চিন্তা বাড়ছে সমর্থকদের, ডার্বি ম্যাচে আনোয়ার আলির ভবিষ্যৎ কি?

ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) এই মুহূর্তে যে সঙ্কটের মধ্যে তা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। লিগ টেবিলে (ISL) লাস্ট বয়ের তকমা মুছলেও, পরিবর্তন হয়নি…

East Bengal FC Footballer Anwar Ali

ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) এই মুহূর্তে যে সঙ্কটের মধ্যে তা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। লিগ টেবিলে (ISL) লাস্ট বয়ের তকমা মুছলেও, পরিবর্তন হয়নি তাদের খেলার ধরনে। কারণ গত কয়েক ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স, অবস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের চোটের খবর এক এক করে সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষত, আসন্ন ডার্বির (Kolkata Derby) আগে এই পরিস্থিতি আরও চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর শুরুতেই মুম্বই সিটি এফসির (Mumbai City FC) ২-৩ গোলে পরাজয়ের পর দলের মধ্যে যে হতাশা ছড়িয়েছে, তা বেশ সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এর মধ্যে ফের দুঃসংবাদ লাল-হলুদ শিবিরে। মোহনবাগান (Mohun Bagan SG) ম্যাচের খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তা রক্ষণভাগের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আনোয়ার আলির (Anwar Ali)।

   

দলের চোট পরিস্থিতি: একের পর এক বিপর্যয়

তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করেও বিষ্ণুর দখলে বিশেষ সম্মান

ইস্টবেঙ্গল দলের জন্য এই মরসুমের শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। প্রথমেই, মাদিহ তালাল চোটের কারণে মরসুমের শুরুতেই ছিটকে গিয়েছিলেন। তারপর, বিদেশি ফুটবলারদের বিষয়ে যা সমস্যা ছিল তা এখনও সমাধান হয়নি। নতুন বিদেশি নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চললেও সাফল্য আসেনি। সাউল ক্রেসপো, যে এক সময় ক্লাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ভিসা সমস্যায় তার মাঠে ফিরতে আরও বেশ কিছু সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

এমন অবস্থার মধ্যে আরও একটি বড় চোটের খবর এসে উপস্থিত হয়েছে। দলের অভিজ্ঞ রক্ষণভাগের ফুটবলার আনোয়ার আলি, যার কোমরের চোট দীর্ঘদিন ধরে ছিল। মুম্বই সিটির বিপক্ষে ম্যাচে সেই চোটের সঙ্গে মাঠে নামেন। ম্যাচের শেষে তাকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ থেকে বের হতে দেখা যায় এবং শেষ পর্যন্ত হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য একেবারে চিন্তার ব্যাপার। আনোয়ার আলির চোটের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই বোঝা যাবে তার চোট কতটা গুরুতর। তবে ক্লাবের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে, তার চোট গুরুতর নয়, তবুও ডার্বির আগে তার মাঠে নামা সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, “আনোয়ারের চোট খুব একটা বেশি নয়। ডাক্তার আমাদের সেটাই বলেছে। দেখা যাক বিশ্রাম নিলে বোঝা যাবে”

আনোয়ারের চোট নিয়ে মুখ খুললেন দেবব্রত সরকার

ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ :

মশাল ব্রিগেডের রক্ষণ যে ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছে, তা মুম্বই সিটির বিপক্ষে হারের পর আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে। হিজাজি মাহের, হেক্টর ইউস্তে, প্রভাত লাকরাদের পারফরম্যান্স একেবারেই সন্তোষজনক নয়। রক্ষণভাগে ভুলের কারণে বিপিন, বিক্রম প্রতাপদের মতো স্ট্রাইকাররা সহজেই গোল পেয়েছেন। সমর্থকরা এরই মধ্যে ক্লাবের রক্ষণভাগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তাছাড়া, বর্তমানে লিগ টেবলে ইস্টবেঙ্গল ১১ নম্বরে অবস্থান করছে, যা খুবই হতাশাজনক। অন্যদিকে, মোহনবাগান নিজেদের রক্ষণ ও আক্রমণ সামলাতে দারুণভাবে সফল। তাদের লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকার কারণই এখন ইস্টবেঙ্গল শিবিরের জন্য একে একে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ।

ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করে ‘বিস্ফোরক’ প্রবীর দাস

মুম্বই সিটির বিপক্ষে পরাজয়ের পর যুবভারতীতেই কোচ অস্কার ব্রুজো এবং ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকারের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। তবে ক্লাবের হাতে সময় কম। ডার্বির আগে নতুন বিদেশি ফুটবলার আনতে ক্লাবের প্রচেষ্টা চলছে। তবে এই পরিস্থিতিতে কোনও নতুন বিদেশি আনা সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে, আনোয়ার আলির চোটও কোচের জন্য বড় চিন্তার কারণ। রক্ষণ শক্তি বাড়ানোর জন্য আনোয়ারের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি এবং যদি তিনি ডার্বির আগেই পুরোপুরি ফিট না হন, তবে তার অনুপস্থিতি ইস্টবেঙ্গলের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।

সমর্থকদের মাঝে উদ্বেগ

সমর্থকরা ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান অবস্থায় বেশ চিন্তিত। গত মরসুমে কিছু আশা দেখা গেলেও এই বছর দল যে গতির মধ্যে রয়েছে তা একেবারেই হতাশাজনক। তাদের আক্রমণভাগে কিছুটা উন্নতি হলেও রক্ষণ ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সমর্থকরা আশা করছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং দল নতুন বছরটিতে নতুনভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। তবে ক্লাবের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তাদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে।

ওডিশা এফসিতে যোগদান করার কারণ জানালেন রাহুল কেপি

ইস্টবেঙ্গল এখন এক দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চোট, হার, এবং দলের দুর্বল পারফরম্যান্স নিয়ে কোচ ও ক্লাব কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এই পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে। সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন, তবে তারা জানেন, এই পরিস্থিতি সামলাতে হলে ক্লাবকে দ্রুত কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ১১ জানুয়ারি ডার্বি শিরোনামে থাকতে পারবে কি ইস্টবেঙ্গল? তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছুদিন।