সুপার কাপ প্রস্তুতির আগে পয়লা বৈশাখে বারপুজোয় মাতল ইস্টবেঙ্গল

যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্য আর রীতি আজও অটুট রয়েছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ক্লাবে। বাঙালির নববর্ষ, পয়লা বৈশাখে, বাংলা সন ১৪৩২-এর শুভ সূচনায় ইস্টবেঙ্গল…

East Bengal Club Celebrates Poila Baisakh with Traditional Bar Puja

যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্য আর রীতি আজও অটুট রয়েছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ক্লাবে। বাঙালির নববর্ষ, পয়লা বৈশাখে, বাংলা সন ১৪৩২-এর শুভ সূচনায় ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ক্লাবের ঐতিহ্যবাহী বারপুজো। শাস্ত্রীয় প্রথা মেনে ক্লাবের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের শুরু হয়। এই বিশেষ দিনে ক্লাবের পরবর্তী মরশুমের জন্য অধিনায়ক হিসেবে নাওরেম মহেশ এবং সহ-অধিনায়ক হিসেবে লালচুংনুঙ্গার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা কোচ অস্কার ব্রুজোঁর সঙ্গে দলের মঙ্গল কামনায় পুজোর আচারে অংশ নেন।

পুজোর আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের রিজার্ভ টিমের কোচ বিনো জর্জ, মহিলা টিমের কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রিউজ এবং অধিনায়িকা সুইটি দেবী। মূল পুজোর দায়িত্ব পালন করেন ফুটবল সচিব সৈকত গাঙ্গুলি। এরপর অস্কার ব্রুজোঁর তত্ত্বাবধানে গিল, মহেশ, আনোয়ার, ক্লেটন সিলভা, দিয়ামান্টাকোসের মতো তারকা ফুটবলাররা সুপার কাপের প্রস্তুতির জন্য মাঠে ঘাম ঝরান। এই উৎসবমুখর দিনে ক্লাবের মহিলা ফুটবল দলের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন, যারা সম্প্রতি আইডব্লিউএল-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ইস্টবেঙ্গলের এই বারপুজো শুধু বর্তমান খেলোয়াড়দের নিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। ক্লাবের গৌরবময় অতীতের তারকারা এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে এটিকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মিহির বোস, ভাস্কর গাঙ্গুলি, বিকাশ পাঁজি, প্রশান্ত ব্যানার্জি, অলোক মুখার্জি, স্বরূপ দাস, অমিত ভদ্র, অমিতাভ চন্দ্র, আলভিটো ডি কুনহা, ফাল্গুনী দত্ত, অর্ণব মন্ডল, প্রশান্ত চক্রবর্তী, দীপঙ্কর রায়, মেহতাব হোসেন, সুলে মুসা, সম্বরণ ব্যানার্জি এবং কোচ আবদুল মুনায়েমের মতো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের উপস্থিতি ক্লাবের ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

এই বিশেষ দিনে ক্লাব সভাপতি মুরারী লাল লোহিয়া, সাধারণ সচিব রূপক সাহা এবং কার্যকরী সমিতির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ক্লাবের ফুটবল স্কুল, ক্রিকেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা, অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ এবং রিজার্ভ টিমের খেলোয়াড়রা এই উৎসবে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও ক্লাবের ক্রিকেট দল, অ্যাথলেটিক্স দলের খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষকরা উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছেন।

লাল-হলুদের এই উৎসবমুখর দিনে আরও হাজির ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি, অভিষেক ডালমিয়া এবং বিশ্বরূপ দে। এমন একটি বিশেষ মুহূর্তে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আগত সকলের জন্য মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা ছিল, যা এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Advertisements

ইস্টবেঙ্গল মাঠে এদিন দর্শকদের প্রচুর ভিড় ছিল। লাল-হলুদ সমর্থকদের উৎসাহ আর উদ্দীপনায় মাঠে ছিল বাড়তি প্রাণের স্পন্দন। বারপুজোর এই আয়োজন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ক্লাবের সদস্য, সমর্থক এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়দের মিলনমেলা। এই দিনটি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গৌরবময় ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার একটি প্রতীক হয়ে থাকে।

পয়লা বৈশাখে এই উৎসবের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ক্লাবের নতুন অধিনায়ক, কোচ এবং খেলোয়াড়রা যখন পুজোর আচারে অংশ নিচ্ছেন, তখন এটি একটি নতুন মরশুমের জন্য তাদের প্রস্তুতিরও একটি অংশ। সুপার কাপের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ক্লাবের সংহতি এবং উদ্দীপনাকে আরও শক্তিশালী করে।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই বারপুজো শুধু একটি ক্রীড়া সংগঠনের অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সম্প্রদায়ের একটি উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও এই আয়োজন ক্লাবের সমর্থকদের মনে নতুন আশা এবং উৎসাহ জাগিয়েছে।