ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেসের পেনাল্টি মিস তাদের জন্য ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এমিল স্মিথ রো (Emile Smith Rowe) বদলি হিসেবে মাঠে নেমে ফুলহ্যামের হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উদ্ধার করেছেন। রবিবার ক্রেভেন কটেজে অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ম্যাচের শুরু থেকেই উভয় দলের আক্রমণাত্মক খেলা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ইউনাইটেডের গ্রীষ্মকালীন সাইনিং ম্যাথিউস কুনহা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, ফুলহ্যামের গোলকিপার বার্ন্ড লেনোকে প্রথম দিকে একটি শট বাঁচাতে বাধ্য করেন এবং পরে তাঁর আরেকটি শট পোস্টে আঘাত করে। ব্রুনো ফার্নান্দেসও দূর থেকে লেনোকে পরীক্ষা করেন, অন্যদিকে ফুলহ্যামের জশ কিং ইউনাইটেডের গোলকিপার আলতায় বায়িন্দিরের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কারণে গোল করতে ব্যর্থ হন।
প্রথমার্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে ৩৫তম মিনিটে, যখন ক্যালভিন ব্যাসি মেসন মাউন্টকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন। দীর্ঘ ভিএআর রিভিউর পর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ফার্নান্দেস এই সুযোগ নষ্ট করেন, তাঁর পেনাল্টি শট হ্যামি এন্ডের দিকে উড়ে যায়, যা ফুলহ্যাম সমর্থকদের জন্য স্বস্তির কারণ হয়। ফুলহ্যাম প্রথমার্ধে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরে আসে, রদ্রিগো মুনিজ এবং টিমোথি কাস্তানিয়ে সাসা লুকিচের পাস থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করেন, কিন্তু বিরতির সময় স্কোরলাইন গোলশূন্য থাকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ইউনাইটেড ৫৮তম মিনিটে এগিয়ে যায়, যদিও গোলটি কিছুটা ভাগ্যের সাহায্যে আসে। তরুণ ডিফেন্ডার লেনি ইয়োরো একটি কর্নার থেকে হেড করেন, এবং বল মুনিজের পিঠে লেগে লেনোকে ভুল পায়ে ফেলে জালে জড়ায়। এই গোল ফুলহ্যামের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল, এবং অনেকে মনে করেন যে ইয়োরো ব্যাসিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য রেফারির শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল।
ফুলহ্যামের কোচ মার্কো সিলভা তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখান এবং এমিল স্মিথ রো-কে মাঠে নামান। এই সিদ্ধান্ত ফল দেয়। ৭২তম মিনিটে স্মিথ রো, মাঠে নামার মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে, অ্যালেক্স ইওবির ক্রসে দুর্দান্তভাবে রান করে বক্সে ঢুকে পড়েন এবং বলটি বায়িন্দিরকে পরাস্ত করে জালে পাঠান। এই গোল ফুলহ্যামকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে এবং দলের মধ্যে নতুন উদ্যম সঞ্চার করে।
ম্যাচের শেষ পর্যায়ে উভয় দলই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে খেলে। ফুলহ্যামের পক্ষে স্মিথ রো-এর গোল দলকে আরও আক্রমণাত্মক করে তোলে, অন্যদিকে ইউনাইটেডও শেষ মুহূর্তে জয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। হ্যারি ম্যাগুয়ার ইনজুরি টাইমে একটি হেডারের মাধ্যমে গোলের কাছাকাছি যান, কিন্তু তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
শেষ পর্যন্ত, দুই দলই একটি করে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এই ম্যাচ উভয় দলের আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং গোলকিপারদের স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। স্মিথ রো-এর দ্রুত গোল ফুলহ্যামের অধ্যবসায়ের পুরস্কার হিসেবে এসেছে, অন্যদিকে ফার্নান্দেসের পেনাল্টি মিস ইউনাইটেডের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়।
এই ম্যাচে স্মিথ রো-এর পারফরম্যান্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি মাত্র ১৯ মিনিট মাঠে ছিলেন, কিন্তু তাঁর গোলটি ফুলহ্যামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্মিথ রো ম্যাচে ১১টি টাচ করেন, ২টি শট নেন, যার মধ্যে ১টি গোল হয়। তাঁর এক্সপেক্টেড গোল (xG) ছিল ০.৭১, যা তাঁর গোলের গুণমান প্রতিফলিত করে। তিনি বক্সের মধ্যে ২টি টাচ করেন এবং কোনো ফাউল বা কার্ড পাননি। তাঁর এই পারফরম্যান্স তাঁর প্রাক্তন ক্লাব আর্সেনাল থেকে ফুলহ্যামে আসার পর তাঁর ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব প্রমাণ করে।
ইউনাইটেডের জন্য এই ম্যাচ ছিল হতাশার। তাদের গ্রীষ্মকালীন সাইনিং কুনহা দুর্দান্ত খেললেও, গোলের সুযোগ নষ্ট করা এবং ফার্নান্দেসের পেনাল্টি মিস তাদের প্রথম জয়ের আশা নষ্ট করে। তরুণ ডিফেন্ডার লেনি ইয়োরোর গোল তাদের এগিয়ে দিলেও, প্রতিরক্ষায় ম্যাথিজ ডি লিগটের ভুলের কারণে স্মিথ রো গোলটি করতে সক্ষম হন। ফুলহ্যামের কোচ মার্কো সিলভা তাঁর বদলি খেলোয়াড়দের বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করেছেন, যা ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।
এই ড্র ফুলহ্যাম এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড উভয়ের জন্যই প্রিমিয়ার লিগের নতুন মরসুমে প্রথম জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছে। ফুলহ্যামের জন্য স্মিথ রো-এর এই গোল তাদের আক্রমণাত্মক শক্তি এবং গভীরতা প্রদর্শন করে, যখন ইউনাইটেডের জন্য ফার্নান্দেসের পেনাল্টি মিস এবং প্রতিরক্ষার দুর্বলতা তাদের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে।
এই ম্যাচের পর ফুলহ্যাম এবং ইউনাইটেড উভয়ই তাদের পরবর্তী ম্যাচে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। স্মিথ রো-এর এই পারফরম্যান্স ফুলহ্যাম সমর্থকদের জন্য আশার আলো, এবং তাঁর মতো খেলোয়াড়দের উপস্থিতি দলকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। অন্যদিকে, ইউনাইটেডের কোচ রুবেন আমোরিমকে তাঁর দলের ফিনিশিং এবং প্রতিরক্ষার উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে।