ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2025) ২০২৪-২৫ মরসুমের ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছে বেঙ্গালুরু এফসি। এই ম্যাচে বেশ কিছু বিতর্কিত মুহূর্তের জন্ম হয়েছে, যার মধ্যে বেঙ্গালুরু এফসির স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডগার মেন্ডেজের (Edgar Mendez ) রেফারিং অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ছিল সবচেয়ে আলোচিত। ৬৮তম মিনিটে জর্জ পেরেরা ডিয়াজের সঙ্গে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় মেন্ডেজ তাঁর পায়ের রক্তাক্ত ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে রেফারিদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এই ঘটনা ম্যাচের রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Edgar Mendez এর ক্ষোভ: ন্যায্য কি ছিল?
৩৫ বছর বয়সী এডগার মেন্ডেজ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর হয়ে পুরো ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। তিনি একাধিক শারীরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবং মাঠে তাঁর উপর হওয়া কঠিন ট্যাকলগুলো রেফারিদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় বলে তিনি মনে করেন। মাঠ ছাড়ার সময় তিনি তাঁর পায়ের ক্ষতচিহ্নগুলো ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন, যা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে রেফারিরা মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের কঠিন ট্যাকলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেননি। মেন্ডেজের এই অঙ্গভঙ্গি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তিনি ম্যাচের রেফারিংয়ের মান নিয়ে গভীরভাবে হতাশ।
মেন্ডেজের অভিযোগ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি মনে করেন, ম্যাচে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মোহনবাগানের পক্ষে গেছে। বিশেষ করে, মোহনবাগানের ডিফেন্ডার দীপক তাংড়ির বেঙ্গালুরুর মিডফিল্ডার আলবার্তো নোগুয়েরার উপর করা একটি কঠিন ট্যাকল উল্লেখযোগ্য। এই ঘটনায় রেফারি কোনও ফাউল ঘোষণা করেননি, যা বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মেন্ডেজের মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলো ম্যাচের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলেছে এবং আইএসএল ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন রেফারিং অগ্রহণযোগ্য।
আইএসএল ফাইনালে রেফারিং বিতর্ক
আইএসএল ২০২৪-২৫ ফাইনালে বেশ কয়েকটি মুহূর্ত ছিল যেখানে রেফারিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের কিছু ট্যাকল এবং ফাউল যথাযথভাবে শাস্তি পায়নি বলে বেঙ্গালুরু শিবির মনে করে। মেন্ডেজের পায়ের আঘাত এবং নোগুয়েরার উপর তাংড়ির ট্যাকল ছাড়াও ম্যাচে আরও কিছু ঘটনা ছিল যেখানে রেফারিরা কঠোর পদক্ষেপ নেননি। এই অসঙ্গতিগুলো ম্যাচের গতিপ্রকৃতির উপর প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।
ফাইনাল ম্যাচে বেঙ্গালুরু প্রথমার্ধে আক্রমণাত্মক খেলা দেখালেও গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ৪৯তম মিনিটে মোহনবাগানের ডিফেন্ডার আলবার্তো রদ্রিগেজের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। তবে, ৭২তম মিনিটে চিংলেনসানা সিংয়ের হ্যান্ডবলের জন্য মোহনবাগান পেনাল্টি পায়, যা জেসন কামিংস গোলে পরিণত করেন। অতিরিক্ত সময়ে জেমি ম্যাকলারেনের গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় মোহনবাগান। এই জয়ের মাধ্যমে মোহনবাগান লিগ শিল্ডের পাশাপাশি আইএসএল কাপ জিতে ঐতিহাসিক ডাবল অর্জন করে।
মেন্ডেজের অভিযোগের বৈধতা
এডগার মেন্ডেজের ক্ষোভ কতটা ন্যায্য, তা নিয়ে ফুটবল বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একদিকে, তাঁর পায়ের দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন প্রমাণ করে যে তিনি মাঠে কঠিন শারীরিক সংঘর্ষের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, মেন্ডেজের এই অঙ্গভঙ্গি ম্যাচের উত্তেজনার মধ্যে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে, ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা নতুন নয়। আইএসএলের আগের মরসুমগুলোতেও রেফারিং সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
আইএসএল ২০২৪-২৫ ফাইনালে মোহনবাগানের জয় ঐতিহাসিক হলেও, এডগার মেন্ডেজের ক্ষোভ এবং রেফারিং বিতর্ক ম্যাচের গ্ল্যামারের উপর ছায়া ফেলেছে। বেঙ্গালুরু এফসি পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ট্রফি হাতছাড়া হয়। মেন্ডেজের অভিযোগ রেফারিংয়ের মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। ভবিষ্যতে এই ধরনের বিতর্ক এড়াতে আইএসএল কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে।