লর্ডসের (Lords Test) সবুজ গালিচায় ক্রিকেট যে কেবল স্কোরবোর্ড নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তারও পরীক্ষা। এরকমই করুণ উদাহরণ রেখে গেল ভারতের (Indian Cricket Team) ব্যাটিং বিপর্যয়। তৃতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের (England) বিরুদ্ধে জিততে ভারতের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৯৩ রান। প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রান করা দলের জন্য এই লক্ষ্য অতিক্রম্য বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে দাঁড়াল পাহাড়সম।
চাপের কাছে বারবার নতজানু হয়ে একের পর এক উইকেট হারাল শুভমন গিলের দল। শেষ পর্যন্ত ১৭০ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বসল ২২ রানে। ফলত সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বেন স্টোকসরা।
শুরুতেই বিপর্যয়
শেষ ইনিংসে যশস্বী জয়সওয়াল শূন্য রানে পুল শট খেলতে গিয়ে আউট হন জোফ্রা আর্চারের শর্ট বলের ফাঁদে পড়ে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে পুল করা মানেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান করুণ নায়ার ও অধিনায়ক শুভমন গিল। আকাশ দীপের ক্যাচ আউট হতাশা আরও বাড়িয়ে তোলে। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৫৮-৪। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, শেষ দিনের সকাল হতে চলেছে এক কঠিন পরীক্ষা।
পঞ্চম দিনের পতনের গল্প
পঞ্চম দিনের সকালে ভারতের ভরসা ছিলেন কেএল রাহুল ও ঋষভ পন্থ। কিন্তু পন্থ আর্চারের অসাধারণ লাইন ও লেংথের কাছে ধরাশায়ী হয়ে ফিরেন মাত্র ৯ রানে। এরপর রাহুল কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও শেষরক্ষা হয়নি। ৩৯ রান করে স্টোকসের শিকার হন তিনি। এরপর একে একে ব্যর্থ হন ওয়াশিংটন সুন্দর, নীতীশ রেড্ডি ও জশপ্রীত বুমরাহ। সুন্দর রান না করেই আউট হন আর্চারের বলে। রেড্ডি ধৈর্য ধরে খেললেও লাঞ্চের ঠিক আগে তাকে হারায় ভারত। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা একপ্রকার একা কুম্ভের মতো লড়াই চালিয়ে যান।
জাদেজার সঙ্গে শেষপ্রান্ত অবধি টিকে থাকার চেষ্টা করেন বুমরাহ। ইংল্যান্ডের আগ্রাসী পেস আক্রমণের সামনে অনেকটাই সময় ব্যাট হাতে টিকেও যান তিনি। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত স্টোকসের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
সিরাজের অপ্রত্যাশিত আউট, ভারতের স্বপ্নভঙ্গ
শেষ উইকেটে ভারতের আশা ছিল সিরাজকে নিয়ে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার সোয়েবের বল সিরাজের ব্যাটে-বলে ঠেকে উইকেট ভেঙে দেয়। অপ্রত্যাশিত এই আউটে স্তব্ধ হয়ে যায় ভারতীয় শিবির। জাদেজা তখন অপরাজিত ৬১ রানে। কিন্তু তার এই লড়াকু ইনিংসও ভারতকে রক্ষা করতে পারেনি।
ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের দাপট
জোফ্রা আর্চার ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংকে প্রথম দিকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। বেন স্টোকস এবং ব্রাইডন কার্স কার্যকরী ভূমিকা রাখেন মাঝের ওভারে। সোয়েব নেন ২টি উইকেট। বিশেষ করে আর্চারের ধারাবাহিক গতি ও বাউন্স ভারতীয় ব্যাটারদের দিশাহীন করে তোলে। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের এই বিপর্যয়ই বুঝিয়ে দিল, শেষ ইনিংস মানে শুধু রান তাড়া নয়, মানসিক দৃঢ়তার লড়াই।
সিরিজে এখন ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। ভারতের সামনে সিরিজ জেতার সুযোগ এখন সংকীর্ণ। শেষ দুটি টেস্ট জিততেই হবে। তবে তার আগে ব্যাটিং ইউনিটকে আত্মসমালোচনা করে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।
England beat Indian Cricket Team by 22 runs in Lords Test