ইন্ডিয়ান সুপার লিগের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ইমামি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নজরে রয়েছে মহিলা ফুটবল (East Bengal Women Team)। মাঠের যুদ্ধে কেবল পুরুষ দলই নয়, বরং মহিলা দলও যেন ইন্ডিয়ান ওমেন্স লিগ এবং কন্যাশ্রী কাপের মতো প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে পারে, তার জন্য ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো। গত সিজনে প্রত্যাশিত সাফল্য না পেলেও এবারে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে লাল-হলুদ ব্রিগেডের মহিলা দল। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য দলের অনেক ফুটবলারকে পুনর্গঠন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজের কোচিংয়ে আরও শক্তিশালী ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল
মহিলা দলের উন্নতির জন্য এই বছর দলের কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজকে। ফুটবলার নির্বাচনের পাশাপাশি দলের পারফরম্যান্সের জন্য কোচের ভূমিকাও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভালোই জানে ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ। অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজ একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কোচ হিসেবে ইতিমধ্যে গোকুলাম কেরালা এফসির মহিলা দলকে দুইবার ইন্ডিয়ান ওমেন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পনাগুলি ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলের সাফল্যের পথে সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস ক্লাব কর্তৃপক্ষের।
Also Read | লাল-কার্ড বিতর্কে মহেশের পাশে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার
বিশেষ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, আসন্ন সিজনের প্রস্তুতি শুরু হবে আগামী মাসের শুরুর দিকেই। আইডাব্লিউএলের জন্য প্রস্তুতি শিবির অনুষ্ঠিত হবে ক্লাবের মাঠেই। কঠিন প্রতিযোগিতার জন্য মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ফুটবলারদের তৈরি করার লক্ষ্যে অ্যান্ড্রুজ নিয়মিত কৌশলগত অনুশীলনের ব্যবস্থা করবেন।
পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি
দলের গত সিজনের পারফরম্যান্স খুব একটা আশানুরূপ ছিল না। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দলের শক্তি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মহিলা দলের নতুন খেলোয়াড়রা ক্লাবে যোগ দিয়েই নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করতে শুরু করেছেন। তাঁদের শক্তি, ফিটনেস, এবং কৌশলগত দক্ষতার উন্নতি করতে নিয়মিত ট্রেনিং দেওয়া হবে।
Also Read | রেফারিং ইস্যু নিয়ে ফেডারেশনের দ্বারস্থ মশালবাহিনী
ক্লাবের অঙ্গিকার এবং লক্ষ্য
ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল কেবলমাত্র আইডাব্লিউএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে খেলবে না বরং এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ছাড়পত্র অর্জন করাও তাদের বড় লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে দলকে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করতে হবে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলের অধিনায়ক আশালতা দেবী সহ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজেদের সেরাটা দিয়ে ক্লাবকে সাফল্য এনে দিতে বদ্ধপরিকর।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের সাফল্যের দিকে নজর
মশাল ব্রিগেডের ক্লাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগেই নয়, বরং এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্যও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি ইন্ডিয়ান ওমেন্স লিগে তারা শিরোপা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তবে তা তাদের আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতার জন্য এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে মহিলা ফুটবলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে লাল-হলুদ ব্রিগেড।
Also Read | সন্তোষ ট্রফির জন্য বাংলা থেকে কাদের বেছে নিলেন সঞ্জয় সেন? জানুন
খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা
সাফল্য অর্জনের জন্য শুধু শারীরিক ফিটনেসই নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তাও গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্ড্রুজের কোচিং স্টাইল খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শৃঙ্খলা এবং দলগত সহযোগিতার উপর জোর দিয়ে তিনি প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাঁদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার কৌশল শেখাবেন।
খেলোয়াড়দের জন্য নতুন পরিকল্পনা
নতুন কোচ অ্যান্ড্রুজ প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা কৌশল নির্ধারণ করবেন। গোলরক্ষক থেকে শুরু করে ফরোয়ার্ড লাইনের খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা আলাদা ফোকাস থাকবে অনুশীলনে। দলের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকাকে যথাযথভাবে পালন করানোর লক্ষ্যে অ্যান্ড্রুজের পরিকল্পনায় থাকবে রক্ষণ এবং আক্রমণের সামঞ্জস্য বজায় রাখা।
লিগের আগে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার গুরুত্ব
ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের মতে, নতুন মৌসুম শুরুর আগে সঠিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞ কোচের নেতৃত্ব দলের সাফল্যের পথে সহায়ক হবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবার দল গঠন এবং পরিকল্পনায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও সমর্থকদের আশা, এই মরসুমে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল ইতিহাস তৈরি করবে এবং সমর্থকদের মুখ উজ্জ্বল করবে।