ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল (East Bengal FC) আবারও প্রমাণ করল, বাংলার ফুটবলে তারা এখন অন্যতম বড় শক্তি। ২০২৫ সালের কন্যাশ্রী কাপের (Kanyashree Cup 2025) ফাইনালে শ্রীভূমি এফসিকে (Sreebhumi FC) টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি ঘরে তুলল ‘মহিলা মশাল ব্রিগেড’। এর আগে এ বছরই ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ জিতে নজির গড়েছিল লাল-হলুদের মেয়েরা। এবার কন্যাশ্রী কাপ জিতে মরশুমে ‘দ্বিমুকুট’ জয় করল তারা।
মঙ্গলবার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রতীক্ষিত এই ফাইনাল। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, যারা গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এবারের আসরে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু তাদের রুখে দাঁড়ায় সিজনে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইস্টবেঙ্গল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে দুই দলই একে অপরকে রীতিমতো টক্কর দেয়। প্রথমার্ধে গোল করেন শ্রীভূমির ফরোয়ার্ড, যার জবাব দ্বিতীয়ার্ধে দেন ইস্টবেঙ্গলের তৃষা। ১-১ গোলে ম্যাচ শেষ হয় নির্ধারিত সময়ে।
এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই রঙ দেখান ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক মামনি। তাঁর অনবদ্য সেভ শ্রীভূমির দুইটি শট ঠেকিয়ে দেয়। বিপরীতে, ইস্টবেঙ্গলের চার পেনাল্টি কিকের সবকটিই নিখুঁতভাবে গোল হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে লাল-হলুদ শিবির।
তবে এই ফাইনাল ঘিরে একাধিক বিতর্কও ছিল। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে তাঁরা ফাইনাল খেলতে পারবেন না, কারণ মহিলা দলের খেলোয়াড়দের একটি অংশ আইডব্লুএল-এর পর বিশ্রামে ছিলেন এবং কিছু খেলোয়াড় ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে ছিলেন। তবে আইএফএ (ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) সেই অনুরোধ না মেনে নির্ধারিত তারিখেই ফাইনাল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে কিছুটা জোর করেই দল নামাতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। তবে সেই প্রতিবাদ নিয়েই তারা মাঠে নামে এবং নিজেদের দক্ষতা দিয়ে প্রমাণ করে দেয়, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, জয়ের মানসিকতা থাকলে কোনও কিছুই তাদের আটকে রাখতে পারে না।
ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গলের কোচ ও কর্তারা খেলোয়াড়দের প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। বিশেষ করে গোলরক্ষক মামনি ও সুলঞ্জনার পারফরম্যান্স সকলের নজর কাড়ে। ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, “মেয়েদের ফুটবলের মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এই প্রতিযোগিতা তারই প্রমাণ।”
এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল বাংলার মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় লিখল। এক মরশুমে দুটি বড় টুর্নামেন্ট জিতে তারা এখন জাতীয় স্তরেও অন্যতম ভয়ংকর দল হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতে এই দল আরও অনেক সাফল্য পাবে বলেই আশাবাদী ফুটবলপ্রেমীরা।
লাল-হলুদ সমর্থকদের জন্য এই জয় যেন এক গর্বের মুহূর্ত। শুধু পুরুষ ফুটবলেই নয়, এখন মহিলা ফুটবলেও তারা দেশের অন্যতম সফল ক্লাব। আগামী দিনে এই জয় তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।