ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার (India Pakistan Tensions) জেরে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) মাঝপথে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ (Cricket League)। গত শুক্রবার তথা ৯ মে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) ঘোষণা করে যে, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ১৭টি ম্যাচ বাকি, যার মধ্যে রয়েছে লিগ পর্বের ১৩টি, প্লে-অফের তিনটি এবং একটি ফাইনাল।
পাঠানকোটে পাকিস্তানের হামলার পরপরই ধর্মশালায় পঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচটি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণে দর্শকদের মাঠ ত্যাগ করতে বলা হয় এবং মাঠের বাতিস্তম্ভ নিভিয়ে দেওয়া হয়। এর পরের দিনই বিসিসিআই আইপিএল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সংকটময় সময়ে এগিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ECB)। যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ক্রিকেট ম্যাগাজিন The Cricketer–এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিসিসিআইয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে ইসিবি। তারা জানিয়েছে, বাকি আইপিএল ম্যাচগুলি ইংল্যান্ডে (Engalnd) আয়োজন করতে তারা প্রস্তুত। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ভাবছিলাম আইপিএলের বাকি ম্যাচ ইংল্যান্ডে আয়োজন করা যায় কি না। আমাদের যথেষ্ট সংখ্যক মাঠ রয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা টেস্ট সিরিজের জন্য থেকে যেতেও পারবেন।”
টেস্টে রোহিত অধ্যায় অতীত, ইংল্যান্ড সফরের নতুন নেতা খুঁজে পেল BCCI!
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতীয় দল জুনের ২০ তারিখ থেকে ইংল্যান্ড সফরে যাবে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে। ফলে এই সময়সীমায় আইপিএল ইংল্যান্ডে আয়োজন করা হলে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের দ্বৈত উদ্দেশ্যেই সেখানে থাকা সম্ভব হবে।
যদিও বিসিসিআই এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবুও পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ইংল্যান্ডের প্রস্তাব একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতীতে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ২০২০ ও ২০২১ সালের আইপিএল আংশিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আয়োজন করা হয়েছিল। তাই বিদেশের মাটিতে আইপিএল আয়োজনের অভিজ্ঞতা বিসিসিআইয়ের রয়েছে। তবে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ক্ষেত্রেও সম্প্রতি সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি তাদের আয়োজনে রাজি হয়নি। ফলে বিদেশের মাঠে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন এখন অনেক জটিল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ইংল্যান্ডের সুবিধাগুলিও অস্বীকার করা যায় না। জুন-জুলাই মাসে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে খেলার উপযোগী থাকে এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের মাঠ রয়েছে—লর্ডস, ওভাল, এজবাস্টন, ট্রেন্ট ব্রিজ, হেডিংলি, ও ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ইত্যাদি—যেখানে উচ্চমানের ম্যাচ আয়োজন সম্ভব। দর্শকসংখ্যাও যথেষ্ট থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, কারণ যুক্তরাজ্যে ভারতীয় ও উপমহাদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের সংখ্যা অনেক।
সবমিলিয়ে, আইপিএল ২০২৫ ভবিষ্যৎ এখন বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। ভারতীয় বোর্ড যদি নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে, তবে ইংল্যান্ডের প্রস্তাব বাস্তব রূপ পেতে পারে। এমন এক সময়ে, যখন খেলাধুলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, তখন এই ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।