শীর্ষে থেকেও শিল্ড হাতছাড়া হওয়ায় সম্ভাবনা বাগানের, সুপার সিক্সে পৌঁছাবে ইস্টবেঙ্গল

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal FC) জন্য গত কিছু দিন একেবারেই সুখকর নয়। দলের খারাপ সময় যেন কাটতেই চায় না। একের পর এক ম্যাচে হেরেই চলেছে…

East Bengal FC qualify to next round of AFC Challenge League

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal FC) জন্য গত কিছু দিন একেবারেই সুখকর নয়। দলের খারাপ সময় যেন কাটতেই চায় না। একের পর এক ম্যাচে হেরেই চলেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। গত রবিবার এফসি গোয়ার (FC Goa) কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে দলের জন্য সুপার সিক্সে (Super Six) ওঠার আশা কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। এই পরাজয় তাদের পয়েন্ট তালিকায় ১১ নম্বরে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে তারা ১৬ ম্যাচ খেলে মোট ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএলের (ISL) লিগ টেবিলের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট৩৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এফসি গোয়ার ৩০ পয়েন্টে দ্বিতীয় স্থান। ফলে একে অপরের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধানও বেশ কিছুটা কমেছে। ইস্টবেঙ্গলের জন্য এই হার আরেকটি বড় ধাক্কা, বিশেষত তাদের সেরা ছয়ে ওঠার আশা এখন কার্যত ধ্বংস হয়ে গেল।

   
খেলার একমাত্র গোল

এদিন ম্যাচের প্রথম গোলটি আসে ১৩ মিনিটে। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সের ভুলের কারণে ব্রাইসন গোল করেন। লালচুংনুঙ্গা এবং হিজাজির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, যা ইস্টবেঙ্গলের গোলের দিকে নিয়ে যায়। গোয়া ম্যাচে রক্ষণের দুর্বলতা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একবার গোলরক্ষক ঋত্বিকের কাছে সেলিস গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই শটটি ঠেকানো হয়েছিল। এরপরের কিছু সময় ছিল ইস্টবেঙ্গলের হতাশার।

রিচার্ড সেলিসের অভিষেক

ইস্টবেঙ্গলের নতুন ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস লাল-হলুদ জার্সিতে অভিষেক করেছেন এদিন। রাইট উইং দিয়ে তাঁর আক্রমণ ছিল যথেষ্ট ঝলমলে। প্রথমার্ধে সেলিস একাধিক সুযোগ পেয়েছিলেন গোল করার, তবে গোয়ার গোলরক্ষক এবং ডিফেন্স তাকে গোল করতে দেননি। সেলিসের সুরক্ষা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি ইস্টবেঙ্গলকে গোলের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেও কিছুটা সহায়তা ছিল না। ইনজুরি টাইমে সেলিস আহত হয়ে মাঠ ছাড়লে তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।

ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের দুর্বলতা

এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স আবারও একেবারে দুর্বল ছিল। ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল হজম করার পর গোয়া আরও সুযোগ তৈরি করেছিল। আক্রমণের খোলস থেকেও তারা কিছু সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক কিছুটা সহায়তা করেন। তবে ব্রাইসন ও আর্মান্দো সাদিকুদের নিয়ে গোয়ার আক্রমণ খুবই মারাত্মক ছিল। সাদিকু ৬ গজ বক্সের মধ্যে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু শটটি মিস হয়ে যায়।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Indian Super League (@indiansuperleague)

চোটের সমস্যা এবং কোচের মন্তব্য

ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজো চোট এবং আঘাতের সমস্যাকে দলের পরাজয়ের জন্য দায়ী করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চোটের কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ছাড়া দলকে সাজাতে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কোচ বলেন, ‘‘আমাদের একাধিক খেলোয়াড় চোটে পড়েছেন, যার ফলে মাঠে ভাল কম্বিনেশন তৈরি করা যাচ্ছে না।” তিনি একে অপরকে ভালোভাবে বোঝাপড়া করতে বলেছিলেন, কিন্তু সেই কাজটি যে ঠিকঠাক হয়নি, তা তিনি ম্যাচ শেষে পরিষ্কার করেছেন। ডিফেন্সে নতুন কম্বিনেশন তৈরি করেও ফল লাভ হয়নি।

এছাড়া অস্কার আরও বলেন, ‘‘আমাদের রক্ষণ আবারও বড় ভুল করেছে। গোল হজম করার পরে আমি আশা করেছিলাম, আমরা ঘুরে দাঁড়াব, কিন্তু সেটি হয়নি।” তিনি আরও জানান, তাদের পক্ষে শীর্ষ ছয়ে ওঠা এখন খুব কঠিন, বিশেষত যদি তারা পরবর্তী ম্যাচগুলোতে পয়েন্ট না সংগ্রহ করতে পারে।

পরবর্তী ম্যাচগুলো ডু অর ডাই

এই পরাজয়ের পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের সামনে কঠিন পরিস্থিতি। অস্কার ব্রুজো জানান, ‘‘আমাদের এখন আর ড্র করার কোনো জায়গা নেই। সব ম্যাচে জয় পেতে হবে। শুধু ড্র করলেও আর কোনো লাভ হবে না।” তিনি জানেন, দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় চোট থেকে সেরে উঠলে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে হয়তো তারা আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবে। তবে কোচ জানিয়েছেন, তিনি জানেন যে খেলোয়াড়দের চোটের সমস্যা সারা মরসুমের জন্য দলের জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেরা ছয়ে ওঠা এখন কঠিন

অস্কারের মতে, ‘‘সুপার সিক্সে ওঠার পথ এখন খুবই কঠিন হয়ে গেছে। তবে যদি আমরা আমাদের খেলা বজায় রাখতে পারি এবং চোটের কারণে যেসব সমস্যাগুলি রয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে পারি, তবে আমাদের জন্য সেরা ছয়ে জায়গা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।’’

এখন ইস্টবেঙ্গলকে যে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে, তা বোঝা যাচ্ছে। তাদের সামনে এখন একাধিক কঠিন ম্যাচ রয়েছে। তবে কোচের আত্মবিশ্বাস এবং দলটি যদি চোট-মুক্ত হয়ে তাদের সেরা ফুটবল খেলতে পারে, তাহলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে।

এখন ইস্টবেঙ্গলকে শুধু চোট সমস্যার সঙ্গেই নয়, নিজেদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে তারা আইএসএলে তাদের সেরাটা দিতে পারেনি। সমর্থকরা আশা করছিলেন, এবার অন্তত তারা প্লে অফে জায়গা করে নেবে, কিন্তু এখন সেই আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। তাদের সামনে এখন এক কঠিন পথ।