ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) বর্তমানে এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে তাদের খেলা এবং পারফরম্যান্স সবই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কারণ চলতি মরসুমের (ISL) প্রথম ছয় ম্যাচ খেলে যখন এক পয়েন্টেরও মুখ দেখেনি তারা। তখন কেউ কল্পনাও করেনি যে এই দলের মধ্যে আবার জয়ের ক্ষুধা এবং লড়াইয়ের নতুন আগুন জ্বলবে লাল-হলুদ শিবিরে। কিন্তু বর্তমানে সেই আশাবাদী দিনগুলো ফিরে এসেছে, আর এর পেছনে দলের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon) প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন বলে ধারণা মশাল সমর্থকদের (East Bengal FC Supporters)।
জামশেদপুর বধ করেই ‘বিস্ফোরক’ অস্কার, করলেন ভবিষ্যৎবাণী!
অস্কার ব্রুজো দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইস্টবেঙ্গল দলের খেলায় এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এক সময় যেসব ফুটবলারদের শরীরী ভাষা ছিল থেমে থেমে, বিশেষত শারীরিক এবং মানসিক শক্তিরও অভাব ছিল। আজ তাদের মধ্যে দৃঢ়তা, শক্তি এবং জয়ের অদম্য আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনটা শুধু মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দলের মনোভাব এবং দর্শনও পুরোপুরি বদলে গেছে। অস্কারের কোচিংয়ে লাল-হলুদ ফুটবলাররা শুধুমাত্র নিজেদের ফিটনেস ও শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয়নি, তারা মানসিকভাবে নিজেদের আরও শক্তিশালী করেছে।
Santosh Trophy: তৃতীয় জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে সার্ভিসেস ও মণিপুর
এটা ঠিক যে, ২০২৪-২৫ আইএসএলের শুরুর দিকে ইস্টবেঙ্গল দল ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারেনি। প্রথম ছয় ম্যাচের মধ্যে তারা পরপর হারের মুখ দেখেছিল। এই পরিস্থিতি দলের জন্য ছিল এক বড় ধরনের ধাক্কা। দলের ভক্ত-সমর্থকদের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, কীভাবে এই হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে দলকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? সেই সময়ে কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের পদত্যাগ দলকে আরও অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এমন সময়ে, যখন সমর্থকরা একেবারে আশা হারিয়ে ফেলেছিল, তখন অস্কার ব্রুজো দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলের নতুন যুগ শুরু হয়।
অস্কারের আসার পর থেকেই দলের পারফরমেন্সে যে পরিবর্তন এসেছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। বিশেষত, গত কয়েক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল যে দুর্দান্ত রূপে ফিরে এসেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে, যা দলের আত্মবিশ্বাসের অন্যতম বড় উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ছয় ম্যাচে পরাজয়ের পর, কেউ কল্পনাও করেনি যে ইস্টবেঙ্গল এমন বিপুল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। কিন্তু, আজ তারা ১৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে আইএসএল পয়েন্ট টেবিলে দশ নম্বরে অবস্থান করছে। এই পারফরমেন্স শুধু খেলার দিক থেকে নয়, দলের মানসিকতাও উন্নত হয়েছে। আবার এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছে দল।
অনবদ্য বিষ্ণু! জামশেদপুরকে হারিয়ে দশ নম্বরে মশালবাহিনী
বিশেষ করে, অস্কার ব্রুজো যখন দলটির দায়িত্ব নেন, তখন ফুটবল মাঠে এক নতুন মানসিকতা দেখা যায়। আর সেটাই মূলত দলের সাফল্যের গোপন রহস্য। এক সময় ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের শারীরিক ভাষা ছিল নিস্তেজ, তারা সঠিকভাবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে টক্কর দিতে পারত না, কিন্তু এখন তারা শরীরী ভাষায় পরিবর্তন এনে ফাইটিং স্পিরিট এবং খেলার প্রতি অনন্য ভালোবাসা দেখাতে সক্ষম। অস্কারের প্রথম কাজ ছিল দলের ফিটনেস বাড়ানো, যা মাঠে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি দলের খেলোয়াড়দের একেবারে নতুনভাবে তৈরি করেছেন, এবং তার ফলস্বরূপ, তারা প্রতিটি ম্যাচে দাপটের সঙ্গে খেলছে।
এটা সত্যি যে, অস্কারের হাত ধরে ইস্টবেঙ্গলের এই উন্নতি হয়েছে, কিন্তু দলের ভক্ত-সমর্থকরা এখন আক্ষেপ করছেন, যদি শুরু থেকেই অস্কার কোচ থাকতেন, তবে হয়ত ইস্টবেঙ্গল আজ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকত। তবে, তাদের এই আক্ষেপও নিরসন হয়েছে এক নতুন আশায়। অস্কারের অধীনে ইস্টবেঙ্গল যে অদম্য লড়াইয়ের চেতনা এবং জয়ের ইচ্ছা দেখিয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য দারুণ আশাবাদী।
ইস্টবেঙ্গলের কাছে পরাজিত হয়ে কী বললেন খালিদ জামিল?
এখন, ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা শুধু খুশি নয়, তারা এক নতুন সাহস এবং আগ্রহ নিয়ে দলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, এই দলটি এখন শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই নয়, বরং সারা দেশের ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক বড় শিক্ষা হয়ে উঠেছে। জয়ের এই খিদে, লড়াইয়ের অদম্য স্পিরিট এবং হার না মানা মানসিকতা শুধু ময়দানে নয়, ফুটবল ইতিহাসেও নিজেদের জায়গা করে নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা।