আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের পরপর লাল কার্ড: সমাধান কী?

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (Indian Super League 2024-25) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট সংগ্রহ করা, ছয়টি টানা পরাজয় এবং…

East Bengal's Red Card Woes

short-samachar

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (Indian Super League 2024-25) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট সংগ্রহ করা, ছয়টি টানা পরাজয় এবং কোনো জয়ের দেখা না পাওয়া—এসবই তাদের খারাপ অবস্থার সাক্ষী। নতুন প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজনও দলে জয়ের ছন্দ আনতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং দল এখন খারাপ শৃঙ্খলার জন্যও আলোচিত।

   

লাল কার্ড: বড় সমস্যা
ইস্টবেঙ্গল চলতি মৌসুমে সাত ম্যাচে চারটি লাল কার্ড দেখেছে। এটি গড়ে প্রতি দুই ম্যাচে একটি লাল কার্ড পাওয়ার সমান, যা পেশাদার ফুটবলের মানে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বশেষ মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ড্র ম্যাচেও দুটি লাল কার্ড পাওয়া হয়, যা দলের খেলার ছন্দ নষ্ট করেছে।

লাল কার্ডের কারণে মাঠে একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলতে হয়, এবং এটি দলের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় শেষ করে দেয়। দলের এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে না পারলে, মরসুমে কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়।

খেলোয়াড়দের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন
ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা কিছু সন্দেহজনক রেফারিং সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রায়ই বেশি আবেগপ্রবণ হয়েছে। বিশেষ মুহূর্তে শান্তি বজায় না রাখতে পারার কারণে তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এবং লাল কার্ড দেখে।

অস্কার ব্রুজনকে অবশ্যই তার খেলোয়াড়দের শেখাতে হবে কিভাবে মানসিকভাবে শান্ত থাকা যায়। খেলার সময় রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলিকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের উচিত জুনিয়রদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের ঠান্ডা মাথায় খেলার পরামর্শ দেওয়া। দল যদি একইভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে, তবে তারা কখনোই জয়ের ধারাবাহিকতা পাবে না।

ঝুঁকিপূর্ণ ট্যাকল কমানো
ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় ফাউল করে, যা তাদের বিপদের মুখে ফেলে। মাঠে তাদের কিছু খেলোয়াড় অত্যধিক আক্রমণাত্মক এবং অধিকার বজায় রাখতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

ব্রুজনের উচিত তার দলের খেলার কৌশলে কিছু পরিবর্তন আনা। খেলোয়াড়দের উচিত স্মার্টভাবে ট্যাকল করা, এমনভাবে যেন রেফারির দৃষ্টিগোচর না হয়। প্রতিটি ট্যাকলের আগে ভাবতে হবে তা কৌশলগতভাবে প্রয়োজনীয় কিনা।

যদি তারা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ফাউল করতে শিখতে পারে এবং বিরোধী খেলোয়াড়দের প্রতি আক্রমণাত্মক না হয়, তবে রেফারির দ্বারা শাস্তি পাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।

রেফারির সঙ্গে আচরণে পরিবর্তন আনা
ফুটবলের আধুনিক যুগে, রেফারির সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা অভিযোগ করলেই তা শাস্তিযোগ্য। আইএসএল রেফারিদের নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তারা খেলার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে।

মহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে, নাওরেম মহেশ সিং রেফারির মুখের সামনে অসংযত আচরণ করেন, যা তাকে লাল কার্ড দেখায়। এ ধরনের আচরণ বরাবরই শাস্তির কারণ হয়।

খেলোয়াড়দের উচিত রেফারিদের সঙ্গে আরও ভদ্র এবং ধৈর্যশীল আচরণ করা। ব্রুজনের উচিত এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া যে শুধুমাত্র অধিনায়ক বা সিনিয়র খেলোয়াড়রাই রেফারির সঙ্গে কথা বলবেন। এতে রেফারিদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় লাল কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

সমস্যা সমাধানের পথ
ইস্টবেঙ্গল বর্তমানে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি, তার মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দলের খেলোয়াড়দের মানসিক ও কৌশলগত পরিবর্তন আনতে হবে।

কীভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব:

  1. শান্ত থাকার অনুশীলন: কোচকে খেলোয়াড়দের শান্ত থাকতে শেখাতে হবে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার অনুশীলন করাতে হবে।
  2. স্মার্ট ট্যাকল: খেলোয়াড়দের আক্রমণাত্মক ট্যাকলের পরিবর্তে কৌশলগতভাবে প্রতিপক্ষকে থামাতে হবে।
  3. অতিরিক্ত ফাইন: যারা অপ্রয়োজনীয় লাল কার্ড দেখাবে তাদের উপর অর্থদণ্ড আরোপ করা যেতে পারে।
  4. রেফারির প্রতি সম্মান: রেফারির সঙ্গে দুর্ব্যবহার কমাতে নিয়ম করা উচিত যে শুধুমাত্র অধিনায়ক কথা বলতে পারবেন।
  5. সঠিক প্রস্তুতি: খেলোয়াড়দের প্রতিটি ম্যাচের জন্য মানসিক এবং কৌশলগত প্রস্তুত থাকতে হবে।

ইস্টবেঙ্গলের এই মৌসুমে শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতা তাদের একাধিক ম্যাচে ক্ষতি করেছে। যদি তারা দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না করে, তবে মরসুমে ভালো ফলাফল অর্জন কঠিন হবে। অস্কার ব্রুজনের উচিত কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনা এবং খেলোয়াড়দের আচরণে পরিবর্তন ঘটানো। একমাত্র শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেই ইস্টবেঙ্গল তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে।