কলকাতা লিগ জয়ের লক্ষ্যে ইস্টবেঙ্গল, দলে সন্তোষ জয়ী ফুটবলাররা

আসন্ন কলকাতা ফুটবল লিগকে (CFL 2025) সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। ঐতিহ্যশালী ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (East Bengal FC) এবার স্কোয়াড সাজাচ্ছে একেবারে ঘরোয়া…

East Bengal FC squqd for CFL 2025

আসন্ন কলকাতা ফুটবল লিগকে (CFL 2025) সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। ঐতিহ্যশালী ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (East Bengal FC) এবার স্কোয়াড সাজাচ্ছে একেবারে ঘরোয়া প্রতিভার ওপর ভিত্তি করে। সেই কৌশলেরই প্রথম ধাপে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তিন বঙ্গসন্তানমনতোষ মাজি, বিক্রম প্রধান ও সঞ্জয় ওরাওঁ। নতুন এই তিন ফুটবলারের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে মশাল ব্রিগেডে নতুন প্রাণ জোগাবে, এমনটাই মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা থেকে সমর্থকরা।

মনতোষ মাজি, যিনি স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেন। তিনি ছিলেন সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। গোল করার দক্ষতা, অফ দ্য বল মুভমেন্ট এবং ফিনিশিং পারদর্শী মনতোষ ইতিমধ্যেই প্র্যাকটিসে নজর কাড়তে শুরু করেছেন। অন্যদিকে বিক্রম প্রধান একজন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। বল কন্ট্রোল, ট্যাকলিং ও হেডিংয়ে সাবলীল বিক্রমও সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের অন্যতম সদস্য। তৃতীয় ফুটবলার সঞ্জয় ওরাওঁ একজন মিডফিল্ডার, যিনি বল পজিশন ধরে রেখে খেলা গড়ার কাজে সিদ্ধহস্ত। তিনটি বিভাগেই স্থানীয় প্রতিভা যোগ করে দলকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলেছে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট।

   

এই তিন বঙ্গসন্তানের লক্ষ্য খুব স্পষ্ট, কলকাতা লিগে (Calcutta Football League) নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলে ইস্টবেঙ্গলের মূল আইএসএল দলে জায়গা করে নেওয়া। প্রথম দিন থেকেই তারা মশাল ব্রিগেডের অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন, যা থেকে তাঁদের মানসিকতা ও প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট। ক্লাবের তরফ থেকেও এই নতুনদের প্রতি ভরসা রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে এবং কোচিং স্টাফ ইতিমধ্যেই তাঁদের পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এখানে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হল, আইএফএর নতুন নিয়ম। রাজ্য ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে এবার কলকাতা লিগে প্রতিটি ক্লাবকে ম্যাচে কমপক্ষে ছয়জন ভূমিপুত্র রাখতে হবে। এর আগে যেখানে পাঁচজন ভূমিপুত্র খেলানো বাধ্যতামূলক ছিল, এবার সংখ্যাটা এক ধাক্কায় বেড়েছে। এই নিয়মের প্রেক্ষিতে দলগুলোকে বাড়তি কৌশলী হতে হচ্ছে স্কোয়াড সাজানোর ক্ষেত্রে। তবে স্থানীয় প্রতিভা তুলে আনার এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে অধিকাংশ ক্লাব ও সমর্থক।

Advertisements

আসন্ন কলকাতা লিগে গ্রুপ বিভাজনও বেশ আকর্ষণীয়। গ্রুপ ‘এ’তে রয়েছে দুই প্রধান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। এই গ্রুপে আরও রয়েছে মেসারার্স ক্লাব, কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স, সুরুচি সংঘ, রেলওয়ে এফসি, বেহালা এসএস, জর্জ টেলিগ্রাফ, কালীঘাট মিলন সংঘ, ক্যালকাটা কাস্টমস, পাঠচক্র, আর্মি রেড ও পুলিশ এসি। ফলে প্রতিটি ম্যাচই হতে চলেছে চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে সপ্তম রাউন্ডে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের লড়াই ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে সমর্থকদের মধ্যে।

অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’তে রয়েছে মহামেডান স্পোর্টিং, যারা গত কয়েক মরসুম ধরেই কলকাতা লিগে ভালো পারফরম্যান্স করছে। একই গ্রুপে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার এফসি, যারা সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছে। তাই দুই গ্রুপেই জমজমাট লড়াই দেখা যাবে বলে আশা।

ইস্টবেঙ্গলের নতুন পরিকল্পনা এবং ঘরোয়া প্রতিভাকে সুযোগ দেওয়ার এই কৌশল নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত। কলকাতা লিগ দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের ফুটবলপ্রেমীদের আবেগের অংশ। আর সেই মঞ্চেই তিন বঙ্গসন্তানের মতো তরুণ প্রতিভার উদ্ভব বাংলা ফুটবলের জন্য শুভ লক্ষণ। শুধু ইস্টবেঙ্গলই নয়, গোটা বাংলা ফুটবলই অপেক্ষা করছে এই তরুণদের দ্যুতি দেখার জন্য।

ফুটবলে যেমন জয়ের জন্য কৌশল দরকার, তেমনি প্রয়োজন মনোবল ও আত্মবিশ্বাস। মনতোষ, বিক্রম এবং সঞ্জয়ের মধ্যে এই ত্রয়ীর সমন্বয় নিঃসন্দেহে লাল-হলুদের শক্তি বাড়াবে। এখন দেখার বিষয়, তাঁরা মাঠে সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারেন। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই তিন বঙ্গসন্তানের যোগদানে ইস্টবেঙ্গলের কলকাতা লিগ অভিযান এক নতুন দিশা পাচ্ছে।