২৫ মে জেআরডি টাটা স্টেডিয়াম, জামশেদপুরে (Jamshedpur) অনুষ্ঠিত এআইএফএফ অনূর্ধ্ব-১৫ জুনিয়র লিগের (AIFF U-15 Junior League) সেমিফাইনাল রাউন্ডে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) বিরুদ্ধে দেখা গেল পাঞ্জাবের (Punjab FC) ফুটবল শক্তির দৃপ্ত বহিঃপ্রকাশ। দিনের প্রথম সেমিফাইনালে মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাঞ্জাব এফসি প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে ২৮ মে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক ‘অল-পাঞ্জাব’ ফাইনাল।
মিনার্ভার গোলবন্যা, বেঙ্গালুরু ধরাশায়ী
দিনের প্রথম ম্যাচে মিনার্ভা অ্যাকাডেমি মুখোমুখি হয়েছিল শক্তিশালী বেঙ্গালুরু এফসির। প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মিনার্ভা একেবারে গিয়ার পাল্টে দেয়। ডেনামোনি মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে (৪৭’, ৪৮’) দুই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। বেঙ্গালুরু এফসি যদিও হাল না ছেড়ে হৃষিকেশ চরণ মনাবথি (৫৫’) ও আকাশ মণ্ডলের (৬২’) গোলে কিছুটা লড়াইয়ে ফিরে আসে, কিন্তু শেষ ত্রিশ মিনিটে মিনার্ভার ঝড় সামলাতে পারেনি তারা।
নিতিন কুমার (৭২’, ৮৭’) দুটি অসাধারণ গোল করেন, এরপর আজম খান মাত্র সাত মিনিটে (৮১’, ৮৩’, ৮৮’) হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে ম্যাচে মোহময় রূপ আনেন। ম্যাচ শেষে স্কোরলাইন ৭-২, যা মিনার্ভার আধিপত্যের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
পাঞ্জাব এফসির নির্ভরযোগ্য জয়
বিকেলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাঞ্জাব এফসি মুখোমুখি হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এফসির। তবে ম্যাচের ফলাফলে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহ্য কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। ১১তম মিনিটেই কেইসাম বিকাশ সিং গোল করে পাঞ্জাবকে এগিয়ে দেন। ২৫ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের দীপক মণ্ডল পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সাময়িক সমতা ফেরান।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পাঞ্জাবের দুর্দান্ত রক্ষণ ও আক্রমণাত্মক খেলার সামনে ইস্টবেঙ্গল অসহায় হয়ে পড়ে। ৫৬ মিনিটে তাইবাম নগাম্বা দলের দ্বিতীয় গোল করেন। এরপর ৬৩ মিনিটে বিকাশ সিং নিজস্ব দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন। শেষ মুহূর্তে প্রভজোত সিং (৮৫’) এবং আরামবাম দীপক সিং (৮৮’) আরও দুটি গোল করে পাঞ্জাবের জয় নিশ্চিত করেন।
ইস্টবেঙ্গলের হতাশাজনক বিদায়
ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে একমাত্র গোলটি এলেও তাদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। প্রথমার্ধে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দ্বিতীয়ার্ধে তারা পুরোপুরি পিছিয়ে পড়ে। পাঞ্জাবের সংগঠিত ডিফেন্স ও দ্রুতগতির আক্রমণের বিপরীতে ইস্টবেঙ্গল কার্যত কোনও জবাব খুঁজে পায়নি।
ফাইনালের অপেক্ষায় পাঞ্জাবের দুই দল
এবারের ফাইনাল তাই হয়ে উঠতে চলেছে দুই পাঞ্জাবি দলের লড়াই, মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি বনাম পাঞ্জাব এফসি। দুই দলের ফর্ম ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচার করলে এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের প্রত্যাশা করাই যায়। মিনার্ভার আক্রমণভাগ যতটা বিধ্বংসী, পাঞ্জাবের ডিফেন্স ততটাই শক্ত। ফাইনালে কে হাসবে শেষ হাসি, তা জানতে ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা করতে হবে ২৮ মে পর্যন্ত।
এবারের এআইএফএফ অনূর্ধ্ব-১৫ জুনিয়র লিগ তরুণ প্রতিভাদের একটি শক্ত মঞ্চ হিসেবে আবারও নিজেকে প্রমাণ করল। আগামী দিনে এই খেলোয়াড়রাই ভারতের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন — এই বিশ্বাস আরও জোরালো হলো জামশেদপুরের সেমিফাইনাল পর্বে।