প হতে পারে জ্যাকব বেথেল, একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার, যিনি বাঁ-হাতি স্পিন করেন। তবে, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তাঁকে ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করছেন, স্পিনার হিসেবে নয়। এছাড়াও, ইংল্যান্ড জো রুটের অফ-স্পিনের উপর নির্ভর করে একটি পুরোপুরি পেস আক্রমণ নিয়ে খেলার কথা ভাবতে পারে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা মাথায় রেখে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও সিরিজের অবস্থা
ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিল লর্ডসে তাঁদের লড়াইয়ের জন্য গর্ব প্রকাশ করেছেন, তবে দুটি বিষয়ে আক্ষেপ করেছেন। প্রথমত, প্রথম ইনিংসে ঋষভ পান্তের রান-আউট, যা ভারতকে ৭০-৮০ রানের লিড থেকে বঞ্চিত করেছিল। দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় ইনিংসে একটি পঞ্চাশ রানের জুটির অভাব। গিল বলেন, “আমরা ১৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেটে বেশিরভাগ সময় আধিপত্য বিস্তার করেছি, কিন্তু খারাপ সেশনগুলি এতটাই খারাপ ছিল যে আমরা দুটি ম্যাচ হেরেছি।” রবীন্দ্র জাদেজার ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস ভারতকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল, তবে সিরিজের স্কোরলাইন ২-১ এ ইংল্যান্ডের পক্ষে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বশিরের অনুপস্থিতি ইংল্যান্ডের স্পিন বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ২০২৪ সালের ভারত সফর থেকে ইংল্যান্ডের প্রধান স্পিনার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, এবং তাঁর ১৯ টেস্টে ৬৮ উইকেট তাঁর সম্ভাবনার প্রমাণ। তবে, এই সিরিজে তাঁর ১০ উইকেট ৫৪.১০ গড়ে এসেছে, যা কিছুটা হতাশাজনক। তাঁর আঘাত ইংল্যান্ডকে তাঁদের বোলিং কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে, বিশেষ করে ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং দ্য ওভালের স্পিন-সহায়ক পিচে।
ভারতের জন্য, বশিরের অনুপস্থিতি একটি সুযোগ হতে পারে। তবে, তাদের ব্যাটিং লাইনআপকে আরও স্থিতিশীল করতে হবে এবং রান-আউটের মতো ভুল এড়াতে হবে। জাদেজা, বুমরাহ, এবং সিরাজের লড়াই তাদের দলের মনোবল বাড়িয়েছে, এবং তারা চতুর্থ টেস্টে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত।
শোয়েব বশিরের আঘাত ইংল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা, তবে তাঁর লর্ডসে শেষ উইকেট নেওয়ার বীরত্ব তাঁর প্রতিভা এবং মানসিক শক্তির প্রমাণ। ইংল্যান্ড এখন জ্যাক লিচ বা লিয়াম ডসনের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারদের উপর নির্ভর করবে, যখন ভারত সিরিজ সমতায় আনার জন্য তাদের ব্যাটিং শক্তিশালী করতে চাইবে। চতুর্থ টেস্টে উভয় দলের কৌশল এবং নতুন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এই রোমাঞ্চকর সিরিজের ফল নির্ধারণ করবে।