গোল থেকে গোললাইন, ইস্টবেঙ্গলের ‘ডবল মনো’ ম্যাজিক

লাল-হলুদ শিবিরে (East Bengal) এখন যেন দুই মেরুর মিলন। কলকাতা লিগে (CFL 2025) একদিকে গোলের ঝড় তুলে সমর্থকদের আনন্দে ভাসান মনোতোষ মাঝি (Monotosh Majhi)। অন্যদিকে…

East Bengal FC squqd for CFL 2025

লাল-হলুদ শিবিরে (East Bengal) এখন যেন দুই মেরুর মিলন। কলকাতা লিগে (CFL 2025) একদিকে গোলের ঝড় তুলে সমর্থকদের আনন্দে ভাসান মনোতোষ মাঝি (Monotosh Majhi)। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করে, গোললাইন আগলে দলের ভরসা হয়ে ওঠেন মনোতোষ চাকলাদার (Monotosh Chakladar)। দুই মনো একজন আক্রমণের, আরেকজন রক্ষণের অগ্রদূত। অথচ দু’জনের পথ এক জায়গাতেই এসে মিশেছে ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal)।

মনোতোষ মাঝির গল্প শুরু ভবানীপুর থেকে। পিয়ারলেস ও ভবানীপুর হয়ে অবশেষে এসেছেন ময়দানের মহীরুহ ইস্টবেঙ্গলে। প্রথম ম্যাচেই গোল, প্রতিপক্ষ মেসারার্সকে ৭-১ ব্যবধানে হারিয়ে দেন। লাল-হলুদ জার্সিতে অভিষেকেই গোল করে বুঝিয়ে দেন, এই স্ট্রাইকার সহজে থামবেন না। ৫৬ নম্বর জার্সির এই তরুণ ফুটবলারের ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল উত্তরপাড়ার নেতাজি ব্রিগেড ক্যাম্প থেকে। স্বপ্নের কলকাতা শহরে এসে পা রেখেছিলেন ২০১৭ সালে, দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর। গতবারের সন্তোষ ট্রফিতে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন ৬ গোল, ৫ অ্যাসিস্ট। ফুটবল যেন তাঁর শিরায় শিরায়।

   

আসলে মনোতোষ মাঝির ফুটবলের প্রতি এই ভালবাসা তাঁর রোজকার জীবনের লড়াইয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাবা বদলিযোগ্য চাকরিতে রাজস্থানে, মা গৃহবধূ। কলকাতায় একাই নিজের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ছেলের খেলা দেখতে ভয় পান মা, তিনি টিভির সামনে বসতে পারেন না। একবার সন্তোষ ট্রফিতে মাথায় চোট পেয়েছিলেন মনো। মা সেই যে বকুনি দিয়েছিলেন ‘‘তুই এত জোরে খেলিস কেন? আস্তে খেলতে পারিস না?’’ সেই স্নেহবাক্য আজও কানে বাজে মনোর।

অন্যদিকে, রক্ষণে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা মনোতোষ চাকলাদার। বন্ধুমহলে ‘মনো’ নামেই পরিচিত এই ডিফেন্ডার মূলত ব্যান্ডেলের ছেলে। ছোট্ট একটি ঘরে কেটেছে তাঁর শৈশব। মা গৃহবধূ, বাবা রাজমিস্ত্রি। আজ ইস্টবেঙ্গলের ৬৩ নম্বর জার্সির মালিক। তাঁর ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্যামনগরের তরুণ সংঘ থেকে। এরপর ইউনাইটেড স্পোর্টস, গোকুলাম, চেন্নাইয়িন, পিয়ারলেস, ডায়মন্ড হারবার ঘুরে এখন লাল-হলুদের অন্যতম স্তম্ভ।

Advertisements

মনো যে কেবল মাঠেই দায়িত্ববান, তা নয়। পয়লা বৈশাখে নিজের জীবনের প্রথম বাড়িও কিনেছেন। পাশে ছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের শীর্ষকর্তা নবাব ভট্টাচার্য, যিনি শুধু ক্লাব কর্তা নন, মনোর বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক। মা-বাবার জন্য আজ সুখের দিন এসেছে—ছেলে তাঁদের গর্বের কারণ।

এই দুই মনোতোষের পথ আলাদা, কিন্তু লক্ষ্যে এক। একজন গোল করে ম্যাচ জেতান, অন্যজন গোল বাঁচিয়ে দলের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখেন। ফুটবলের দুনিয়ায় এই দুই ‘মনো’ যেন yin আর yang একজন আক্রমণ, অন্যজন প্রতিরক্ষা। একজন ভবিষ্যতের স্ট্রাইকিং সেনসেশন, আরেকজন রক্ষণভাগের ভরসা।