কলকাতার মাটিতে আবারও বল গড়াল দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ফুটবল টুর্নামেন্ট (Indian Football Tournamnet) ডুরান্ড কাপের (Durand Cup)। ১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ সামরিক কর্তাদের অবসরের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করা টুর্নামেন্ট। বর্তমানে আর শুধুমাত্র গৌরবের প্রতীক নয়, বরং ভারতীয় ফুটবল ক্যালেন্ডারের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাক-মরসুম প্রস্তুতির মঞ্চ হয়ে উঠেছে।
ডুরান্ড কাপের নামকরণ ব্রিটিশ কূটনীতিক স্যার মর্টিমার ডুরান্ডের নাম অনুসারে। আফগানিস্তান ও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমারেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ১৮৮৮ সালে শিমলার আনন্দডেল ময়দানে প্রথম ডুরান্ড কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ছয়টি ব্রিটিশ ও দুটি স্কটিশ রেজিমেন্টাল দল অংশ নিয়েছিল। সেই সময় ম্যাচগুলিতে সামরিক গম্ভীরতা এবং আড়ম্বর থাকত। সেনা ব্যান্ডের বাদ্যযন্ত্র, রেজিমেন্টাল পতাকার সমাবেশ এবং ভাইসরয়ের হাত থেকে পুরস্কার বিতরণ। যেন এক অদ্ভুত রাজকীয়তা ফুটবল ম্যাচগুলিকে ঘিরে রাখত।
১৯২২ সালে কলকাতার মোহনবাগান প্রথম ভারতীয় বেসামরিক দল হিসেবে ডুরান্ডে অংশ নেয়। যদিও তারা এবং অন্যান্য ভারতীয় দল শুরুতে ব্রিটিশ রেজিমেন্টের সঙ্গে পাল্লা দিতে ব্যর্থ হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৯৩৭ সালে আয়োজকেরা চালু করেন ‘ছোট ডুরান্ড’, যেখানে প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেওয়া দলগুলি অংশ নিত।
১৯৪০ সালে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হওয়া টুর্নামেন্টে প্রথমবার ব্রিটিশ আধিপত্য ভাঙে মহামেডান স্পোর্টিং, যারা রয়্যাল ওয়ারউইকশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করে। তখনকার ইরউইন অ্যাম্ফিথিয়েটারে এক লাখ দর্শক ছিলেন সেই ঐতিহাসিক ফাইনালের সাক্ষী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও দেশভাগের কারণে কিছু বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৫০ সালে ফের শুরু হয় ডুরান্ড কাপ। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এই টুর্নামেন্টকে রাষ্ট্রপতির পৃষ্ঠপোষকতায় আনেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতিরা ডুরান্ড ফাইনালে উপস্থিত থাকতেন।
এই সময়ে সেনা রেজিমেন্টের পাশাপাশি বেসামরিক দলগুলো বিশেষত মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল দাপট দেখাতে শুরু করে। মোহনবাগান (১৭ বার) ও ইস্টবেঙ্গল (১৬ বার) এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল। এছাড়া বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (৭ বার), পাঞ্জাবের জেসিটি (৫ বার) এবং হায়দরাবাদের সিটি পুলিশ দল (৪ বার) ডুরান্ডে নিজেদের ছাপ রেখে গিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে ডুরান্ড কাপ মূলত কলকাতাতেই আয়োজিত হচ্ছে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়াও বেঙ্গালুরু এফসি, এফসি গোয়া, মুম্বই সিটি এফসি প্রভৃতি দলগুলিও এখন অংশ নেয়। তবে এই প্রতিযোগিতা এখন আর শুধুই গৌরবের নয় বরং দলগুলির জন্য এটি একটি “প্রি-সিজন ট্রায়াল”, কৌশল নিরীক্ষণ এবং খেলোয়াড়দের যাচাইয়ের সুযোগ বলাই চলে।
Durand Cup How the oldest Indian Football Tournamnet outside British Isles has evolved over time