ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল (East Bengal Women) আবারও প্রমাণ করে দিল, বাংলার নারী ফুটবলের ইতিহাসে তারা এখন অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তি। কন্যাশ্রী কাপ ২০২৫ (Kanyashree Cup 2025) ফাইনালে শ্রীভূমি এফসিকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে তারা ঘরে তুলেছে মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি। এর আগে তারা ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ (IWL) জিতে নজির গড়েছিল। এবার কন্যাশ্রী কাপ জিতে তারা সিজনের ‘দ্বিমুকুট’ জয় করে দেখাল – যা বাংলা মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকল।
ফাইনাল ম্যাচটি ছিল চরম উত্তেজনায় ভরপুর। নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়েও দুই দল গোল করতে না পারায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই এগিয়ে যায় ‘মহিলা মশাল ব্রিগেড’। গোলকিপার অনবদ্য সেভ শেষ পর্যন্ত শ্রীভূমিকে হারিয়ে দেয় লাল-হলুদের মেয়েরা। এই জয়ের পর গোটা ক্লাবে উচ্ছ্বাসের আবহ ছড়িয়ে পড়ে।
ফাইনালের ঠিক পরদিন, ২৮ মে (বুধবার) ক্লাব তাঁবুতে প্রথাগত নিয়ম মেনে কন্যাশ্রী কাপ ২০২৪-২৫ চ্যাম্পিয়ন দলের ক্লাব পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠান ছিল জমকালো ও আবেগঘন। উপস্থিত ছিলেন ক্লাব সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া, সাধারণ সচিব রূপক সাহা, আই.এফ.এ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্লাব কার্যকরী সমিতির সদস্য মানব পাল সহ আরও অনেকে। ক্লাব পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি কেক কেটে জয়ের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়।
ক্লাব সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া তাঁর বক্তব্যে টিমের সকল খেলোয়াড়, কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি ঘোষণা করেন, ক্লাবের পক্ষ থেকে চ্যাম্পিয়ন দলকে আড়াই লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি জানান, আগামী দিনে এএফসি ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো ফল করার লক্ষ্যে দলের পাশে থাকবে ক্লাব এবং কোচিং স্টাফদের সবরকম সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
ক্লাব সচিব রূপক সাহা বলেন, “এই সাফল্য শুধু একটি দলের নয়, সমগ্র ক্লাবের। মহিলা ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম এবং এই জয় আমাদের সেই প্রচেষ্টারই ফল।” আই.এফ.এ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও টিমের প্রশংসা করে বলেন, “এই দল শুধুমাত্র টেকনিক্যাল দিক দিয়ে নয়, মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। এদের খেলা দেখে ভবিষ্যতের জন্য আমরা আশাবাদী।”
টিম কোচ আন্টোনি আদ্রেউস বলেন, “টিমের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং ক্লাবের কর্তা-ব্যক্তিদের পূর্ণ সহযোগিতা—এই তিনের মেলবন্ধনই আমাদের এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকাশক্তি। এটা শুধুমাত্র একটা কাপ জয় নয়, এটা একটা সংগ্রামের জয়, স্বপ্নের জয়।”
এই সাফল্য বাংলা তথা ভারতের মহিলা ফুটবলের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইস্টবেঙ্গলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাব যখন মহিলা ফুটবলে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য এনে দেয়, তখন তা অন্য ক্লাবগুলোকেও অনুপ্রাণিত করে। খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করে এবং মহিলা খেলাধুলার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়।
এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দলের খেলোয়াড়রা এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তাদের সামনে রয়েছে আরও বড় মঞ্চ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজের জাত চেনানোর সুযোগ। ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং সমর্থকদের এখন একটাই আশা—এই টিম যেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও নিজেদের ছাপ রেখে যায়।