ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC) কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon) যেন সব সময় আশাবাদী। কারণ কলকাতার এই প্রধানের সামনে এখন কঠিন সময়। একদিকে, গত কয়েক ম্যাচে (ISL) দলের পারফরম্যান্স তেমন ভালো না হওয়ায় সমর্থকদের হতাশা। অন্যদিকে, চোট-আঘাতের দুঃখজনক পরিস্থিতিতে কোচের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল একাদশ সাজানো। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও অস্কারের আত্মবিশ্বাসী মনোভাবটা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। তবে এই কঠিন সময়ে কীভাবে তিনি দলকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে পারবেন। যেখানে এদিন তাদের প্রতিপক্ষ মানোলো মার্কুয়েজের (Manolo Marquez) এফসি গোয়া (FC Goa)।
কার্যত লিগ টেবিলের তলানিতে থেকেও ইস্টবেঙ্গল এই মুহূর্তে আইএসএলের প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সমস্যা যে চোটের আঘাতে জর্জরিত, তা প্রমাণিত। দলের মধ্যে অসংখ্য খেলোয়াড় চোটের কারণে অনুপস্থিত। তাতে দলের একাদশ সাজানো হচ্ছে হিমশিম। কলকাতা ডার্বিতে রক্ষণভাগে পিভি বিষ্ণুকে রাখতে হয়েছিল, মাঝমাঠে খেলতে হয়েছিল হেক্টর ইউস্তে এবং লালচুঙনুঙ্গাদের। অথচ সেই দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বর্তমানে চোটে আছেন। মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো, হেক্টর ইউস্তে, ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ এবং আনোয়ার আলি—সবাইই ইনজুরিতে ভুগছেন। অধিনায়ক ক্লেটন সিলভাও পুরোপুরি ফিট নন। ডার্বি ম্যাচে সৌভিক চক্রবর্তী লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে, কোচ অস্কার ব্রুজো কীভাবে একাদশ সাজাবেন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
যদিও অস্কারের আত্মবিশ্বাস এখনও অটুট। তিনি বলেন, “আমাদের সামনে শুরু থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম ছয় ম্যাচে কোন পয়েন্ট পাইনি। এরপর সাতটা ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করেছি। গত দশটা ম্যাচে আমরা সেরা ছয়ে ছিলাম। তাই এখনো আশা ছাড়িনি।” এই আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি দলের ছেলেদের উৎসাহ দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, চোট, কার্ড এবং অন্যান্য সমস্যা তো থাকছেই। তাহলে কীভাবে এগোবেন অস্কার?
এফসি গোয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে, যে দলটি গত ১০ ম্যাচে একটিও হারেনি। যদিও গোয়া গত দু’টি ম্যাচে ড্র করেছে, তবুও তাদের বিরুদ্ধে জেতা যে খুব সহজ হবে না, তা জানেন সবাই। এর মধ্যে আবার ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ও মাঝমাঠে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস, ক্লেটন সিলভা, সউল ক্রেসপো—এদের প্রত্যেকের ফর্ম বা ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন আছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন স্ট্রাইকার রিচার্ড সেলিসের ওপরই এখন সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে, সেলিসের ওপর থেকে কোচ অস্কারের মন্তব্য খুবই সুরক্ষিত। তিনি বলেন, “নতুন স্ট্রাইকার রিচার্ড সেলিসকে এখনও আমি পুরোপুরি দেখতে পাইনি। কিন্তু অনুশীলনে সে ভাল ফর্মে ছিল। আমাদের গোলের খরা মেটাতে সে সাহায্য করতে পারে, তবে ভারতীয় ফুটবল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তার সময় লাগবে।”
দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের ক্ষেত্রেও সমস্যাগুলো একরকমই। কোচ অস্কার বলেন, “দিমি একজন ভাল স্ট্রাইকার, কিন্তু তাকে গোলের বল দিতে হবে। গত বছর যেখানে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিল, সেই জায়গায় ফিরে গেলে, হয়তো সে আবার তার ফর্মে ফিরবে।” তবে সাপ্লাইয়ের অভাব এবং ফর্মের সমস্যাই এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যেই কোচ অস্কার ব্রুজো কি তার দলের জন্য নতুন প্ল্যান সাজাচ্ছেন। তাতে সেলিস ও বিষ্ণুকে দুই উইংয়ে রেখে, দিয়ামান্তাকস ও ডেভিড লালনসাঙ্গাকে সামনে নিয়ে দল সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে, নন্দকুমার শেকর ও নিশুকুমার দুই সাইড ব্যাক হিসেবে খেলতে পারেন এবং সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহেরের সঙ্গে লালচুঙনুঙ্গা থাকতে পারেন। মাঝমাঠে নাওরেম মহেশ ও জিকসন সিংয়ের উপস্থিতি আশা করা যাচ্ছে।
এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে জয়ের জন্য অস্কার ব্রুজো দলের ছেলেদের উজ্জীবিত করতে চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, “ছেলেদের বলেছি, আইএসএলে আমরা কখনও পরপর তিনটে ম্যাচে জয়ী হয়নি, তেমন তিনটে ম্যাচে হারিওনি। এবার সেটা যেন না হয়। ডিসেম্বরে আমরা যেমন লড়াই করেছি, সেই লড়াই ফের ফিরিয়ে আনতে হবে।” সব কিছু মিলিয়ে, চোট-আঘাতের সমস্যার মধ্যেও ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো তার দলকে প্লে-অফের দৌড়ে ফেরানোর জন্য মরিয়া। তবে, এই চ্যালেঞ্জ সফল হবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।