চমকে উঠলেন লাল-হলুদ সমর্থকরাও, আনোয়ারকে নিয়ে কোন তথ্য প্রকাশ্যে এল?

ক্রীড়াঙ্গনে প্রত্যাবর্তন বা পুনরুজ্জীবন একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অনুপ্রেরণাদায়ক প্রক্রিয়া। অনেক খেলোয়াড়ই সাফল্য এবং ব্যর্থতার সম্মুখীন হন, তবে কিছু খেলোয়াড় তাদের নিজস্ব সংগ্রাম ও কষ্টের মধ্য…

East Bengal FC Footballer Anwar Ali

ক্রীড়াঙ্গনে প্রত্যাবর্তন বা পুনরুজ্জীবন একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অনুপ্রেরণাদায়ক প্রক্রিয়া। অনেক খেলোয়াড়ই সাফল্য এবং ব্যর্থতার সম্মুখীন হন, তবে কিছু খেলোয়াড় তাদের নিজস্ব সংগ্রাম ও কষ্টের মধ্য দিয়ে পুনরায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। আনোয়ার আলি(Anwar Ali), ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) বর্তমান অন্যতম মূল রক্ষক, তাঁর জীবনের এই রকম এক অভাবনীয় যাত্রা পেরিয়ে আবারও খেলা এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন।

ইস্টবেঙ্গলে যোগদানের শুরুতেই দুঃসংবাদ

   

রাকিপের পরিবর্তে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য এই তিন ফুটবলার

২০২৩-২৪ মরসুমে মোহনবাগান (Mohun Bagan SG)ত্যাগ করে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আনোয়ার আলি তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। লাল-হলুদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হয়, যেখানে তাকে পাঁচ বছরের জন্য ২৪ কোটি টাকা বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই চুক্তির কারণে তিনি ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত বাগান সমর্থকদের কাছে ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।

শুরুর দিকে আনোয়ার আলি অনেক বিতর্ক এবং আইনি সমস্যার মধ্যে পড়ে যান। মোহনবাগান থেকে অবৈধভাবে চুক্তি ভেঙে ইস্টবেঙ্গলে আসার জন্য তাঁকে চার মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং আনোয়ারকে লাল-হলুদ জার্সিতে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আইনি জটিলতা এবং শূন্য প্রি-সিজন প্রস্তুতির কারণে তার পারফরম্যান্স প্রথমদিকে কিছুটা খারাপ ছিল।

প্রথমদিকে দুর্বল পারফরম্যান্স

ভারতের চাপ বাড়িয়ে প্রথম একাদশ ঘোষণা অস্ট্রেলিয়ার, ভাঙল কামিন্সের রেকর্ড

ইস্টবেঙ্গলে তাঁর প্রথম মাসগুলো মোটেও সুখকর ছিল না। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথম কলকাতা ডার্বিতে খেলার পর তার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই তলানিতে চলে গিয়েছিল। ২-০ গোলে পরাজিত হওয়ার পর তিনি দায়ী হন। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে তিনি রক্ষণে অনেকটাই বিচলিত ছিলেন এবং এই অভিজ্ঞতা তার খেলা থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়। এর পরপরই, তিনি বেশ কয়েকটি খেলার সময় ভুল করেছিলেন, যার ফলে দলের পরাজয় ছিল নিশ্চিত। এই সময়ে, তাঁর উপর চাপ বেড়ে যায় এবং সমালোচনাও তীব্র হয়েছিল।

অস্কার ব্রুজোর আগমনে পরিবর্তন

দল ছাড়তে পারেন এই তারকা ডিফেন্ডার, নজরে একাধিক ক্লাব

কিন্তু ঠিক তখনই ইস্ট বেঙ্গলের কোচ হিসেবে অস্কার ব্রুজোর আগমন একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। প্রাক্তন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের অধীনে আনোয়ার আলি ঠিকমতো নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পারেননি, তবে এই স্প্যানিশ কোচ ব্রুজোর অধীনে এক নতুন আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। অস্কার ব্রুজোনের আক্রমণাত্মক খেলাধুলা এবং রক্ষণাত্মক কৌশল আলীর খেলায় একটি নতুন প্রাণ সঞ্চারিত করে।

ব্রুজোর অধীনে আনোয়ার আলি তাঁর খেলার মধ্যে দৃঢ়তা আনেন এবং শুরুর দিকে আইএফএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ স্টেজে একটি নতুন রূপে আবির্ভূত হন। সেখানে, তিনি রক্ষণভাগের পাশাপাশি একটি অত্যন্ত কার্যকরী রাইট-ব্যাক হিসেবেও খেলেন। বিশেষ করে বসুন্ধরা কিংস এবং নেজমেহ এফসির বিরুদ্ধে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। এই ম্যাচগুলোতে, তিনি শুধু রক্ষণে কার্যকরী ছিলেন না, বরং আক্রমণের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সর্বোচ্চ স্তরে প্রত্যাবর্তন

এফসি চ্যালেঞ্জ লিগে সফলতা পাওয়ার পর, আনোয়ার আলি তাঁর আত্মবিশ্বাস ফিরে পান এবং তার খেলা আরও উন্নত হতে থাকে। আইএসএলের মাঠে তার খেলা তীব্রতার সাথে আরও ভালো হতে থাকে, যেখানে তিনি দলের রক্ষণের মূল স্তম্ভ হিসেবে অবতীর্ণ হন। তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে তার প্রতিরক্ষা দক্ষতা প্রমাণ করেন এবং দলের জন্য তিনটি ক্লিন শিট তৈরি করতে সহায়ক হন।

ইস্ট বেঙ্গলের খেলা বাড়ানোর সাথে সাথে, বাগানের এই প্রাক্তন ফুটবলার আরও বেশি আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। তাঁর পাসিং গেম, বলের দখল নেওয়া এবং ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলার ক্ষমতা ইস্ট বেঙ্গলের জন্য এক বড় প্লাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি ইনজুরি বা সাসপেনশনের কারণে যেসব খেলোয়াড় অনুপস্থিত ছিলেন, সেক্ষেত্রে আনোয়ার আলি এগিয়ে এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হন।

নতুন ভূমিকা: মিডফিল্ড এবং রক্ষণে সামঞ্জস্য

মনুর বক্তব্যে শুরু নতুন বিতর্ক, নিশানায় কে?

এই মরসুমে, তাঁকে মাঝে মাঝে ডিফেনসিভ মিডফিল্ডে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং তিনি এই নতুন ভূমিকায় অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। সাউল ক্রেসপোর অনুপস্থিতিতে, আনোয়ার মিডফিল্ডের জায়গায় দায়িত্ব গ্রহণ করে দলের আক্রমণাত্মক গতি বাড়াতে সহায়তা করেন। তার পাসিং, বল সামলানো এবং ডুয়েল জেতার ক্ষমতা তাকে শুধু একজন রক্ষক হিসেবে নয়, বরং পুরো দলের জন্য এক অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে।

এই মরসুমে ১১টি ম্যাচে অংশগ্রহণের পর, আনোয়ার আলি তাঁর অসাধারণ ফর্মের প্রমাণ রেখেছেন। তিনি প্রতি ম্যাচে গড়ে ৪টি পজেশন রিকভারি, ৪টি ক্লিয়ারেন্স এবং প্রায় ৩টি ডুয়েল জিতেছেন। তার পাসিং ক্ষমতা তার পরিসংখ্যানেও প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে তিনি গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩৯টি পাস প্রদান করেছেন। এই পরিসংখ্যানগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি শুধুমাত্র একজন সেরা রক্ষকই নন, বরং আক্রমণাত্মকভাবে খেলার সময়ও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

আবারও তিনি প্রমাণ করেছেন যে, প্রকৃত ফুটবলাররা কঠিন সময়ে গর্জন করে ওঠে এবং আনোয়ার আলি সেই উদাহরণ হয়ে থাকবেন যিনি শোচনীয় শুরুর পরও নিজের কীর্তি দিয়ে শেষ পর্যন্ত সাফল্য লাভ করেছেন।