ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) মহিলা ফুটবল দল সোমবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে হপস এফসি-কে ৬-১ গোলে পরাজিত করে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ (আইডব্লিউএল) ২০২৪-২৫-এর শিরোপার আরও কাছে পৌঁছে গেছে। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা লাল-হলুদ ব্রিগেড দ্বিতীয়ার্ধেও তাদের আধিপত্য বজায় রেখে মোট ছয়টি গোল করেছে। এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল ১১ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। অন্যদিকে, রেলিগেশনের মুখে থাকা হপস এফসি একই সংখ্যক ম্যাচে মাত্র ৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে।
ইস্টবেঙ্গলের এই ম্যাচে ছয়জন ভিন্ন খেলোয়াড় গোল করেছেন। ম্যাচের শুরুতেই সৌম্যা গুগুলোথ (৩ মিনিট), সন্ধ্যা রঙ্গনাথন (৭ মিনিট) এবং মৌরিন আচিয়েং (১১ মিনিট) প্রথমার্ধে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধে কর্থিকা আঙ্গামুথু (৫৪ মিনিট), রেস্টি নানজিরি (৯০+২ মিনিট) এবং এলশাদ্দাই আচেমপং (৯০+৩ মিনিট) গোল করে জয় নিশ্চিত করেন। হপস এফসি-র হয়ে একমাত্র গোলটি করেন তাদের অধিনায়ক গ্ল্যাডিস আমফোবিয়া (৫৮ মিনিট), পেনাল্টি থেকে।
ম্যাচের হাইলাইটস
ম্যাচ শুরু হওয়ার মাত্র তিন মিনিটের মাথায় সৌম্যা গুগুলোথ দারুণভাবে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে এই উইঙ্গার ডান পায়ের শটে বলটিকে নিচু দিয়ে গোলপোস্টের বাম কোণে পাঠান। এর চার মিনিট পরই, ৭ মিনিটে, সন্ধ্যা রঙ্গনাথন বাঁ দিক থেকে একটি কার্লিং ক্রস ছাড়েন। কিন্তু কোনো সতীর্থের কাছে না পৌঁছে বলটি সরাসরি গোলপোস্টে ঢুকে যায়, গোলকিপারকে হতবাক করে।
১১ মিনিটে মৌরিন আচিয়েং বক্সের বাইরে থেকে একটি দূরপাল্লার শট ছাড়েন। তার ডান পায়ের শক্তিশালী শট গোলপোস্টের উপরের ডান কোণে আঘাত করে, গোলকিপারের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধেও তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে কর্থিকা আঙ্গামুথু একটি ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোল করেন। বক্সের বাইরে থেকে তার ডান পায়ের শট গোলপোস্টের উপরের কোণে আঘাত করে, দর্শকদের মুগ্ধ করে। হপস এফসি ৫৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গ্ল্যাডিস আমফোবিয়ার গোলে কিছুটা স্বস্তি পায়। তবে, ইনজুরি টাইমে রেস্টি নানজিরি এবং এলশাদ্দাই আচেমপং একটি করে গোল করে হপসের পরাজয়কে আরও ভারী করে তোলেন।
পয়েন্ট টেবিলে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থান
এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল ১১ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে আইডব্লিউএল ২০২৪-২৫-এর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। তাদের এখন শিরোপা জিততে মাত্র দুটি জয় প্রয়োজন। অন্যদিকে, হপস এফসি ১১ ম্যাচে মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে রেলিগেশনের মুখে দাঁড়িয়ে। ইস্টবেঙ্গলের এই জয় তাদের জন্য একটি মাইলফলক, কারণ তারা এখনও পর্যন্ত টানা জয়ের ধারা বজায় রেখেছে।
কলকাতার গর্ব
ইস্টবেঙ্গলের এই জয় কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। মহিলা ফুটবলে দলটির এই দাপট তাদের সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ বাড়িয়েছে। কল্যাণী স্টেডিয়ামে দর্শকরা এই গোল উৎসব উপভোগ করেন এবং দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। সৌম্যা, সন্ধ্যা, মৌরিন, কর্থিকা, রেস্টি এবং এলশাদ্দাইয়ের এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করে যে ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল শিরোপার জন্য শক্তিশালী দাবিদার।
কোচ ও খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলের কোচ জানিয়েছেন, “আমাদের খেলোয়াড়রা প্রথম থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রত্যেকে তাদের সেরাটা দিয়েছে, এবং আমরা শিরোপার জন্য আরও দুটি জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।” গোলদাতা সৌম্যা গুগুলোথ বলেন, “আমরা দল হিসেবে একসঙ্গে খেলেছি এবং এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।”
হপস এফসি-র সংগ্রাম
হপস এফসি-র জন্য এই মরসুম কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১১ ম্যাচে মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা লিগে টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। অধিনায়ক গ্ল্যাডিস আমফোবিয়ার পেনাল্টি গোল তাদের কিছুটা সান্ত্বনা দিলেও, ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের কাছে তারা পুরোপুরি অসহায় ছিল।
আইডব্লিউএল-এ ইস্টবেঙ্গলের সম্ভাবনা
ইস্টবেঙ্গলের এই জয় তাদের শিরোপা জয়ের পথে আরও এগিয়ে দিয়েছে। ১১ ম্যাচে ১০টি জয় এবং মাত্র ১টি হারের সঙ্গে তারা এখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য। আগামী ম্যাচগুলোতে তারা যদি এই ফর্ম বজায় রাখতে পারে, তাহলে আইডব্লিউএল ২০২৪-২৫-এর শিরোপা কলকাতায় আসতে পারে।
ভারতীয় মহিলা ফুটবলের উত্থান
ইস্টবেঙ্গলের এই পারফরম্যান্স ভারতীয় মহিলা ফুটবলের ক্রমবর্ধমান মানের প্রতিফলন। আইডব্লিউএল-এর মতো প্রতিযোগিতা নতুন প্রতিভা তুলে আনছে এবং দেশের মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। ইস্টবেঙ্গলের এই জয় ভারতীয় ফুটবলে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে আরও জোরালো করেছে।
সমর্থকদের উচ্ছ্বাস
ম্যাচ শেষে কল্যাণী স্টেডিয়ামে সমর্থকরা “ইস্টবেঙ্গল, ইস্টবেঙ্গল” স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা দলের প্রশংসা করে লিখেছেন, “আমাদের মেয়েরা শিরোপার জন্য প্রস CONDITION তুত। লাল-হলুদের জয় অব্যাহত থাকুক!” অনেকে এই জয়কে কলকাতার ফুটবল ঐতিহ্যের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন।
ইস্টবেঙ্গলের এই ৬-১ গোলের জয় শুধু একটি ম্যাচের ফলাফল নয়, বরং তাদের শিরোপা জয়ের দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রমাণ। হপস এফসি-র বিরুদ্ধে এই দাপট তাদের প্রতিপক্ষদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আগামী দিনে লাল-হলুদ ব্রিগেড যদি এই ধারা বজায় রাখে, তাহলে আইডব্লিউএল ২০২৪-২৫-এর শিরোপা কলকাতার ঘরে আসা কেবল সময়ের অপেক্ষা।